You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.14 | মুজিবের বিচারের প্রতিবাদে বিশ্ব জনমত - সংগ্রামের নোটবুক
মুজিবের বিচারের প্রতিবাদে বিশ্ব জনমত
ওয়াশিংটন : ১০ই আগষ্ট মার্কিণ সেনেটর এগার জন সদস্য বাংলাদেশ নেতা শেখ মুজিবর রহমানের প্রাণ রক্ষা করা হবে এটাই তারা আশা করেন—এই কথা পাক সরকারকে জানানাের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে দাবী জানান। জেনেভা : জেনেভা থেকে পাওয়া এপির খবরে প্রকাশ, শেখ মুজিবর রহমানের প্রস্তাবিত বিচারের বিরুদ্ধে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁর কাছে আন্তর্জাতিক জুরিষ্ট কমিশন প্রতিবাদ জানিয়েছেন।  নিউইয়র্ক : উথান্ট উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্র সংঘের একজন মুখপাত্র বলেন যে, লেঃ জেঃ মনে করেন, শেখ মুজিবের ভাগ্যের কোন অবাঞ্ছিত পরিণতি ঘটলে তার গুরুতর প্রতিক্রিয়া পাক সীমান্তের বাইরেও অনিবার্য হবে। ওয়াশিংটন : সিনেটর হ্যারিস মার্কিণ সরকারের কাছে শেখ মুজিবের প্রাণ রক্ষার দাবী জানান। পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ফুব্রাইটও অনুরূপ দাবী জানান।  সিনেটর হ্যারিস বলেন, রাশিয়া, চীন এবং ভারত পাকিস্তান যুদ্ধশঙ্কা রয়েছে। পৃথিবীর চারটী বৃহৎ রাষ্ট্র যুদ্ধে লিপ্ত হলে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দূরে সরে থাকা সম্ভব হবে না। তাঁর মতে মার্কিণ সরকারের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভ্রান্ত নীতিরই পরিণতি আজকের এই যুদ্ধাশংকা।
সোনার বাংলা (বাংলার কথা) ॥ ১:১ 
১৪ আগস্ট ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুর বিচারে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হবে
লণ্ডন, ১১ই আগষ্ট-বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী একটি বিবৃতি প্রচার করে বলেছেন, বাংলাদেশের সর্বজন মান্য নেতা শেখ মুজিবর রহমানের বিচারের যে সিদ্ধান্ত পাক জঙ্গীশাহী নিয়েছেন তার নিন্দার ভাষা সভ্য দুনিয়ার জানা নেই। | মুজিবর হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। বিদেশের কোনও সামরিক আদালতে তার বিচারের। কোনও প্রশ্নই ওঠে না, এই বিচার বে-আইনী, এর ফলে বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত হবে।
সােভিয়েট সরকারের দাবী
শেখ মুজিবের প্রাণদণ্ড দিয়ে পূর্ব বাংলার ভয়াবহ পরিস্থিতি আরও জটিল করে না তােলার জন্য সােভিয়েট সরকার পাক জঙ্গীশাহীর কাছে দাবী জানিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ (১) ১ ১১ ১৬ আগস্ট
কারান্তরালে সিংহনাদআমাকে বিচার করার যােগ্যতা সামরিক আদালতের নেই-বঙ্গবন্ধু
মুজিবনগর, ৯ই আগষ্ট  একটি বিদেশী সংবাদপত্র প্রতিনিধির খবরে প্রকাশ যে বাংলার সিংহ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অকুতােভয়ে ইয়াহিয়ার সামরিক আদালতের বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। খবরে প্রকাশ, ইয়াহিয়া তথাকথিত বিচার প্রহসনে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের জন্য। একজন সরকারী উকিল নিয়ােগের প্রস্তাব করলে শেখ সাহেব তা সরাসরি প্রত্যাখান করেন। তিনি বলেন যে তাঁকে বিচারের যােগ্যতা সামরিক আদলতের নেই। এবং এই কারণেই কোন কৌসুলী। নিয়ােগের প্রস্তাব অবান্তর ও অর্থহীন। বঙ্গবন্ধু কৌসুলী নিয়ােগ করতে অসম্মত হয়েছেন শুধুমাত্র এই টুকুই পাকিস্তান বেতার থেকে প্রচারিত হয়।
বাংলাদেশ (১) ॥ ১: ১১ ॥ ১৬ আগস্ট ১৯৭১
মুজিবের প্রাণ রক্ষা করুন বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে তাজউদ্দীনের আবেদন
বাংলাদেশের কোন এক স্থান, ১২ই আগষ্ট : শেখ মুজিবের প্রাণরক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রী মিঃ তাজুদ্দিন আহামদ আজ বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মিঃ আহামদ বলেন যে, শেখ মুজিবরের বিচার করার মত আইনগত, সংবিধানগত অথবা অন্য কোন অধিকার পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নেই। ক্ষমতামত্ত পাঞ্জাবী পুঁজিপতি ও সামরিক চক্রের এটা একটা গণহত্যারূপী চক্রান্ত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মিঃ আহামদ বলেন যে, শুধু বাংলাদেশের কল্যাণের স্বার্থে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তির জন্যও শেখ মুজিবের উপস্থিতি প্রয়ােজন। শেখ মুজিবের জীবন নিয়ে যদি কিছু করা হয় তবে সমগ্র দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব এশিয়ায় দারুণ সংকট দেখা দেবে বলে মিঃ তাজউদ্দীন সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ (১) ১:১১ ১৬ আগস্ট ১৯৭১।
মুজিবের প্রাণরক্ষায় উ’থান্টের তৎপরতা
রাষ্ট্রসংঘ, ১৩ই আগষ্ট : রাষ্ট্রসংঘের জনৈক মুখপাত্র গতকাল জানান যে, সেক্রেটারী জেনারেল উথান্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিচার সম্বন্ধে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে গােপনে কুটনৈতিক আলাপ আলােচনা চালাচ্ছেন। উক্ত মুখপাত্র বলেন, এই ব্যাপারে সেক্রেটারী জেনারেল যা করছেন, তা চলছে গােপনে ও একান্ত ব্যক্তিগত স্তরে।
বাংলাদেশ (১) ১:১১ ১৬ আগস্ট ১৯৭১
প্রেঃ ইয়াহিয়ার কাছে শেখ আবদুল্লার তার
শেখ মুজিবর রহমানের বিচার প্রত্যাহার করে তার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলােচনা করার জন্য শেখ আবদুল্লা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে এক তারবার্তা প্রেরণ করেছেন।
সকলের পক্ষে সম্মানজনক এক রাজনৈতিক মীমাংসায় উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে ঐ আলােচনা। শুরু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শেখ আদুল্লার ঘনিষ্ট মহল সূত্রে প্রকাশ শেখ মুজিবরের বিচারের ব্যাপারে পাকিস্তান সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে শেখ আবদুল্লা মনে করেন।
বাংলাদেশ (১) ! ১:১১ ১৬ আগসট ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩