জানুয়ারি ৮, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক বাংলা
সােভিয়েটের হুঁশিয়ারি ৭ম নৌবহরের অভিযান স্তব্ধ করেছে; এখনই শেখ। মুজিবকে ফেরত চাই : প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জনাব জুলফিকার আলি ভুট্টোকে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন যে, তিনি যদি পাকিস্তানকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে চান তাহলে অবিলম্বে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার নিজের জনগণের কাছে ফেরত দিতে হবে। বিএসএস পরিবেশিত এই খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগ কর্মীদের এক সভায় ভাষণ দান প্রসঙ্গে বলেন, প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে ফিরে পাওয়ার জন্য বাঙ্গালিরা যে কোন পর্যায়ে যেতে এবং যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছে। ভুট্টোর ভূমিকার সমালােচনা করে তিনি বলেন, অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুকে তার জনগণের কাছে ফেরত দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমালােচনা করে তিনি বলেন, এই দুটো দেশ সর্বদাই আমাদের স্বার্থবিরােধী কাজ করেছে। এদের দোস্ত পাকিস্তান বাংলাদেশে যখন লক্ষ লক্ষ লােককে হত্যা করে তখন এদের মধ্যে এক মুহূর্তের জন্য কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। পক্ষান্তরে এরা পাকিস্তানী বর্বর শাসকগােষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছে এবং নিরীহ জনসাধারণের হত্যাযজ্ঞে উৎসাহ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের মুক্তি সংগ্রামে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য যুবকদের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, জনসাধারণের তাদের নির্বাচিত সরকারের প্রতি আস্থা রয়েছে এবং তা আইন ও শৃংখলা বজায় রাখার মাধ্যমে প্রভূত পরিমাণে প্রমাণিত হয়েছে। দালাল ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের প্রতি সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখার। জন্যও প্রধানমন্ত্রী জনসাধারণকে সজাগ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও সােভিয়েট ইউনিয়নের সাথে বন্ধুত্ব দিন দিন শক্তিশালী হবে। মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে যে সমর্থন ও সহানুভূতি আমরা পেয়েছি তা কখনাে শােধ করা যাবে না। সােভিয়েট ইউনিয়ন এই অঞ্চলকে ভিয়েতনামে পরিণত হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। সােভিয়েটের সময়ােচিত হুশিয়ারির ফলে সপ্তম নৌবহরের গতি স্তব্ধ হয়েছে। নূরুল আমিনের ভাষণ থেকে স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানকে বাঁচানােই সপ্তম নৌবহরের উদ্দেশ্য ছিল।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি