You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.29 | দৈনিক পূর্বদেশ-সকল নাগরিকের সমান অধিকার - সংগ্রামের নোটবুক

ডিসেম্বর ২৯, ১৯৭১ বুধবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও স্টাফ রিপাের্টার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘােষণা করেছেন যে, ধর্ম ও ভাষা প্রভেদ সত্ত্বেও দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার, সুবিধা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানে সরকার বদ্ধপরিকর। গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জনাব তাজউদ্দিন উক্ত ঘােষণা করেন। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্ম ও ভাষা, স্থানীয় ও বহিরাগত নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সমান অধিকার প্রদানের নীতি ঘােষণা করেছেন এবং বাংলাদেশ সরকার ঘােষিত এই নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে বসবাসকারী কোন নাগরিকের প্রতি পৃথক ব্যবহার করা হবে না। যুদ্ধবন্দি : সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গত নয় মাসে যে সব যুদ্ধবন্দি গণ-হত্যা ও অন্য অপরাধের জন্য দায়ী। হবে তাদের বিচার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে মিত্র বাহিনী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিল। বাংলাদেশে স্থানাভাব ও নিরাপত্তার অভাবের দরুন কিছুসংখ্যক পশ্চিম পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দিকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার যখনি চলে যেতে বলবেন তখনই ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশে ফিরে যাবেন।

বাংলাদেশের জনগণ ভিখারী নয় : বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য প্রস্তাব প্রত্যাখান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, মার্কিন সরকারের অনুসৃত নীতির ফলে সাহায্য প্রস্তাব প্রত্যাখান করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, মার্কিন সরকারের ব্যবহার কি হয় তা তার উপর নির্ভর করবে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে আরও বলেন যে, বাংলাদেশের জনগণ ভিখারী নয়। কাজেই সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্থ হবার মত কোন সাহায্য প্রস্তাব বাংলাদেশের জনগণ। গ্রহণ করবে না। বিদেশী মিশনের ভবিষ্যৎ ঃ ঢাকায় অবস্থিত বিদেশী মিশনগুলির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, বিদেশী মিশনগুলিকে উপযুক্ত নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

তবে যে সব দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে না, তাদেরকে কূটনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে দেয়া অসুবিধাজনক হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন বিদেশী কূটনৈতিক মিশন বাংলাদেশ সরকারের কাছে মিশন বন্ধের কথা জানাননি। পশ্চিম পাকিস্তানে বাঙ্গালি : প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নকারীকে জানান যে, পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসকারী বাঙ্গালিদের নিরাপত্তা সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার চিন্তিত। জাতির জনক : জাতির জনকের মুক্তির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক রেডক্রস, আন্তর্জাতিক বিচারক কমিশন ও মানবাধিকার পরিষদকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার অনুরােধ করেছেন। এ ব্যাপারে এখনও কোন খবর পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। শহীদ মিনার ও প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে, মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী শহীদ মিনার পুননির্মাণের কথা সরকার চিন্তা করেছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহীদ মিনার পুননির্মাণ করা হবে। এছাড়া হানাদার বাহিনী কর্তৃক বিনষ্ট মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও মঠও পুননির্মাণ করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। পুনর্বাসন ও এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য যে ব্যাপক পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিচ্ছেন তাতে দেশত্যাগী, দেশের অভ্যন্তরে অবস্থানকারী আশ্রয়হীন এবং মুক্তি সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্থ শহীদ বা পঙ্গুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি