আগস্ট ৭, ১৯৭২ সােমবার ঃ দৈনিক বাংলা
চীনের প্রতি বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের আহ্বান; দুর্দিন আর সুদিনের বন্ধু একই সম্মান পেতে পারে না : অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল রবিবার গণচীনের প্রতি বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন না করে চীন ভুল করেছে, অবিচার করেছে; তবু আমরা চীনকে মন্দ বলছি না। অর্থমন্ত্রী মাউতাইলে এক জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। বাসস ও বিপিআই এ খবর দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করছি। পুঁজিবাদী শিবিরের আর্থিক সাহায্য গ্রহণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের সাহায্য যত কম নেয়া যায় ততই মঙ্গল। যতটুকু আমরা হজম করতে পারব, ততটুকুই নেয়া উচিত। তিনি ন্যূনতমভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যের জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। যারা বীরত্বের সাথে মুক্তি সংগ্রামের দিনগুলােতে লড়াই করেছে বাংলাদেশের সেই সােনার টুকরাে ছেলেদের মধ্যে দলাদলি ও ভাঙ্গন সম্পর্কে তিনি বলেন, ওদের | বিভক্ত দেখে আমি ব্যথা পাই। তিনি তাদের প্রতি আলােচনার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন করে আবার একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। কারণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় একে অপরের সাথে বিবাদ করার প্রশ্নই ওঠে না। এই মুহূর্তে প্রত্যেককেই আত্মবিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।
মুক্তি সগ্রামে বঙ্গবন্ধুই আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা শুধু তার নির্দেশকেই কার্যকর করেছি। গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ছিল বঙ্গবন্ধুরই সরকার। আমরা বঙ্গবন্ধুর হয়ে কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধুর পায়ের ধমকে চেয়ারে রেখে আমরা সেই সরকার চালিয়েছি। অর্থমন্ত্রী জাতীয় সমস্যা ও নীতি সম্পর্কে সমস্ত দল ও গ্রুপের মত প্রকাশের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন। জনগণ যে মতই গ্রহণ করুক, আমাদের পছন্দ না হলেও আমরা তা মেনে নেব। কারণ, আমরা জনতার সাথে থাকতে চাই। তিনি বলেন, রাতারাতি জাতীয় উন্নয়ন সাধনের চিন্তা ভুল। জাতীয় বাজেট উন্নয়নের বাজেট নয়। ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের বাজেট। অর্থমন্ত্রী দৈনন্দিন জীবনে ব্যয় সংকোচনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতীয় সমস্যাকে বিচার করবার সময় একই সঙ্গে অধিকার এবং দায়িত্ববােধ প্রদর্শন করতে হবে। সত্যিকার অর্থে একটি আধুনিক সভ্য সমাজ গড়ে তুলতে হলে ধৈর্য্যের প্রয়ােজন। অর্থমন্ত্রী পররাষ্ট্র নীতির বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারাে সাথেই শত্রুতা নয়—এই আমাদের নীতি। তাই বলে দুর্দিনের বন্ধু আর সুদিনের বন্ধুকে আমরা একই সম্মান দিতে পারি না। তিনি জনগণকে বিপ্লবী চেতনা নিয়ে সােনার বাংলা গড়ার জন্য উৎপাদন বাড়ানাের আহ্বান জানান। তীব্র ভাষায় অতি বিপ্লবীদের আক্রমণ করে তিনি বলেন, এরা রাতারাতি সবকিছু দেখতে চায়। বিলাস বাহুল্যের জন্যে তিনি কতিপয় পদস্থ কর্মচারির সমালােচনা করেন। তিনি কতিপয় শ্রমিক ও ছাত্রনেতৃবৃন্দের কার্যকলাপেরও সমালােচনা করেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি