ফেব্রুয়ারি ৩, ১৯৭০ মঙ্গলবার ঃ দৈনিক ইত্তেফাক
আওয়ামী লীগকে দোষারােপ করার তীব্র নিন্দা ও পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গত রবিবার পল্টনে পিডিপির জনসভায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা গােলযােগ সৃষ্টি করিয়াছে বলিয়া পিডিপি প্রধান। জনাব নূরুল আমিনের উত্থাপিত অভিযােগ অস্বীকার করিয়াছেন। গতকাল সােমবার সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে জনাব নূরুল আমিনের অভিযােগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার পরিচায়ক” বলিয়া আখ্যায়িত করিয়া জনাব তাজউদ্দিন বলেন যে, নিজেদের দোষ-ত্রুটি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যে কোন অজুহাতে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে সব দোষ চাপাইয়া দেওয়ার প্রবণতা একশ্রেণীর স্বঘােষিত নেতার ফ্যাশনে পরিণত হইয়াছে। দৃঢ়তার সঙ্গে জনাব নূরুল আমিনের ভিত্তিহীন, হাস্যকর ও অপবাদসূচক” অভিযােগ অস্বীকার করিয়া আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, গােয়েবলসীয় কায়দায় এহেন মিথ্যা প্রচারের অবশ্যই অবসান ঘটাইতে হইবে। যাহারাই আয়ােজন করুক না কেন, সকল জনসভায় পূর্ণ শান্তি বজায় রাখার জন্য জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানাইয়া জনাব তাজউদ্দিন যে সব দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য জনগণ চরম ত্যাগ করিয়াছে, সে সব দাবির প্রশ্নে জনসাধারণের কোমল অনুভূতিতে আঘাত না হানার জন্য বক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ইতােমধ্যেই কোন পরিস্থিতিতেই প্ররােচনার মুখেও অধৈর্য না হইয়া শান্তি ও শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাইয়াছেন।
বিবৃতিতে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আরও বলেন যে, সহনশীলতা এবং পরমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোেধ গণতন্ত্রের অপরিহার্য বিধান। আওয়ামী লীগ দেশে নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং এজন্য এই দলের নেতা ও কর্মীরা অসীম ত্যাগ তিতিক্ষা বরণ করিয়াছেন। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি বিশেষ উপায় হিসাবে সাধারণ নির্বাচনের যে সুয়ােগ আসিয়াছে গােলযােগের মাধ্যমে উহা বানচাল হউক আওয়ামী লীগ তা চাহিতে পারে না। যে সব মহল হইতেই গুন্ডামির আশ্রয় নেওয়া হইবে। আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠতার সঙ্গে উহার বিরােধিতা করিবে। জনাব তাজউদ্দিন বিবৃতিতে সকলের ঘৃণ্য বিষয় নাড়া চাড়া করিয়া জনগণকে উস্কানি প্রদান হইতে বিরত থাকার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। প্রসঙ্গক্রমে তিনি সকলকে স্মরণ করাইয়া দেন যে, ১৯৪০ সালের দিকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা যখন অবিভক্ত ভারতের মুসলমানদের কাছে জীবন-মরণের প্রশ্ন সেই সময় কতিপয় অত্যন্ত খ্যাতনামা মুসলিম ব্যক্তিত্ব সাধারণ মুসলমানদের মতামতের তােয়াক্কা না করিয়া ভিন্ন মত প্রচার করিতে চাহিয়াছিলেন। ফলে তখনকার মুসলমানদের সভা সমাবেশে উল্লিখিত ব্যক্তিদের কি ভাগ্য বরণ করিতে হইয়াছিল, দেশবাসীর তা বিস্মৃত না হওয়ারই কথা। আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে ১১-দফা ও। ৬-দফা বিরােধী মনােভাব প্রকাশের ফলে কতিপয় নেতা কি ধরনের “অভ্যর্থনা” লাভ করিয়াছিলেন উহাও এত সহজে ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি