জানুয়ারি ৭, ১৯৭২ শুক্রবার ঃ দৈনিক বাংলা
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে তাজউদ্দিন ; সবাইকে জাতীয় মিলিশিয়ায় নেয়া হবে ঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে যারাই দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের সবাইকে জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে নেয়া হবে। সরকার তাদের আহার, বাসস্থান এবং ন্যূনতম বেতনের ব্যবস্থা করবেন। তিনি গতকাল বিকেলে সেক্রেটারিয়েটে গঠিত কেন্দ্রীয় জাতীয় মিলিশিয়া বাের্ডের বৈঠকে ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, দেশের যুব সমাজ তাদের মাতৃভূমির মুক্তির সংগ্রামে যােগ দিয়েছেন। অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গু হয়েছেন এবং আর বাকি সবাই জয়ী হয়েছেন। গত নয় মাসের যুদ্ধকালে সরকার তাদের যথাযথ দেখাশােনা করতে পারেননি।
বিগত দিনগুলির স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিসেনারা বিভিন্ন শিবিরে দুঃখে, কষ্টে কাল কাটানাের সময় একটি মাত্র দাবি করেছিল, তাহল শত্রু নিধনের জন্য অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার দাবি। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আরাে বলেন, সরকার তাদের সংগঠিত করার, তাদের আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার এবং জাতীয় পুনর্গঠন কাজে নিয়ােগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের মহকুমা ভিত্তিতে সংগঠিত করা হবে। সমাজে আইন শৃংখলা রক্ষার কাজে জনসাধারণের সহযােগিতায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। আমাদের গেরিলাদের জন্য কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণ করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযােগিরা যাতে সমাজে অবাধে বিরচণ করতে না পারে প্রধানমন্ত্রী সে ব্যাপারে জনগণকে সদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা যাতে গেরিলা সেজে ঘুরে বেড়াতে না পারে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরাে বলেন, প্রত্যেককে জাতীয় মিলিশিয়ায় তালিকাভূক্ত করার পর সবাইকে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থান এবং ব্যক্তিগত পেশায় ফিরে যাওয়ার সুযােগ দেয়া হবে ।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি