You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.06.03 | দৈনিক পূর্বদেশ-বাংলার স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য সকল বিরুদ্ধ শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে - সংগ্রামের নোটবুক

জুন ৩, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

বিরুদ্ধ শক্তি মােকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন ঃ স্টাফ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বাংলার স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য সকল বিরুদ্ধ শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কাজেই সামগ্রিক জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এইসব শক্রদের মােকাবিলা করতে হবে। অর্থমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার ইসলামিক একাডেমী মিলনায়তনে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারি ইউনিয়নসমূহের প্রতিনিধিদের এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আজ আর্থিক দাবি-দাওয়া তােলা হচ্ছে। বহুক্ষেত্রে জোর করে দাবি আদায়ের ঘটনাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু একথা সকলের মনে রাখা দরকার যে, ঘেরাও করে অথবা বলপ্রয়ােগ করে দাবি আদায় করা যায়, কিছু কাগজের নােট আদায় করা যেতে পারে। কিন্তু তাতে সমস্যার সমধান হবে না। কেননা, কাগজের নােট মৌলিক প্রয়ােজন মেটাতে পারে। মৌলিক প্রয়ােজন মেটাতে হলে সর্বক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, উৎপাদন বাড়ানাে দূরে থাকুক, আগের তুলনায় উৎপাদনের হার অনেক কমে গেছে। বহু কল-কারখানার শ্রমিকদের এ বাহিনী, সে বাহিনী গঠন করে প্যারেড করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তারা কাজ করছেন না। শিল্পে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার এটাও একটা কারণ। অর্থমন্ত্রী অভিযােগ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুসংখ্যক কর্মচারি তিন হাজার নােটের বেশি গুণতে চান । জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ঘােষিত চারটি মূলনীতিতে বিশ্বাসী সকল দলকে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশপ্রেমিক দলগুলাের মধ্যে জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়।

দেশে বর্তমান অবস্থায় কারাে নিরাশ হবার কিছু নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, একটু কম খেয়ে, একটু কম পরে, কষ্ট স্বীকার করে হলেও স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। তিনি বলেন যে, দেশ টিকে আছে এবং টিকে থাকবে। আমরা সাময়িক কষ্টের জন্যে স্বার্থবাদী মহলের শর্তযুক্ত সাহায্য নেব না । দুর্নীতিবাজরা রেহাই পাবে না : অর্থমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থে দুনীতিপরায়ণ অফিসার ও আমলাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযােগ দায়ের করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, সরকার দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, শ্রমিক নেতা, অফিসার এক কথায় কাউকেই রেহাই দেবে না। তিনি অফিসারদের উদ্দেশ্য করে মৃত পাকিস্তানী আমলের আমলাতান্ত্রিক মনােভাব অবিলম্বে পরিহারের আহ্বান জানান। তবে তিনি বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক দেশেও আমলাতন্ত্র রয়েছে। কিন্তু সে আমলাতন্ত্র সমাজতান্ত্রিক মানসিকতা ও সমাজতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্ট। চাকুরি ক্ষেত্রে শ্রেণী বিন্যাস ঃ চাকুরি ক্ষেত্রে শ্রেণী বিন্যাসের উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, আমরা শ্রেণী বিন্যাসের বিরােধী। বর্তমান চাকুরি ক্ষেত্রে ১৩৪টি শ্রেণী রয়েছে। ধীরে ধীরে সেগুলাে বিলােপ করা হবে। সকাল সাতটা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত অফিসের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে তিনি বলেন যে, দুনিয়ার সকল দেশে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস চলে। এই অফিস সময় নির্ধারণের পেছনে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে।

সকাল ৭টা থেকে অফিস চালু করা হলে দূরাঞ্চল থেকে আগত কর্মচারিরা বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। অর্থমন্ত্রী। অত্যন্ত দুঃখ করে বলেন যে, বিভিন্ন অফিসে কাজ কম হচ্ছে। কিছুসংখ্যক অফিসার ও কর্মচারি কাজে ফাকি দিচ্ছে। তিনি এ প্রসঙ্গে ওয়াপদা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা উল্লেখ করেন। তিনি এদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, যারা অফিসে এসে কাজ না করে বসে থাকবেন বা সরকারী সিদ্ধান্ত কার্যকরি করতে বাধার সৃষ্টি করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন যে, দুনিয়ায় শােষণের অবসান এবং নির্যাতিত মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিন ঘনিয়ে এসেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্মঘট বেআইনী করে সম্প্রতি সরকার যে আদেশ জারি করেছেন, সে সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ মাসে ধর্মঘটের নামে কোন কোন ক্ষেত্রে যে আচরণ করা হয়েছে তাতে বাধ্য হয়েই সরকার এ আদেশ জারি করেছেন। ধর্মঘটের অধিকার থাকা দরকার, কিন্তু এ অধিকার যেন সঠিকভাবে প্রয়ােগ করা হয় সেদিকেও সকলের দৃষ্টি রাখতে হবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি