সেপ্টেম্বর ৬, ১৯৭২ বুধবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
বিভিন্ন ধুয়া তুলে যারা উৎপাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে তারা দেশের শত্রু ঃ স্টাফ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বিভিন্ন সংস্থা ও কল-কারখানা থেকে দাবি-দাওয়া পেশের সাথে সাথে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবনের জন্য কাজ করার প্রতিযােগিতা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং পবিত্র কর্তব্য মনে করে প্রত্যেকের দায়িত্ব পুরােপুরি পালনের আবেদন করেছেন। মন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার একাউনটেন্ট জেনারেল অফিস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ.জি.বি. কর্মচারি সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করছিলেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ তার বক্তৃতায় দেশের বিভিন্ন সমস্যা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, সাবেক পাকিস্তানী আমলের সমস্যা ছাড়াও নতুন করে সৃষ্ট বহুতর সমস্যা বাংলাদেশ সরকারকে মােকাবিলা করতে হচ্ছে। পুরানাে সমস্যার জন্য বর্তমান সরকার দায়ী নয়। কিন্তু সমস্যা দূর করার দায়িত্বও এ সরকার অস্বীকার করবে না। যুদ্ধের পর সমস্যা কেন বাড়ল, এই প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধের ফলে যে সমস্ত ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত দুর্যোগ চাপা পড়েছিল, যুদ্ধ শেষ হবার পর তা আমরা উপলব্ধি করছি।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, কল-কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন হচ্ছে না। উৎপাদন বৃদ্ধিই সমস্যা সমধানের একমাত্র উপায় বলে উল্লেখ করে তিনি আরাে বলেন যে, দাবি-দাওয়া মিটাবার জন্য শুধু নােট ছেপে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক পেশকৃত দাবি দাওয়া সম্পর্কে বলেন যে, দাবিদাওয়ার সাথে সাথে কাজ বেশি করে উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রতিযােগিতা করুন। অর্থমন্ত্রী নতুন অফিস সময় নির্ধারণ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপাের্ট আছে যে, সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দুটো পর্যন্ত কাজ করলে নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারিদের স্বাস্থ্যহানি হবে। তথাপিও সরকার দাবি মেনে নিয়েছেন। দেশের উন্নয়নের খাতিরে জাতীয় স্বার্থে পবিত্র কর্তব্য মনে করে অফিস সময়ের পুরােটা কাজ করার জন্য তিনি সরকারী কর্মচারিদের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার দাবি সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, সে জন্য কৃতার প্রয়ােজন রয়েছে আত্ম-নির্ভর হবার উদ্দেশ্যে। তিনি আরও বলেছেন যে, দাবি-দাওয়া ও অন্যান্য সমস্যা মিটাবার জন্য ধনতন্ত্রের কাছে হাত পাতলে আত্মনির্ভরশীলতা কোনদিন আসবে না।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি