নভেম্বর ১, ১৯৭২ বুধবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
কৃষি বিপ্লবের জন্য খসড়া সংবিধানে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে : জনাব তাজউদ্দিন বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ দু’দশক ধরে জনগণের পাশে থেকে সংগ্রাম করে গেছে সেহেতু জনতার আশা-আকাংখার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পরিচয় নিবিড়। এই প্রসঙ্গে তিনি তার দলের নেতৃত্বে পরিচালিত মুলনীতি বিষয়ক কমিটির বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন, ৫২-র ভাষা আন্দোলন ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খসড়া সংবিধানে জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলনই শুধু হয়নি, সেই সাথে তা বাস্তবায়নের পথে যাতে কোন বাধা না আসে, তারও ব্যবস্থা রয়েছে। জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষা দানের উপর গুরুত্ব আরােপ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তােলা। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৪ সালে দলের কাউন্সিল অধিবেশনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে তার কর্মসূচি ঘােষণা করেছে।
এই কর্মসূচির যারা বিরােধিতা করছে তাদের সমালােচনা করে তিনি বলেন, তারা যদি এর থেকে কোন ভাল কিছু দিতে পারে, তাহলে তাও বিবেচনা করা যেতে পারে। ভূমি সংস্কারের বিষয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন দেশেই এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভূমি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আনা সম্ভব হয়নি। জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে একশ হেক্টর পর্যন্ত জমিতে ব্যক্তি মালিকানা রয়েছে। আমাদের অবস্থা অন্যদের থেকে আলাদা। আমরা তাই আলাদা পদ্ধতির আশ্রয় নেব। জনাব তাজউদ্দিন তার ভাষণে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থনকারী মিত্রদেশগুলির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল বলে শক্র তার উপরও আক্রমণ চালায়। তাকে তখন তার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে নামতে হয়েছিল। অন্য দিকে সােভিয়েট ইউনিয়নের সক্রিয় সমর্থনে আমাদের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়। তিনি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সহযােগিতার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত সকল শ্রেণীর মানুষকে আমরা সমর্থন করে যাব। সেই সাথে আমরা যে কোন ধরনের সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও ঔপনিবেশবাদের বিরােধী, কেননা আমরা এগুলির বিরুদ্ধেই লড়ছি।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি