জানুয়ারি ১, ১৯৭২ শনিবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য সােভিয়েট প্রচেষ্টাঃ ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর (বিপিআই)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আজ রাতে এখানে বলেন যে, সােভিয়েট ইউনিয়ন ও অন্যান্য বহু দেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখযােগ্য যে, বর্তমানে জাতির জনক পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের হাতে বন্দি রয়েছেন। সােভিয়েট সরকার এবং জনগণের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, সােভিয়েট সরকার জাতিসংঘে তিনবার ভেটো প্রদান করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়ার সকল হীন প্রচেষ্টা বানচাল করে দেন। এর ফলে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরাট বিজয়ের সূচনা হয়। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বাহিনীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে, ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানী হানাদারদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন, নয়তাে আরাে অনেক বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারাতেন। সিদ্দিক বাজার কমিউনিটি সেন্টারে এক বৃহৎ সমাবেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। জনগণকে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনুরােধ করেন।
তিনি বলেন যে, এখন দেশে বিশৃঙ্খলা এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ আমাদেরকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিতে দ্বিধান্বিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, আইন মান্যকারী সকল নাগরিক সমান অধিকার ভােগ করবেন এবং যে কোন মূল্যে তাদের জানমাল রক্ষা করা হবে। তিনি বলেন যে, এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় প্রয়ােজন হচ্ছে সর্বাত্মক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বর্তমান সরকার জাতির জনকের আদর্শকে বাস্তবে রূপায়িত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন যে, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের আদর্শ। জাতীয় জীবনের দৈনন্দিন কাজে এই সকল আদর্শকে বাস্তবে রূপ দান করার জন্য সরকার ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে হানাদারদের দোসরদের সম্পর্কে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন যে, এই সমস্ত দালাল আমাদের আশা-আকাংখা ধুলিসাৎ করে দেয়ার জন্য এখনও তৎপর রয়েছে এবং সুযােগ পেলেই তারা আমাদের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করবে। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, তারা অক্লান্ত সংগ্রাম এবং রক্তপাতের বিনিময়ে আমাদের এই সােনার বাংলাকে মুক্ত করেছেন। তিনি বলেন যে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন এবং তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি