জুলাই ২২, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
জোর জবরদস্তি করে দাবি আদায়ের নাম স্বাধীনতা নয় : স্টাফ রিপাের্টার। ঘেরাও আর চলবে না, ঘেরাও চলতে দেয়া হবে না, আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেয়া হবে না। অর্থ ও পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারিদের এক সভায় বক্তৃতা দানকালে দৃঢ়ভাবে উপরােল্লিখিত অভিমত ঘােষণা করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গত ১৪ ও ২০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় কর্মচারি দু’জন ঊর্ধ্বতন অফিসারকে লাঞ্ছিত করে। এরই প্রেক্ষিতে ব্যাংকে এক অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছিল। এ সব কারণে অর্থমন্ত্রী গতকাল হঠাৎ ব্যাংক কর্মচারিদের উদ্দেশ্য ভাষণ দানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে গমন করেন। কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ দু’ঘন্টাব্যাপী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের ঘেরাও থেকে রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধু নিজে গিয়ে তার সহকর্মীদের এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যেখানেই ঘেরাও হয় তােমরা যাও, প্রয়ােজন হলে প্রাণ দাও। ব্যাংকের বড় বড় কর্মচারিদের উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা আগের দিনের কথা ভুলে যান। যেখানেই কাজ করেন, ছােট বড় সকলেই ভাইয়ের মত | মিলে মিশে কাজ করেন। তিনি আরও বলেন, বড় সাহেবরা কোন কিছুই গােপন রাখবেন না। ভিতরে ইদুর রেখে বাইরে মাটি দিলে সমস্যার সমাধান হবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ছােট বড় অফিসার আছে। চীন রাশিয়াতেও ছােট বড় কর্মচারি আছে। তিনি বলেন, আমলা পৃথিবীর সর্বত্র আছে। সরকারের নীতি ও কর্মপ্রক্রিয়ার উপর আমলাদের মনােভাব নির্ভর করে। অর্থ ও পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নিয়ম হচ্ছে শ্রমিকরা দাবি উত্থাপন করবে আর সাথে সাথে উৎপাদনে বাড়িয়ে যাবে এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় করবে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ঘেরাও, প্রতিদিন দাবি উত্থাপন করে, আর জোর জবরদস্তি করে, স্বাক্ষর করিয়ে দাবি আদায় করাকে স্বাধীনতা বলে না। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, গত ছয় মাসে শুধুমাত্র কর্মচারিদের বেতন খাতে ৩৫ কোটি টাকা বাড়ানাে হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ টাকা বঙ্গবন্ধুর টাকা নয়, এ টাকা তাজউদ্দিনের টাকা নয়, এই টাকা দেশের মানুষের। অর্থমন্ত্রী কর্মচারিদের সরাসরি প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা দেশের জনগণের শতকরা কত ভাগ? কর্মচারিরা নিরুত্তর। অর্থমন্ত্রী নিজেই বললেন,বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারিদের সংখ্যা মােট জনসংখ্যার শতকরা তিনভাগের বেশি হবে। তিনি বলেন, শতকরা তিনভাগের জন্য সরকার ইতােমধ্যে অনেক করেছেন। অথচ গ্রামবাংলার শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষের জন্য এখনও কিছু করা সম্ভব হয়নি। এবং গ্রামের সাধারণ মানুষের পয়সা দিয়েই সরকার চলে। কর্মচারিদের উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন যে, আপনারা মাসের শেষে তবুও কিছু টাকা হাতে পান। কিন্তু গ্রামের মানুষ তাও পায় না। পূর্বাহ্নে ব্যাংক কর্মচারিগণ তাদের বিভিন্ন সমিতির পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান এবং মাল্য দান করেন। সমিতির নেতৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রীর অবগতির জন্য তাদের দাবি দাওয়ার কথা বলেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি