You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.07.26 | দৈনিক ইত্তেফাক-পাটের সর্বনিম্ন দর প্রতিমণ পঞ্চাশ টাকা - সংগ্রামের নোটবুক

জুলাই ২৬, ১৯৭৩ বৃহস্পতিবার : দৈনিক ইত্তেফাক

পাটের সর্বনিম্ন দর প্রতিমণ পঞ্চাশ টাকা ঃ ইত্তেফাক রিপাের্ট। সরকার পাটের সর্বনিম্ন দর প্রতিমণ ৫০ টাকা ধার্য করিয়াছেন। গতকল্য (বুধবার) ১৯৭৩-৭৪ সালের পাটনীতি ঘােষণা উপলক্ষে আয়ােজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থ ও পাট বিষয়ক মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ এই ঘােষণা করেন। তিনি বলেন যে, চলতি সালের শেষ নাগাদ পাট পরিস্থিতির পর্যালােচনার পর আগামী মওসুমে পাট বুননের পূর্বেই ১৯৭৪-৭৫ সালের জন্য পাটের সর্বনিম্ন দর ধার্য করা হইবে। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, গত মওসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতি বৃষ্টি ও বন্যার ফলে পাটের উৎপাদন শতকরা ১২ হইতে ১৫ ভাগ হ্রাস পাইয়া থাকিলেও বর্তমান মওসুমে পাটের সরবরাহ সন্তোষজনক থাকিবে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত মওসুমের ২২ লক্ষ গাইট পাট মওজুদ রহিয়াছে। ইহা ছাড়া পাটকলসমূহেও গত বছরের ৮ লক্ষ ৬ হাজার গাইট পাট, সরকারী কর্পোরেশনসমূহে ৯ লক্ষ ৪ হাজার গাইট ও পরিত্যক্ত পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে ৪ লক্ষ ১১ হাজার গাইট পাট মওজুদ রহিয়াছে। রফতানি আয় ঃ জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ করেন যে, ১৯৭২-৭৩ সালে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি করিয়া মােট ২ শত ৪৮ কোটি ২০ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হইয়াছে। তন্মধ্যে কাঁচা পাট রফতানি বাবত ১ শত ৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি বাবত ১ শত ৩৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় রহিয়াছে। তবে আলােচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানির মাধ্যমে ২ শত ৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্য স্থির করা হইয়াছিল।

চলতি মওসুমে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানির মাধ্যমে ২ শত ৭৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রহিয়াছে বলিয়া অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, এই অর্থের মধ্যে কাঁচা পাট রফতানির মাধ্যমে ১ শত ১৫ কোটি টাকা ও পাট জাত দ্রব্য রফতানির মাধ্যমে ১ শত ৬০ কোটি টাকা অর্জনের সম্ভাবনা রহিয়াছে। ৫ শতাধিক পাট ক্রয় কেন্দ্র ঃ জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জানান যে, চলতি মওসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাট ক্রয় কেন্দ্র বৃদ্ধি করা হইবে এবং ইহার সংখ্যা ৫ শতের উপর হইবে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন যে, সরকারের তিনটি সংস্থা যথা—জে.টি.সি, জে.এম.সি. ও জে.পি.এস.সি. ইহাদের পাট কেন্দ্র ২ শত ৬০ হইতে ৩ শত ৬-এ উন্নীত করিবে। ইহাছাড়া দেশের পাট কলগুলি দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০ হইতে ৯০টি পাট ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করিবে। আলােচ্য সংস্থাগুলি ছাড়াও পরিত্যক্ত পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমীন ও মেসার্স ইস্পাহানী দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০ হইতে ২৫টি কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পাট রফতানী সংস্থার বেসরকারী এজেন্টগণ প্রায় ১শত পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু করিবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পল্লী এলাকায় পাট চাষিদের সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াই এই পাট ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হইবে। পাট ক্রয়ে সরকারী ভূমিকা ঃ চলতি মওসুমে তিনটি সরকারী পাট সংস্থা ও পরিত্যক্ত পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রায় ২৫ লক্ষ গাঁইট পাট ক্রয় করিবে বলিয়া আশা করা হইতেছে। ইহাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ প্রায় ১৫ লক্ষ গাইট পাট ক্রয় করার সম্ভাবনা রহিয়াছে। বাকি ১৫ লক্ষ গাইট পাট বেসরকারী পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্রয় করিবে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, বিভিন্ন প্রকার অসুবিধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পাট রফতানি কর্পোরেশন সরকারের পাট রফতানী ব্যবসা জাতীয়করণ নীতি সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়ন করিতেছে। সকল পাট রফতানিই আলােচ্য সংস্থার মাধ্যমে হইবে।

অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, পাটের রফতানি মূল্য সম্পর্কে সময় সময় পাট মূল্য উপদেষ্টা কমিটি পর্যালােচনা করিবেন। পাট উৎপাদন বৃদ্ধি সম্পর্কে ঃ জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জানান যে, কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য বিকল্পের সহিত তীব্র প্রতিযােগিতার জন্য আমাদের একর প্রতি পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা অপরিহার্য হইয়া দেখা দিয়াছে। কাজেই পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে কৃষি দফতর ও পাট দফতরের সহিত আলােচনাক্রমে পরিকল্পনা কমিশন একটি বাস্তব পরিকল্পনা প্রণয়ন করিবেন। তিনি বলেন, আমাদের মােট বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৮০ হইতে ৮৫ ভাগই পাট রফতানির মাধ্যমে অর্জিত হয়। কাজেই পাট উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি