You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

বাংলাদেশ মুদ্রামান হ্রাস করেনি : স্টাফ রিপাের্টার অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ দেশের মুদ্রামান উন্নয়নের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল শুক্রবার বিকালে ঢাকা জেলা পরিষদ ভবনে বাংলাদেশ মিনিস্ট্রেরিয়াল কর্মচারি সমিতির ঢাকা জেলার নব-নির্বাচিত পরিষদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দানকালে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত উদ্বৃত্ত জিনিস বিদেশে রপ্তানি করে দেশীয় মুদ্রার মান উন্নয়ন করা যায়। দেশে মুদ্রামান হ্রাস করা হয়েছে বলে গুজবের সত্যতা অস্বীকার করে জনাব তাজউদ্দিন বলেন যে, দেশে দ্রব্যসামগ্রী পাওয়া না পাওয়ার উপর মুদ্রামান’ নির্ভর করে।

তিনি বলেন যে, আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে আমাদের মুদ্রার উপর আঘাত করা হচ্ছে। কিন্তু তবুও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মুদ্রামান অনেক উচ্চে রয়েছে। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মুদ্রামান দেড় টাকা উপরে রয়েছে বলে তিনি তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় না করার জন্যে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানান। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সকলকে সকল সমস্যা ও সুযােগ সুবিধা একসাথে ভাগ করে ভােগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকারের কর্মবিমুখতা বা দুনীতির জন্যে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। তিনি চোরাচালানিরা বাংলাদেশ বা ভারত কারােরই বন্ধু নয় বলে উল্লেখ করেন। চোরাচালানি ধরা পড়লে তাদের ছেড়ে দেবার জন্যে কোন কোন মহল থেকে সুপারিশ করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, বায়তুল মোেকাররম বা পল্টন ময়দানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে যারা বক্তৃতা করেন তাদের মধ্যে অনেকে লাইসেন্স ও পারমিটের জন্যে সচিবালয়ে মন্ত্রীদের বিরক্ত করেন। তিনি কারাে নাম উল্লেখ না করে বলেন যে, আমাদের ভাইয়েরা বিভিন্ন স্থানে যে সব সমস্যা সৃষ্টি করছেন তা সমাধান করার জন্যে মন্ত্রীদের প্রত্যহ অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ভূঁইফোড় সাপ্তাহিক পত্রিকাসমূহের প্রচারণার তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি বলেন যে, গত এক মাস ধরে ঢাকায় মনিটর করা। পাকিস্তান রেডিওর বক্তব্য এবং এইসব সাপ্তাহিক পত্রিকার বক্তব্যে হবহু মিল। রয়েছে। তিনি বলেন যে, এ সব পত্রিকা আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়। এরা রাষ্ট্রীয় মূল ভিত্তিতে আঘাত হানতে চাচ্ছে ও জাতীয় বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দিচ্ছে এবং এদের উস্কানিতেই আমাদের শিল্পাঞ্চলে আঞ্চলিকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অর্থ দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে স্লোগান তােলা নয়। তিনি এদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেবার জন্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন যে, সরকার এ সব কুচক্রীদের নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ মিনিস্ট্রেরিয়াল সমিতির দাবি-দাওয়ার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন যে, পে-কমিশন রিপাের্টের ভিত্তিতে চাকুরি ক্ষেত্রে বেতনের বেলায় আকাশ-পাতাল বৈষম্য থাকবে না। চাকুরি পুনর্গঠন বাের্ড সমাজতান্ত্রিক কাঠামাে সামনে নিয়ে কাজ করছেন এবং বেতনের ক্ষেত্রে পুরানাে শ্রেণীবিন্যাস বিলােপ করে মাত্র ৪ বা ৫টি শ্রেণী বিন্যাস করা হবে। তিনি কর্মচারিদের পারস্পরিক সমঝােতা ও মমত্ববােধ সৃষ্টি করে নিরলসভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে কাজের চাইতে এখন দাবিনামা পেশের প্রতিযােগিতা চলছে। তিনি বলেন, সাড়ে সাতটা থেকে দু’টা পর্যন্ত অফিসের সময়সূচি পাকিস্তান ও সৌদী আরব ছাড়া দুনিয়ার কোথাও নেই। তিনি বলেন, যে, অফিসের এই সময়সূচি তিনি কোনদিন সমর্থন করতেন না এবং এখনও করেন না। অর্থমন্ত্রী বলেন, সর্বস্তরে আজ ফাকিবাজি ও ভুল বােঝাবুঝি চলছে। কে কি করে কত পয়সা আয় করবে সেইফিকিরে সবাই ব্যস্ত। এদের কারাে মধ্যে সাধারণ মানবিক মমত্ববােধ আজ নেই ।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: <b>Alert:</b> Due to Copyright Issues the Content is protected !!