You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.30 | ১৩ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শুক্রবার, ৩০ জুলাই ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৩ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শুক্রবার, ৩০ জুলাই ১৯৭১

-এদিন রাত ৩-৩০ মিঃ জেড ফোর্সের ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অকুতোভয় বীর মুক্তি বাহিনীর সৈনিকগণ ময়মনসিংহের কামালপুর বিওপির পাকসেনারা উপর আক্রমণ করেন। মুক্তিবাহিনী ৩০ জন শহীদ জন। ৬৬ জন আহত হয়। শত্রুদের লাশ তিনটি ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যায়। পরদিন হেলিওকাপ্টারে পাকবাহিনীর উচ্চ পদস্থ অফিসাররা সম্ভবতঃ জিওসি কামালপুর পরিদর্শন করে। উল্লেখ্য, ঐদিন রেডিও পাকিস্তানে কামালপুরে যুদ্ধের ভয়াহয় বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়। প্রায় ৪০০ দুস্কৃতকারী নিহত হয়েছে। এত বড় সংখ্যক দুস্কৃতকারী নিহত হওয়ার সংবাদ ইতিপূর্বে রেডিও পাক ঢাকা কেন্দ্র বলেনি। (১০ খঃ পৃঃ ৬৮৯)

-জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সম্পর্কিত হাই কমিশনারের বিশেষ প্রতিনিধি মিঃ ডি আর কেলী বৃহস্পতিবার পাকপররাষ্ট্র সচিবের সাথে  সাক্ষাৎ করেন। শরণার্থীদের দেশের প্রত্যাবর্তন ও তাঁদের  পুনর্বাসনের ব্যাপার পাকিস্তান সরকার তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। (দৈঃ পাঃ)

-ঢাকার এক নম্বর সামরিক আদালত বিশিষ্ট চলচ্চিত্র শিল্পী (চিত্রনায়িকা) কবরী চৌধুরী ও কন্ঠশিল্পী আবদুল জাব্বারকে ১৩ আগষ্টের মধ্যে এবং ছাত্রনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা মহসীন মন্টু, কামরুল আনাম খান খুসরু ও আবদুল গনি মনুকে ১৬ আগষ্টের মধ্যে আদালতের সামনে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপস্থিত না হলে তাঁদের অনুপস্থিতিতেই বিচার অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।

-করাচীতে মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) সেক্রেটারী জেনারেল খান আব্দুস সবুর বলেন, উপনির্বাচন সুষ্ঠ হলে পি এম এল-এর উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। (দৈঃ পাঃ)

-জেড ফোর্সের ৩য় ঈষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর শাফায়াত জামিলের বাহিনী এদিন দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরবাদ ঘাট এবং মুক্তিবাহিনী দেওয়ানগঞ্জ বাজার আক্রমণ করেন। দেওয়ানগঞ্জ বাজার, সুগার মিল ও রাজাকার হেডকোয়াটারস পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণরূপে তছনছ করে। এই সফলতার পেছনে ছিল ধীশক্তি সম্পন্ন মেজর শাফায়ে জামিলের সুষ্ঠ পরিকল্পনয়া ও দক্ষ পরিচালনা। (১০ খঃ পৃঃ ৬৯০)

-আমেরিকার বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক “নিউজ উইক” ও লন্ডনের দৈনিক “ দি টাইমস” –এ পাকবাহিনীর মোকাবিলা মুক্তিবাহিনীর সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনার খবর প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি ইয়াহিয়া খান বলেছেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীনে এবং দুস্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূল করা হয়েছে। যে প্রসঙ্গে ‘নিউজ উইক’ দি বেঙ্গলিস ষ্ট্রাইক ব্যাক’ শিরোনামে মন্তব্য করেছেন, ইয়াহিয়ার জনযে দুঃখ হয়, কেননা তিনি যা দাবি করেছে প্রকৃত ঘটনা তাঁর সম্পূর্ণ বিপরীত’ বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ অভিযান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

-সামরিক আদালত মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণকারী ১৩ জন তরুণকে আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেন। আদেশে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির না হলে অনুপস্থিতিতেই তাঁদের বিচার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এরা হচ্ছেন মোহাম্মদ ইদ্রিস (চাঁদপুর), আবদুল ওহাব (দাউদকান্দি) আব্দুর রহমান (বেগমগঞ্জ), ভুলু (সেনাবাগ), মজিবুর রহমান (দেবিদার), কালু গাজী, নবী শফি, কাফী , সাদি , মান্নান, খালেক ও শরাফত (সবাই ঢাকার রায়পুরার বাসিন্দা)   

লণ্ডন টাইমসের রিপোর্টার মাইকেল হনসবী জানান যে, অবরুদ্ধ বাংলাদেশে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী অহরহ মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের দ্বারা আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা সড়কসেতু, রেলসেতু, রেললাইন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে পাকিস্তানী সামরিক প্রশাসনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

  “পূর্ব বংগে গণহত্যা” শীর্ষক অর্ধ-পৃষ্ঠাব্যাপী একটি বিজ্ঞাপন ৩০ শে জুলাই তারিখে “দি গার্ডিয়ান” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ঢাকা শহরের রাস্তায় পরিত্যক্ত তিনজন তরুণের মৃতদেহের একটি ছবির নিচে লেখা রয়েছে, এই ছবিটি আপনার ছেলে-মেয়েদের দেখান এবং তাঁদের সংগে নিয়ে জনসমাবেশে যোগ দিন। এ্যকশান বাংলাদেশের উদ্যোগে প্রকাশিত এই বিজ্ঞাপনে বিচারপতি আবুসাঈদ চৌধুরী ও অন্যান্য বক্তাদের নাম এবং বার্মিংহাম, ব্রাডফোর্ড, কেম্ব্রিজ, কার্ডিফ, কভেনট্রি গলাসগো লীডস, লিভারপুল, লুটন, ম্যাঞ্চেষ্টার, পোটসমাথ ও শেফিল্ড থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য টেলিফোন নম্বর উল্লেখ করা হয়। যারা গণসমাবেশে যোগ দিতে অক্ষম তাঁদের নিকট বাংলাদেশ আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ সাহায্যের আবেদন জানান হয়। (স্বাঃ সং প্রঃ বাঃ পৃঃ ৯৮)

তুরস্কের সংসদীয় নেতা মিঃ গুলেক (Gulek) ঢাকা সফর শেষে টিভি রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারত-পাকিস্তানী নাগরিকদের দেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে এবং জাতিসংঘ পরিদর্শকদের সীমান্তে অবস্থান নেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করছে না।

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী