জল্লাদ ইয়াহিয়াকে ঠেকাও
বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কর্ণেল এম, এ, জি, ওসমানি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মুক্তি পিয়াসী জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিচারের নামে যে প্রহসন চালানাে হচ্ছে তা বন্ধ করার ব্যাপারে জল্লাদ ইয়াহিয়া সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মুক্তি বাহিনীর জনসংযােগ শাখা মুজিবনগর থেকে প্রচারিত এই আবেদনে সর্বাধিনায়ক ওসমানি বলেছেনঃ আমাদের জাতীয় নেতাকে হত্যা করা বন্ধ করুন। মানবীয় মূল্যবােধের অবলুপ্তি হইতে । দেবেন না।
জয়বাংলা (১) # ১: ১৫
২০ আগস্ট ১৯৭১
বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে প্রধান মন্ত্রীর আবেদন
মুজিবের প্রাণ রক্ষা করুন। শেখ মুজিবের প্রাণরক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, শেখ মুজিবের বিচার করার মত আইনগত, সংবিধানগত অথবা অন্য কোন অধিকার পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নেই ক্ষমতামত্ত পাঞ্জাবী পুঁজিপতি ও সামরিক চক্রের এটা একটা গণহত্যারূপী চক্রান্ত। জনাব আহমদ বলেন যে, বাংলাদেশের কল্যাণের স্বার্থে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তির জন্য শেখ মুজিবের উপস্থিতি প্রয়ােজন। শেখ মুজিবের জীবন নিয়ে কিছু করা হলে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দারুণ সংকট দেখা দেবে। বলে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন। পাকিস্তানকে মার্কিন সাহায্য দান সম্পর্কে এক প্রশ্নোত্তরে জনাব আহমদ বলেন যে, ‘বিশ্বের কোন বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন গণতান্ত্রিক দেশ ইয়াহিয়ার গণহত্যার যুদ্ধকে সাহায্য করতে পারে না। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় অংশ ও বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের দাবীকে সমর্থন করেছেন এবং ইয়াহিয়ার নিন্দা করেছেন। তিনি আশা করেন, মার্কিন সরকার শীঘ্রই তাদের ভুল বুঝতে পারবেন এবং বাংলাদেশের সংগ্রামকে সমর্থন জানাবেন।
জয়বাংলা (১) [১: ১৫ ॥
২০ আগস্ট ১৯৭১
ঢাকায় কালাে দিবস
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়েছে যে, অধুনালুপ্ত পাকিস্তানের জঙ্গী সরকার তথাকথিত স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের যে আয়ােজন করেছিল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ও প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশের বীর মুক্তি যােদ্ধারা তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। জঙ্গীশাহীর ‘স্বাধীনতা। দিবসের প্রস্তুতি পর্বের সূচনায় বুধবার রাত থেকেই গেরিলা আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ঐ রাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হােটেলে বােমা বিস্ফোরনে ফলে ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দালাল শান্তি বাহিনীর উদ্যোগে ঢাকার কুখ্যাত ও দাগী গুণ্ডাদের নিয়ে গঠিত মুষ্টিমেয় লােকের। একটি মিছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে ধ্বনী দিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করার সময় যে সামান্য গুটিকতক দোকান পাট খােলা ছিল তাও বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় অবরুদ্ধ বাঙালীরা জঙ্গী দিবসে’ অংশ গ্রহণ না করে নীরব প্রতিবাদের ভেতর দিয়ে এই দিবসকে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতি বছর পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া এই দিবসের কর্মসূচীর একটি উল্লেখযােগ্য অনুষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু মুক্তিযােদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে ব্ৰিত পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক কর্তারা এবারে ঢাকাবাসীকে তাদের শক্তির মহড়া দেখাতে সাহস করেনি।
জয় বাংলা (১) ! ১: ১৫ ॥
২০ আগস্ট ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩