You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.30 | দৈনিক ইত্তেফাক-সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনই সরকারের লক্ষ্য ; খিলগাঁও আওয়ামী লীগ কর্মীসভায় তাজউদ্দিনের বক্তৃতা - সংগ্রামের নোটবুক

ডিসেম্বর ৩০, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনই সরকারের লক্ষ্য ; খিলগাঁও আওয়ামী লীগ কর্মীসভায় তাজউদ্দিনের বক্তৃতা ঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল (বুধবার) বলেন যে, সর্বপ্রকার শশাষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমাজতন্ত্রী অর্থনীতি চালু করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। খিলগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুনরায় খােলা উপলক্ষে আয়ােজিত এক বিরাট কর্মীসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি এই মন্তব্য করেন। এপিবির খবরে একথা বলা হয়। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্রী দেশ হিসাবে পুনর্গঠনের জন্য সর্বশক্তি ও উদ্যম নিয়ােজিত করার উদ্দেশ্যে তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুক্তি সংগ্রামে যাহারা শহীদ হইয়াছেন, তাহাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শহীদদের রক্ত বৃথা যাইতে দিবেন না। তিনি আরও বলেন যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের মানুষ সত্য, ন্যায় বিচার ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সগ্রাম করিয়াছে এবং মাত্র ৯ মাসের মধ্যে এই স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হইয়াছে। তিনি বলেন, কোন জাতি এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করিতে পারে নাই এবং কোন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য এত রক্তের ঋণ পরিশােধ করিতে হয় নাই।

বাঙ্গালিদের মুক্তি সংগ্রামে অকুণ্ঠ সমর্থনদানের জন্য তিনি ভারতের ৫৫ কোটি অধিবাসী, ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জনাব তাজউদ্দিন সােভিয়েট ইউনিয়নের মহান জনগণ ও সরকারের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, আমাদের সংগ্রামের প্রতি রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থন দানের ফলেই বাংলাদেশ বিশ্বযুদ্ধের শিকার হওয়ার হাত হইতে বাচিয়া গিয়াছে। পঙ্গু মুক্তিযােদ্ধা ও নাগরিকদের পুনর্বাসন ও প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, সরকার এই স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলে চিরকালের জন্য পঙ্গু ও বেসামরিক লােকদের পুনর্বাসনের জন্য বদ্ধপরিকর। তিনি বাংলাদেশ সরকারের শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান ও জোটনিরপেক্ষ নীতির পুনরুক্তি করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশের যুব সমাজ স্বাধীনতার পুরােধা ছিল বলিয়া তাহাদের নিরস্ত্র করা হইবে না। তাহারা নিজেদের মূল পেশায় ফিরিয়া যাইতে না চাহিলে তাহাদের জাতীয় মিলিশিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করা হইবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি