মে ২০, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
সমাজ বিরােধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহ্বান ঃ ঢাকা, ১৮ মে (বাসস)। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সমাজ বিরােধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তস্বরূপ শাস্তি দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি বলিষ্ঠ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে, সমাজ বিরােধী ব্যক্তি তিনি এম.সি.এ. কিংবা আওয়ামী লীগ নেতা অথবা যে কোন দলের লােক হােক না কেন, তাকে শাস্তি দিতে যেন কেউ দ্বিধা না করেন। এখান থেকে বিশ মাইল পূর্বে আড়াইহাজার স্কুল ময়দানে এক জনসভায় তিনি বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলেন যে, ন্যায় ও সত্যের খাতিরে কোন দোষী ব্যক্তির প্রতি কারাে উদাসীন থাকা উচিত নয়। দোষী ব্যক্তি পিতা, পুত্র, নেতা, শ্রমিক কিংবা সঙ্গি হলেও তাকে ক্ষমা করা চলবে না। তিনি বলেন যে, দেপ্রেমিক জনসাধারণের সাহায্য ও সহযােগিতা ছাড়া সরকারী প্রশাসনযন্ত্র সমাজ বিরােধীদের বের করতে এবং শাস্তি দিতে সমর্থ হবে না। তিনি সমাজ বিরােধী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য সরকারী আইন প্রয়ােগকারী শক্তিকে সহায়তার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরাে বলেন যে, জনগণ দোষীদের আশ্রয় ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে সরকার তাদের কিছুই করতে পারবেন না। জনগণকেই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন যে, দুর্নাম অর্জনের আগেই আওয়ামী লীগের মৃত্যুকে তিনি স্বাগত জানাবেন। তিনি আরাে বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে কোনদিন ধিকৃত হবে না। কারণ এর নেতৃবৃন্দ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। তিনি বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে, তার সরকার দেশে কোন দুনীতি বরদাস্ত করবেন না। জনাব তাজউদ্দিন বলেন যে, আওয়ামী লীগ কর্মী ও এম.সি.এ.দের সমালােচনা করে কোন পরিবর্তন আনা যাবে না। সকলকে কাজ করতে হবে।
তিনি বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের ‘সােনার বাংলা’ গড়ে তােলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দেশের এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বিরােধী শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দৃঢ়ভাবে ঘােষণা করেন যে, বাংলাদেশ সর্বহারা ও সাধারণ মানুষের দেশ রূপে গড়ে উঠবে। এখানে কোন শােষণ কিংবা অত্যাচার থাকবে না। তিনি বলেন যে, এখনাে লাইসেন্স ও পারমিটের জন্য ভীড় দেখা যায়। তবে “চাচা-ভাইপাের” লাইসেন্স নেয়ার দিন শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, দক্ষ লােকদের হাতে কাজের ভার ছেড়ে দেয়ার জন্য সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি এ প্রসঙ্গে সুতার এজেন্সি পদ্ধতি বাতিলের কথা বলেন। তিনি সংক্ষেপে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্ণনা করেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি