মার্চ ১০, ১৯৭৪ রবিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক বাংলা
লােকের হাতে অস্ত্র থাকলে শান্তি আসবে না ঃ বগুড়া, ৮ মার্চ, বাসস। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আজ দেশে উপযুক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির আহ্বান জানান। যাতে করে জনগণ সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যে কাজ করতে পারেন। তিনি বলেন যে, জনগণ যাতে পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে কাজ করতে পারেন সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থমন্ত্রীর সম্মানে আয়ােজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় আজ সকালে তিনি বলেন যে, দেশের সামাজিক অগ্রগতি রােধ এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে দেশের ভিতরে এবং বাইরে একটি চক্রান্ত চলছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সমাজ বিরােধী ব্যক্তি এবং দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার করার জন্য আইন প্রয়ােগকারী সংস্থাগুলাের সদস্যদের সাহায্য করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কিছু অননুমােদিত লােকের হাতে অস্ত্র থাকায় বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দেশে শান্তি আনতে হলে একমাত্র আইন প্রয়ােগকারী। সংস্থাগুলাের সদস্য ছাড়া বাকি সকলকে নিরস্ত্র করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। একমাত্র অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেগুলাে সমাধান করা যেতে পারে, কিন্তু একসাথে সবগুলাের কাজ শুরু করার মত আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ নেই। মন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নতির জন্যে আমাদের নিজস্ব সম্পদের উপর নির্ভর করতে হবে। দেশের সমস্যাবলীর সমাধানের জন্যে অন্যের উপর নির্ভর করার মানসিকতা পরিবর্তন করতে তিনি জনগণকে উপদেশ দেন।
ভােগ্যপণ্যের উচ্চমূল্য সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী এবং ব্রীফকেস ব্যবসায়ীর অশুভ তৎপরতাই হচ্ছে এর কারণ এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্যে তাদের অবশ্যই নির্মূল করতে হবে। কিন্তু সর্তক করে দিয়ে বলেন, পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য কখনও ন্যায়সঙ্গত পর্যায়ে আসবে না। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের প্রতি তাজউদ্দিন ; জনগণের আস্থা অর্জন করুনঃ কালীগঞ্জ, ঢাকা, ৯ মার্চ, বাসস। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ স্থানীয় সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিদের প্রতি ন্যায় ও সত্যের পথে থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান এবং কাজের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অজর্নের পরামর্শ দেন। মন্ত্রী আজ বিকেলে কালীগঞ্জ থানার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন যে, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব মহৎ ও সম্মানজনক। যে কোন মূল্যে সত্য ও ন্যায়ের আদর্শকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে একে প্রয়ােগ করতে হবে। তিনি বলেন যে, স্থানীয় সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিরা অধিকাংশ সময় তাদের এলাকায় অবস্থান করেন বলে তারা স্থানীয় সমস্যার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত। সুতরাং গ্রামবাসীদের শান্তি ভঙ্গের জন্য দায়ী দুষ্কৃতিকারী ও আইন অমান্যকারীদের খুঁজে বের করা তাদের পক্ষে সহজ। তিনি বলেন, প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায় সমভাবে সক্রিয় থাকলে দুষ্কৃতিকারীরা কোথাও পা রাখার জায়গা পাবে না এবং কেবল তখনই সমাজে শান্তি সুনিশ্চিত হবে।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি