আগস্ট ২৯, ১৯৭২ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
চীন প্রকাশ্য শত্রুর ভূমিকা পালন করিয়াছেঃ (ইত্তেফাক রিপাের্ট)। বাংলাদেশ প্রতিবেশী মহান চীনের বন্ধুত্ব আশা করিয়াছিল। বিগত স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরােধিতা করিলেও বাংলার মানুষ ভাবিয়াছিল বর্তমানে চীনের জনগণ ও সরকার বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে বিরােধিতা করিবে না। কিন্তু চীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়ােগ করিয়া এ দেশের জনগণের প্রকাশ্যে শত্রুতা করিয়াছে। গতকাল (সােমবার) বিকালে জনাব জামালউদ্দিন এম.সি.য়ের সভাপতিত্বে ধামরাইয়ের এক জনসভায় অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ উপরােক্ত মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী চীনের নেতৃবৃন্দের ভূমিকার সমালােচনা করেন এবং মহান চীনের জনগণকে বাংলাদেশের ব্যাপারটি উপলব্ধি করিবার আহ্বান জানান। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একশ্রেণীর চক্রান্তকারী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বীজ ছড়াইতেছে।
অধুনালুপ্ত মুসলিম লীগ, জামাত পন্থী দলের লােকজন তাহাদের সহিত মিশিয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাইবার অপচেষ্টা চালাইতেছে। জনাব তাজউদ্দিন এখানকার কিছু কিছু সংবাদপত্রের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া বলেন, সম্ভবতঃ বিদেশী সাহায্যপুষ্ট কয়েকটি সংবাদপত্র এখানে ভারত বিদ্বেষী প্রচারণা চালাইতেছে। মন্ত্রী মহােদয় বলেন, যােগাযােগ ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সাধন না হওয়ার দরুন এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা সম্ভব হইতেছে না। অর্থমন্ত্রী চোরাচালানি ও মুনাফাখখার এবং সমাজ বিরােধীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হইবে বলিয়া উল্লেখ করেন। তিনি দালালদের ধরাইয়া দিবার জন্য সকলের নিকট আহ্বান জানান। মওলানা ভাসানীর সমালােচনা করিয়া অর্থমন্ত্রী বলেন, ভাসানী আহুত ভুখা মিছিলের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হইতে পারে না। ইহা জনগণের দুঃখ দুর্দশাকেই বাড়াইয়া তুলিবে। স্বাধীনতা নস্যাতের জন্য আজ আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহ এখানকার দেশীয় ক্রীড়নকদের সাহায্যে তৎপর হইয়া উঠিয়াছে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। মন্ত্রী মহােদয় এই চক্রান্তের দুর্গকে বিধ্বস্ত করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি