জুলাই ১৬, ১৯৭৩ সােমবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
ব্যাংকিংয়ের উপর বিশেষ ক্রোড়পত্রে অর্থমন্ত্রীর বাণী ও জাতীয় সংবাপত্রসমূহে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবার জন্য বিশেষভাবে একটা জঘন্য ও হীন প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও বিপর্যস্ত করা হয়েছিল, তা সত্ত্বেও উল্লেখযােগ্যভাবে কম সময়ের মধ্যে তাকে পুনসংগঠিত ও পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আজ শুধু স্বাধীনতা পূর্ব যুগের ব্যাংকিং দক্ষতাই অর্জন করেনি, বস্তুত সম্পদ, সঞ্চয়, লগ্নি ও তৎপরতার চৌহদ্দির দিক দিয়ে বিবেচনা করলে স্বাধীনতা পূর্ব যুগের দক্ষতাকেও সে ছাড়িয়ে গেছে।
স্বাধীন জাতির অর্থনীতির প্রয়ােজন মিটানাের উদ্দেশ্যে ব্যাংকিং সুযােগ সুবিধার ব্যাপ্তি ও দক্ষতার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তার নেতৃত্বে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা দক্ষ জাতীয় পরিশোেধ পদ্ধতি পুনসংস্থাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় পরিশােধ পদ্ধতি গড়ে তুলতে গিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে তিনবার অচল ঘােষিত মুদ্রা পরিস্থিতির মােকাবিলা করতে হয়েছে; উৎপাদনশীল শিল্প উদ্যোগগুলাের জন্য সুষ্ঠুভাবে ঋণ সরবরাহ করতে হয়েছে; জনগণের মধ্য থেকে সঞ্চয় সংগঠন করতে হয়েছে এবং অতি মুদ্রাস্ফীতি ঘটিয়ে সাধারণভাবে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য অর্থ যােগান দিতে হয়েছে।
ধ্বংসস্তুপ থেকে নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থা জাগরণের গৌরবদীপ্ত কাহিনী ও তার বিভিন্ন দিক এবং পরবর্তীকালে জাতীয় পুনর্গঠন প্রয়াসে ব্যাংকিং ব্যবস্থার অবদান সম্পর্কে সর্বসমক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচার করার সময় আজ এসেছে। তাছাড়া আজ বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি জাতীয় সম্পদ। আমাদের অর্থনীতির মৌল এই গণ-খাতের তৎপরতা সম্পর্কে জানার আগ্রহ জনগণের মধ্যে অবশ্যই আছে। অতএব, বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের উদ্যোগ অত্যন্ত সঠিক হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। সর্বজনের কাজে এই বিশেষ সংখ্যা বরণীয় হবে এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। তাজউদ্দিন আহমদ।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি