You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.29 | বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রচেষ্টায় ইয়াহিয়া- শেখ মুজিবর রহমানকে বিষ প্রয়ােগে হত্যার চেষ্টা - সংগ্রামের নোটবুক
বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রচেষ্টায় ইয়াহিয়া
২৫শে আগস্ট, ঢাকা থেকে আমাদের সংবাদাতা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মাটিতে দীর্ঘ পাঁচমাস নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানাের পর, চেঙ্গিস ও হিটলারের উত্তরসূরী নরখাদক ইয়াহিয়া সরকার স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে বিপ্লবী বাংলার বুকে আর টিকে থাকা সম্ভব নয়, তার বর্বর সৈন্য বাহিনীর পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। মুজিব অনুগামীদের দমন করবার জন্যে ২৫শে মার্চ থেকে লাখাে লাখাে বাঙ্গালীর রক্তে যে দেশকে ভাসিয়ে দিয়েছে সেই দেশে নতুন করে জন্ম হয়েছে অসংখ্য মুজিবের । বাংলাদেশের মানুষ মাত্রেই যেন মুজিব। তাই তার সাধের সৈন্য বাহিনী অর্থাৎ পােষা কুকুরের দল প্রতিদিন মুজিব অনুসারীদের হাতে প্রাণ দিচ্ছে কীট পতঙ্গের মত । অন্যদিকে এই বীর মুজিব বাহিনীকে দমন করবার জন্যে সুদূর চীন-আমেরিকা ও জর্ডান থেকে। অস্ত্র ও গেরিলা যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের ডেকে আনতে হয়েছে, এই বীর যােদ্ধাদের মােকাবেলা করে পাকিস্তানের অস্তিত্বকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রাখবার জন্যে। সেই সমস্ত বিদেশী অস্ত্র এবং গােলাবারুদ দিয়েই বীর বিপ্লবী বাঙ্গালীরা দিন দিন পাক হানাদার দস্যুদের খতম করে চলেছেন। বিদেশী বিশেষজ্ঞরাও এই বাংলার মাটিতে এসে হিমসিম খেয়ে গেছেন। বাঙ্গালীদের হাতে শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়া সরকারের লেলিয়ে দেওয়া নৌবাহিনী টিকে থাকতে পারছে না। এমন কি বিমান বাহিনীও মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে মার খেতে শুরু করেছে।
তাই ইয়াহিয়া বুঝতে পেরেছে বাংলা ছাড়া পৃথিবীর বুকে পাকিস্তানের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। ওদিকে আবার সিন্ধু, বেলুচিস্থানের সামরিক ও বেসামরিক জনতা তাদের স্বাধীনতার জন্য পুঞ্জীভূত ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এর দরুণ সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা, তার সাথে প্রাদেশিক গভর্ণররা একজোটে বর্তমান অবস্থার জন্য ইয়াহিয়াকে দায়ী করে চলেছেন। আবার বিদেশে নিযুক্ত জঙ্গীশাহীর প্রতিনিধিরা দিনের পর দিন জঙ্গী সরকারের কাজে ইস্তফা দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে চলেছেন। অতএব জঙ্গী সরকার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ইরাণ। সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি ইরাণ সরকারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা মেনে নিয়ে প্রয়ােজনে আরাে অতিরিক্ত সুযােগ দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে পাকিস্তানের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখবার প্রস্তাব দিয়েছেন। এবং বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হস্তে অখণ্ড পাকিস্তানের ক্ষমতা তুলে দিতে আগ্রহশীল। আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানতে পেরেছেন ইরাণের রাষ্ট্রদূত উপরােক্ত প্রস্তাব নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেন। বঙ্গবন্ধু নির্ভীক কণ্ঠে বলেছেন, অবলুপ্ত পাকিস্থানের অস্তিত্ব নিয়ে নরখাদক ইয়াহিয়া সরকারের সঙ্গে কোন আপােষ নেই। স্বাধীন বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। ক্ষমতার প্রলােভন দিয়ে তাঁকে বাংলার বিপ্লবী মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করানাে যাবে না।
বিপ্লবী বাংলাদেশ এ ১ : ৩ ২৯ আগস্ট ১৯৭১
শেখ মুজিবর রহমানকে বিষ প্রয়ােগে হত্যার চেষ্টা
মুজিবনগর ১৮ই আগষ্ট : এখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বাঙ্গালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি ন্যায় বিচারের পক্ষপাতী এমন একজন পশ্চিম পাকিস্তানী সেনানীর কাছ থেকে জানা যায়লায়ালপুরের ভায়াবহ কারাগারের মধ্যে শেখ মুজিবর রহমানকে বিষ প্রয়ােগে হত্যা চেষ্টা করা হয় । ঘােষণায় প্রকাশ, শেখ মুজিবরকে দেশদ্রোহী হিসাবে জঙ্গী শাসকের গােপন আদালত কক্ষে হাজির হবার জন্যে একখানি লিখিত সমন হাজির করে তাতে সহি করতে বলা হয় কিন্তু মুজিব তাতে অস্বীকৃত হন। দ্বিতীয় আর একখানি কাগজে তাকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে নাম সহি করে দিতে বলা হয় কিন্তু শেখ সাহেব দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়ে ইয়াহিয়াখানের প্রেরিত সৈনিকের দিকে কাগজখানি ছুড়ে দেন। এর পরেই জেলখানার মধ্যে এক কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়। ডাক্তারদের আসা যাওয়া বেড়ে যায়, একঘণ্টার মধ্যে তিনবার ডাক্তার এসে বাংলাদেশের নেতাকে জিজ্ঞাসা করেছে—আপনি কেমন বােধ করছেন? মুজিব হেসে জবাব দিয়েছেন ভালাে। এরপরেই ঘটনার কথা ফাঁস হয়ে পড়ে এবং কারাগারে মুজিবের বিশেষ রক্ষী হিসেবে কর্ণেল জুম্মান আৰাদির ডাক পড়ে এবং তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় কারণ মুজিবের খাবার এবং পানীয় জলের খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দেবার দায়িত্ব ছিল তার। কিন্তু এই মহান সৈনিক বাংলাদেশের এই মহান নেতাকে কাপুরুষের মতাে হত্যা করে সৈনিকের অমর্যাদা করতে চান নি। কিন্তু নরাধম ইয়াহিয়া কর্ণেল জুম্মানকে বেশিক্ষণ বাঁচতে দেয়নি।
বিপ্লবী বাংলাদেশ » ১ ও ২৯ আগস্ট ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩