জানুয়ারি ৯, ১৯৭২ রবিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দিনের টেলিফোনে আলাপ ঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিনের সাথে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু ঃ হ্যালাে তাজউদ্দিন, আমি সাংবাদিকদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছি। আমি তাদের এখন কি বলতে পারি ? দেশের জনগণ কেমন আছে ? আমার দেশের যে | অগণিত পুরুষ, মহিলা ও শিশু বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে পাইকারিভাবে | নিহত হয়েছে আমার হৃদয় তাদের কথা জানতে উদগ্রীব হয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী ঃ আপনার প্রিয় বাংলাদেশ বিশ্ব ইতিহাসের নিকৃষ্টতম রক্তস্নানের মাধ্যমে এখন একটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়েছে। তারা স্বাধীনতার জন্য যথেষ্ট রক্ত দিয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভোগ এবং আতঙ্ক সত্ত্বেও তারা মুহূর্তের জন্যও মাথা নত করেনি।
পাকিস্তানের ফাইনাল ডিফিট ঃ ঢাকা, ৮ জানুয়ারি (বাসস) : বাংলাদেশের | প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ফলে পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীদেরই ফাইনাল ডিফিট (চুড়ান্ত পরাজয়) সূচিত হল। তিনি বলেন, এই বিজয় সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিজয়। এই বিজয় গণতন্ত্রের বিজয়। আর এই বিজয় বিশ্ব জনমতের বিজয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির শুভলগ্নে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ | জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ। ঘােষণা করেন, এই মুক্ত দেশে বঙ্গবন্ধুর শুভাগমনের ভিতর দিয়ে আমাদের মুক্তি। সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটবে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, বঙ্গবন্ধুকে আমরা ছিনিয়ে আনবােই। এর জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। তিনি বলেন, প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী | বলেন, বিশ্বের জনমতের প্রবল চাপের ফলে পাকিস্তানের শাসকবর্গ যেদিন | বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দানের ঘােষণা করেন সেদিন থেকেই বাংলাদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুর | শুভাগমনের জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি