You dont have javascript enabled! Please enable it! ভাষা শহীদের জীবন ও কর্ম- শহীদ সফিউর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

ভাষা শহীদের জীবন ও কর্ম-
শহীদ সফিউর রহমান

গত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শুধু ছাত্রদের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়ে উঠেনি, ও নরমেধ যজ্ঞে আত্মাহুতি দিয়াছেন কয়েকজন নিরীহ অফিস কর্মচারীও। মাে: সফিউর রহমান তাদের অন্যতম। ঢাকা হাইকোর্টে কেরানীগিরি করাই ছিল তার পেশা। কিন্তু ছাত্রগণের আহ্বানে মাতৃভাষার দাবিতে চাকরির মােহ ছিন্ন করে তিনি নেমে এসেছিলেন রাজপথে সরকারের ফ্যাসিস্ট নীতির বিরুদ্ধে দাবি জানাতে। আর তারই জন্য পিছনে এক বিরাট পরিবার রেখে হতে হলাে গুলিবিদ্ধ। দেশকে ভালােবাসাই পাপ!
শহীদ সফিউর রহমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার অন্তর্গত কুননগর গ্রামে। ১৯১৮ খ্রি-২৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মৌলভী মাহবুবুর রহমান। কলকাতার গভর্নমেন্ট বাসারসিয়াল কলেজ হতে পাস করেন পরে দারিদ্র্যের কারণে তিনি চাকরি গ্রহণ করতে বাধ্য হন। কিছুদিন চাকরি করার পরেই দেশ হলাে বিভক্ত। তিনি তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী আমিনা খাতুন ও পরিবারের অন্যান্যসহ পাকিস্তানে অপশান করলেন। দেশে যে সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ছিল তার মায়া কেটে তারা এলেন পাকিস্তানে, যেখানে হিন্দুর ভয় নেই। অত্যাচারের আশঙ্কা নেই। কিন্তু নিষ্ঠুর লীগ সরকারের পুলিশ তাদের রেহাই দেয়নি। ২১ শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ১৯৫২ সন। রাজপথে পুলিশ ও মিলিটারি টহল দিচ্ছিল প্রশস্ত রাজপথ নবাবপুর লােকে লােকাকীর্ণ। দেশপ্রেমিক সফিউর রহমান যাচ্ছিলেন সেই সেনাবাহিনীর মধ্য দিয়ে একটা সাইকেলে চড়ে হাইকোর্টের দিকে। বেলা তখন সাড়ে ১০টা। বিপুল জনতা সমবেত হয়েছে রথখােলার কাছে। বীর সফিউর রহমান কোনােদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই যাচ্ছিলেন, মনে তার আগুন। হঠাৎ একটা রাইফেলের গুলি তার পৃষ্ঠদেশ ভেদ করে চলে গেল। তিনি কিছুই স্থির করতে পারলেন না। পড়ে গেলেন মাটিতে। পিচঢালা রাজপথ হলাে রঞ্জিত। ধূলিমলিন নবাবপুর হলাে পবিত্র। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স এল। তুলে নিল আহত বীরকে মেডিকেল হাসপাতালে। অপারেশন সেখানে করলেন তাকে মেজর এলিনসন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তাকে রক্ষা করা গেল না। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় তার পবিত্র আত্মা চলে গেল অসীমের সন্ধানে দূর দেশে। পরদিন তাকে আজিমপুর গােরস্থানে দেওয়া হলাে কবর। শেষ হলাে এমনিভাবে একটি নিরীহ কেরানীর জীবন। হাহাকার উঠল সারা পরিবারে। গর্ভবতী স্ত্রী ছুটে এলেন চোখভরা অশ্রু নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ৬০ বৎসরের বৃদ্ধ পিতার হৃদয় গেল ভেঙে। ৫২ বৎসরের বৃদ্ধা মা পুত্র শােকে হলেন উন্মাদিনী। পাঁচ বৎসরের মেয়ে সাহনেওয়াজ হলাে অকালে পিতৃহারা, ভাইরা হলাে পাগল। আজও ভ্রাতৃশােকে এক ভাই সাইদুর রহমান পাগল হয়ে ঘুরছে রাস্তায়। মৃত্যুর তিন মাস পর আমিনা যে পুত্র সন্তানটি প্রসব করেছেন তার আগ চলে না পথে। এখনও শহিদ সফিউর রহমানের ২২ দিনের বেতন সরকারের কাছে বাকি। আর অন্য দিকে তার ১৯ বৎসরের বিধবা স্ত্রী দুটি নাবালক শিশুকে নিয়ে তিলে তিলে মরণের পথে যাচ্ছেন এগিয়ে। সরকার কি এদের কোন তত্ত্বাবধান নেবার প্রয়ােজন অনুভব করেন না? গুলি করে হত্যা করেছে যার স্বামীকে সেই স্বামীহারা পত্নী কি সরকারকে ক্ষমা করবে? তাদের অভিশাপে দীর্ঘশ্বাসে কপূরের মত উড়ে যাবে ও লীগ শাহী সাদ্দামী শাসন।

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও দলিল – সাহিদা বেগম