অক্টোবর ১৬, ১৯৭০ শুক্রবার ও দৈনিক ইত্তেফাক
বাইশ পরিবারের এজেন্টদের সম্পর্কে সতর্কবাণী : মনােনয়ন-উত্তর নির্বাচনী প্রচার অভিযান উপলক্ষে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ কাপাসিয়া থানায় চার দিনব্যাপী এক ঝটিকা সফর করেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বক্তৃতা করেন। এই সকল জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতা জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব এবং বাংলাদেশকে শােষণের কবল হইতে রক্ষা করার জন্য ৬দফা ও ১১-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনার প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জনগণের ভােটাধিকার এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে জাতীয় পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের দাবি আদায়ের জন্য দলীয় প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সহ আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ এবং শ্রমিকগণ যে ত্যাগ তিতিক্ষা করিয়াছেন, জনসাধারণের নিকট তাহা তুলিয়া ধরেন। তিনি আরও বলেন যে, স্বাধীনতা লাভের পরও বাংলাদেশের কোন দাবি রক্ত দান এবং জেল-জুলুম ভােগ করা ছাড়া আদায় হয় নাই। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানের কোন দাবি-দাওয়া উঠিবার আগেই তাহা সমাধান হইয়া যায়। দেশের সমুদয় সম্পদ ও ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকায় এবং কেন্দ্রীয় রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তান অবস্থিত হওয়ায়ই পশ্চিম পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের সকল সুযােগ সুবিধা লাভ করিয়া থাকে। তিনি বলেন, বাংলার সম্পদ বাংলাদেশে রাখিবার জন্যই ৬-দফা দাবি পেশ করা হইয়াছে। তিনি বলেন, ৬-দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন অর্জন ছাড়া বাংলার মানুষ বাঁচিবে না।
তিনি আরও বলেন যে, আগামী নির্বাচনে ৬-দফা দাবি প্রতিষ্ঠিত করিতে না পারিলে বাংলার যে সম্পদ এখনও আছে তাহাও পাচার হইয়া যাইবে এবং বাঙ্গালি দাসে পরিণত হইবে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী নির্বাচনই নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার শেষ প্রচেষ্টা। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহল এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করিয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ বিরােধী দলগুলির পিছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করিতেছে বলিয়া তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ৬-দফা তথা বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবির বিরুদ্ধে একদিন আইয়ুব-মােনেম খান যে ভাষায় কথা বলিতেন, বাংলার কতিপয় রাজনৈতিক দলও আজ সেই একই ভাষায় কথা বলিতেছেন। তিনি ইহাদের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করিয়া দেন।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি