You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.06 | দৈনিক ইত্তেফাক-বাংলার বুকে এ গণহত্যা বন্ধ কর - সংগ্রামের নোটবুক

মার্চ ৬, ১৯৭১ শনিবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক

বাংলার বুকে এ গণহত্যা বন্ধ কর ও পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল শুক্রবার বলেন যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট এবং বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ-শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হইতেছে। অবিলম্বে এই নরহত্যা বন্ধ করিতে হইবে। যাহারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাহাদের জানা উচিত যে, নির্বিচারে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। এক বিবৃতিতে জনাব তাজউদ্দিন বলেন যে, বাংলাদেশের মানুষকে মৌলিক অধিকার হইতে বঞ্চিত করা এবং বাংলাদেশকে পশ্চিম-পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের ঔপনিবেশ ও বাজার হিসাবে শােষণের গূঢ় রাজনৈতিক মতলবে বেসামরিক অধিবাসীকে ভয়-ভীতি দেখানাের জন্য সামরিক বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহার করা হইতেছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হইতে হাজার হাজার লােকের হতাহত হওয়ার খবর আসিয়া পৌছিতেছে। আমরা সৈন্য বাহিনীর লােকদের এই গর্হিত আচরণের তীব্র নিন্দা করিতেছি।

শুধু বিদেশী আক্রমণের মােকাবেলায় দেশ রক্ষার জন্যই সৈন্য বাহিনী তাহাদের অস্ত্র ব্যবহার করিতে পারে—নিরস্ত্র দেশবাসীর উপর নয়। বাংলাদেশের নিরস্ত্র বেসামরিক লােকদের ওপর এই নগ্ন শক্তি প্রয়ােগ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে সৎ চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, সামরিক বাহিনীর যে অস্ত্র দেশ রক্ষায় বিদেশী হানাদারদের উপর ব্যবহার করার কথা, এক্ষণে উহা বাংলাদেশের বেসামরিক লােকদের ভয়-ভীতি দেখানাের জন্য ব্যবহার করা হইতেছে। বাংলাদেশের মানুষকে মৌলিক অধিকার হইতে বঞ্চিত রাখা, বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশ ও বাজার হিসাবে শশাষণ করা এবং বাংলাদেশের উপর ঔপনিবেশিক শাসন চিরস্থায়ী করার গূঢ় রাজনৈতিক মতলবেই এইরূপ ভয়-ভীতি দেখানাে হইতেছে। সামরিক শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এ কথা বােঝা যাইতেছে যে, এই নির্যাতনমূলক নীতি জোরদার করা হইবে। “বিশ্ববাসী জানিয়া রাখুন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর আজ যে নির্যাতন নামিয়া আসিয়াছে, তাহারা বীরের মত উহা প্রতিরােধ করিতেছেন। আজ আবাল-বৃদ্ধবনিতা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ মুক্তি অর্জন এবং এক স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বাচিয়া থাকার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।” -এপিপি ।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি