ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯৭১ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
এম. এন. এ.- এম, পি. এ. সমাবেশে নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা ঃ স্টাফ রিপাের্টার। গতকাল সােমবার সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের সমাবেশে শেখ মুজিবের নীতি নির্ধারণী ভাষণের পূর্বে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, জাতির এক মহা-ক্রান্তিলগ্নে এই মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হইতেছে। তিনি বলেন, জাতি যে বিপুল আস্থা সদস্যদের উপর স্থাপন করিয়াছে, উহার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ মহা-দায়িত্ব পালনের পথ-নির্দেশ দানই এই সম্মেলনের লক্ষ্য। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, প্রতি পদে প্রচন্ড বাধা ছিল। কিন্তু বাংলার ৭ কোটি নিপীড়িত মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য কোন ত্যাগকেই বড় মনে করে নাই। সমাগত ২১ ফেব্রুয়ারির উল্লেখ করিয়া জনাব তাজউদ্দিন বলেন যে, অধিকার আন্দোলনের পথে উহা ছিল প্রথম পদক্ষেপ। তিনি বলেন যে, এমনিভাবে পর পর বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়া আজ দেশ এক বিশেষ স্তরে আসিয়া পৌছিয়াছে—যখন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনতার রায়কে অবলম্বন করিয়া লক্ষ্যে উপনীত হইতে অগ্রসর হইবে। তিনি বলেন যে, সার্বিক অধিকার, নির্ভেজাল গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবােধ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরেও জাতীয় অধিবেশন ডাকার ব্যাপারে বিলম্ব প্রসঙ্গে বলেন যে, দুনিয়ার নিয়ম হইতেছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তাদের প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য ক্ষমতা পায়। কিন্তু এ দেশে পরিস্থিতি স্বতন্ত্র। এখানে নির্ধারিত ১২০ দিনে শাসনতন্ত্র রচনার পরই কেবল
সরকার পরিচালনা করার কথা। তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগ প্রধান পরিষদ অধিবেশন যাতে আগে হয় সে জন্য চেষ্টা করিয়াছিলেন। তিনি বলেন যে, নির্বাচনের পর পরই যেখানে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন ডাকা উচিত ছিল সেখানে বিলম্বে ডাকা হইলেও অতীতের অভিজ্ঞতা ও নজির দেখিয়া নিশ্চিত হওয়া চলে না যে, ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইবে কি না। তিনি বলেন যে, অতীতে ষড়যন্ত্রকারীরা উহার পথরােধ করিয়াছিল। তিনি বলেন যে, এক্ষণে বাংলার মানুষ এই ধরনের যে কোন পরিস্থিতি মােকাবেলা করিতে প্রস্তুত রহিয়াছে। তিনি বলেন যে, যারা এতদিন অবাধ শােষণ চালাইয়াছে তারা এবার মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু বাংলার মানুষ তাহা প্রতিহত করিতে প্রস্তুত। জনাব তাজউদ্দিন দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও খাদ্য পরিস্থিতি তুলিয়া ধরিয়া বলেন যে, দেশের মানুষ বিশেষ করিয়া ঘূর্ণিদুর্গত এলাকার মানুষ অন্ন-বস্ত্র ছাড়া অমানবিক জীবনযাপন করিতেছে। তিনি বলেন যে, গত বৎসর খাদ্য ঘাটতি ছিল ১৮ লক্ষ টন। এবার ২৭ থেকে ৩০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি হইবে। তিনি বলেন যে, এই বিরাট খাদ্য ঘাটতি পূরণের কি ব্যবস্থা করা হইয়াছে তাহা দেশের জাতীয় নেতাকে অবহিত করা হয় নাই।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি