You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.17 | পাকিস্তানের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিবাদ | ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিবাদ দৈনিক যুগান্তর ১৭ এপ্রিল ১৯৭১

Aparajita Neel

ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রাচার চালিয়ে গণহত্যার বর্বরতা ঢাকা যাবেনা

পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবাদ

(দিল্লী অফিস থেকে)

১৬ এপ্রিল – বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারত কোন না কোনোভাবে জড়িত আছে বলে পাকিস্তানী জঙ্গীশাহি ভারতের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারত আজ তাঁর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারত সরকারের এই প্রতিবাদ একটি বিবৃতির আকারে আজ পররাষ্ট্র দপ্তরের জনৈক মুখপাত্র বিশ্বের সাংবাদিকদের কাছে পেশ করেন।

উক্ত মুখপাত্র প্রসঙ্গত বলেন যে, ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও প্রচার চালিয়ে পাক জঙ্গীশাহি বাংলাদেশে যে বর্বর ও অমানুষিক গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে তা কিছুতেই ঢাকতে পারবে না।

কেউ কেউ এই প্রতিবেদক কে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পূর্ব সূচনা বলে মনে করছেন। একজন বিদেশী সাংবাদিক এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সরকারী মুখপাত্রটি এর সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে বলেন, যখন যে অবস্থা দেখা যাবে তখন তাঁর সেইভাবে মোকাবিলা হবে। এই হল ভারত সরকারের নীতি।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রটি আরও বলেন যে, পাক জঙ্গীশাহী বাংলাদেশে যে মধ্যযুগীয় পৈশাচিক হত্যালীলা চালাচ্ছে তা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার জন্যই ভারতের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা প্রচারে নেমেছে। কিন্তু বিশ্বের নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের অনেকেই পাক বর্বরতা স্বচক্ষে দেখেছেন। কাজেই পাকিস্তান যতই চেষ্টা করুক তাঁর পক্ষে এই নিদারুণ নির্মম সত্য চাপা দেওয়া সম্ভব হবেনা। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন যে, ভারতের বিরুদ্ধে দেশ বিদেশে যতই অপপ্রচার ও বিষোদগার করা হোক না কেন ইসলামাবাদের জঙ্গী শাসক চক্র কিছুতেই এই অকাট্য ও প্রত্যক্ষ সত্য চাপা দিতে পারবেনা যে, পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও নিপীড়নের নাগপাশ ছিন্ন করার জন্য বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন।

 

স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের এই বিবৃতিতে কেউ কেউ বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দানের পূর্ব সূচনা বলে মনে করছেন। জনৈক বিদেশী সাংবাদিক এ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে সরকারী মুখপাত্রটি তাঁর সরাসরি উত্তর না দিয়ে কেবল বলেন, সরকার অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নেবেন। তাঁর এই মন্তব্য থেকে এই কথাই মনে হয় যে, বাংলাদেশ সরকার হয়ত এখন সরকারিভাবে স্বীকৃতির জন্য অনুরোধ জানান নি। অথবা এমনও হতে পারে যে, ভারত সরকার এখনো এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেননি।

বাংলাদেশ সরকারের দুজন দূত ইউরোপে রওনা হয়ে গেছেন বলে ভারত সরকার কোন খবর রাখেন কি – জনৈক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্রটি বলেন, ‘কাগজে পড়েছি’। সরকারী মুখপাত্রের এই ধরণের কাটা কাটা উক্তি থেকে মনে হয় সরকার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এখন সতর্কতা অবলম্বন করে চলছেন।

সম্প্রতি পাকিস্তানী বাহিনী ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েকজন সীমান্ত রক্ষী ও অসামরিক নাগরিকদের ধরে নিয়ে গেছে। ভারতীয় এলাকা থেকে সীমান্ত রক্ষী ও নাগরিকদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়ার পেছনে পাকিস্তানের একটা গুঢ চক্রান্ত থাকাও বিচিত্র নয়। হয়ত পাকিস্তান পরে এটাই প্রমাণ করতে চাইবে যে ভারত সরকার এদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সামিল হয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ভারত অংকুরেই পাকিস্তানের এই দুরভিসন্ধি ফাঁস করে দিতে চান এবং সেই জন্যই এই প্রতিবাদ। পাকিস্তানের অপপ্রচার ক্রমশ এমন একটা স্তরে পৌঁছেছে যে, এর প্রতিবাদ না করলে তা যে অংশত সত্য এ কথাই মনে হবে। তাই বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত সরকারের প্রকৃত নীতি কি তা সকলকে জানানোর জন্যই ভারত পাক অপপ্রচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।