You dont have javascript enabled! Please enable it! পার্বতীপুর আক্রমণ - দিনাজপুর স্কুলপাড়ার অ্যামবুশ - আটপুকুর আক্রমণ - সংগ্রামের নোটবুক
পার্বতীপুর আক্রমণ
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানা সদরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে রেললাইনের মাধ্যমে তাদের সবকিছুই পরিবহণ করা। হতাে। সুতরাং, এ রেললাইনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু রক্ষার্থে শত্রুরা। পাহারা দিত। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্যাপটেন খালেদ তার দলবল নিয়ে ফিরে যাওয়ার পর অধিনায়ক এ টি এম হামিদুল হােসেন তারেক পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরের মাঝামাঝি রেলসেতুটি উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা। গ্রহণ করেন। সেতুটি উড়িয়ে দিতে পারলে পার্বতীপুর অস্থায়ী ক্যাম্পে ঝটিকা। আক্রমণ করা সহজ হবে। কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা সম্ভব হয় নি। সেতুর উপর ১ প্লাটুন পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকার বাংকার করে প্রতিরক্ষা । অবস্থান নিয়েছে। অধিনায়ক পরিকল্পনা করলেন যে, দূর থেকে ২ ইঞ্চি মর্টার ও এসএমজি’র হ্যারাসিং ফায়ার দিয়ে কেটে পড়বেন। পরিকল্পনা মােতাবেক সে  রাতে সেতুটির পাশের গ্রামে গেলেন তিনি। অধিনায়ক তারেক আর আবু এক। বাড়িতে আর শাহনাজ ও অন্য ৪জন মুক্তিযােদ্ধা রইলেন রাস্তার অপর পাশের এক বাড়িতে। বাড়ির লােকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর তারা শুয়ে পড়েন। এবং ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে যান।
ইতােমধ্যে সকালের রােদে ঝলমল করছে গােটা এলাকা। বাইরে এসে মুক্তিযােদ্ধারা দেখতে পেলেন, লােকজন দৌড়ে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। গ্রামের একজন বলল, পাশের গ্রামে শত্রু এসেছে, রাস্তা ধরে ওরা এদিকে আসছে। যে বাড়িতে মুক্তিযােদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিলেন সে বাড়ির সামনে ধান মাড়ানাের খোলা মাঠ। মাঠের ৩০-৪০ গজ দূরেই একটা আখক্ষেত। দৌড়ে আখক্ষেতের ভিতরে গেলেন সবাই। ওখানে এসএলআর হাতে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা। বসে রইলেন। রাস্তা ও মাঠে কেউ এলেই দেখতে পাবে, কারণ রাস্তাটা বাড়ির পিছন হয়ে মাঠের পাশ দিয়ে চলে গেছে। সামনের গ্রাম থেকে যুবক, যুবতী, ছেলেমেয়েরা দৌড়ে রাস্তা ধরে পিছনে পালাচ্ছে। বেশ কয়েক মিনিট পার হয়ে যায়। এখন আর রাস্তা দিয়ে লােকজন দৌড়ে যাচ্ছে না। তবে গুলির আওয়াজ আসছে সামনের দিক থেকে। হঠাৎ একটা মেয়েকে দৌড়ে আসতে দেখা যায়, তার পিছনে ধাওয়া করছে ২জন পাকিস্তানি সৈন্য। মেয়েটি রাস্তা ছেড়ে মুক্তিযােদ্ধারা যে বাড়িতে ছিলেন, মাঠের ভিতর দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে, কিন্তু তার আগেই ১জন পাকিস্তানি সৈন্য মেয়েটিকে ধরে মাটিতে ফেলে দিল। মাটিতে পড়ে মেয়েটা আর্তনাদ করে হাত-পা ছুড়ছে। আর শত্রু উপুড় হয়ে ওকে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করছে। ৫ হাত পিছনেই ১জন সৈন্য দাড়িয়ে হাসছে। পুরাে ঘটনাটা ঘটেছে চোখের সামনেই, আখক্ষেত থেকে মাত্র ৩০ গজ দূরেই। এসএলআরটি তুলে দাঁড়ানাে পাকিস্তানি সৈন্যকে লক্ষ্য করে। গুলি ছুড়লেন অধিনায়ক।
গুলির ধাক্কা খেয়ে সে একটু পিছিয়ে গেলাে। এর মধ্যে এসএলআর থেকে পর পর ২ বার গুলি বের হলাে, পড়ে গেল সৈন্যটি গুলির শব্দ ও সঙ্গীর অবস্থা দেখে অন্যজন মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে চট করে উঠে দাঁড়ায় আর মেয়েটি দৌড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আখক্ষেত থেকে উঠে মুক্তিযােদ্ধা তারেক গেলেন মৃত পাকিস্তানি সৈন্যর কাছে। যাকে গুলি করেছিলেন সে ১জন হাবিলদার। তার চাইনিজ এসএমজি, ম্যাগাজিনসহ বান্ডােলিয়ার এবং চাইনিজ রাইফেল তুলে নেয়া হয়। হঠাৎ বাম পাশ থেকে শক্রর এক ঝাঁক গুলি এল মুক্তিযােদ্ধাদের দিকে। তারেক পালাতে লাগলেন আখক্ষেতের দিকে। কিন্তু আখক্ষেতের ৫ গজ দূরেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন তিনি। মনে হলাে, ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি লেগেছে। বাঁশঝাড়ের ভিতর থেকে গুলি আসছে। ঝাকে ঝাকে গুলি আসতে থাকে। ঠিক এ মুহূর্তেই ডান পাশের গ্রামের যেখানে শাহনাজ ছিলেন, ওখান থেকে এলএমজি ও এসএলআর-এর গুলি বাঁশঝাড় লক্ষ্য করে ছুটে যায়। বােঝা গেল যে, শাহনাজ শক্রর অবস্থান দেখে ফেলেছেন। পুরােপুরি অ্যাকশনে নেমেছেন তিনি। ২ ইঞ্চি মর্টার ফায়ার করা হলাে বাঁশঝাড় লক্ষ্য করে। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল গােটা এলাকা। শাহনাজ মটার ফায়ার করছেন এবং পুরােদমে গুলি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুই দেখতে পারলেন না। কারণ, বাড়িটি আড়াল করে রেখেছে বাঁশঝাড়কে। কয়েক মিনিট পর গােলাগুলি বন্ধ হয়ে গেলে বাঁশঝাড়ের ওদিক থেকে একটা ছেলে দৌড়ে এসে চিল্কার করে বলে, “শত্রু পালিয়ে গেছে।” তারেক প্যান্টটা হাঁটুর উপর তুলে ফেলতেই দেখলেন, হাঁটুর ঠিক নিচে পায়ের মাংসে গুলি লেগেছে। দরদর করে রক্ত ঝরছে, পা চুইয়ে চুইয়ে রক্ত রাস্তায় বালি ভিজিয়ে দিয়েছে। আস্তে আস্তে রক্ত শুষে নিচ্ছে ব্লটিং পেপারের মতাে। ইতােমধ্যে গ্রামের ২-৪জন তার পাশে জড়াে হলাে। তারা বলল, “আপনারা তাড়াতাড়ি চলে যান। ওরা ওদের লাশ নিতে আসবে দলবল নিয়ে, প্রতিশােধের জন্য এ গ্রাম পুড়িয়ে দেবে।” কথাটা ঠিক। শাহনাজ বললেন, হাঁটতে পারবেন তারেক ভাই? উঠে দাঁড়ালেন তারেক। গামছা দিয়ে ক্ষতস্থান বাধায় ব্যথা কমে এসেছে। রক্ত পড়াও বন্ধ হয়েছে। কে যেন বলল, এখান। 
থেকে আধা মাইল পিছনেই একটা খাল আছে। ওদের নৌকা আছে। আপনারা নৌকা নিয়ে তাড়াতাড়ি দূরে সরে পড়েন। এবার মেয়েটি বললেন, “আপনে আমার সাথে নৌকায় করে আমাদের বাড়ি চলেন ভাই। এখান থেকে নৌকায় ৪ মাইল দূরেই আমাদের বাড়ি। আমার চাচা ডাক্তার, আপনার চিকিৎসা করতে পারবেন।” সবাই একমত হলেন। শাহনাজ বললেন, “তুমি আর আবু চলে যাও। আমি খালের উপর পজিশন নিয়ে থাকবাে। শত্রু এসে পড়লে আমরা বাধা দেব, যাতে তােমাদের ধরতে না পারে। মেয়েটিকে তিনি বললেন, “আপনার বাড়ি কোন গ্রামে?”মেয়েটি বললেন, “বশীর সাহেবের বাড়ি বললেই সবাই আপনাকে দেখিয়ে দেবে।” ২জন যুবক তারেককে কাঁধে তুললেন। ওদের কাঁধে ভর দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘাটে পৌছে গেলেন। তারেককে ধরাধরি করে চেয়ারে বসানাে হলাে। মেয়েটি ওর বাবা ও চাচার সঙ্গে পরিচয়। করে দিলেন। ডাক্তার ব্যাগ নিয়ে এলেন। গামছা খুলে ফেলে পায়ের ক্ষতটা পরীক্ষা করলেন। ক্ষতটা ধুয়ে ভালাে করে পরীক্ষা করে বললেন, খুব বাচা বেঁচে গেছেন, গুলিটা হাড়ে লাগে নি। হাঁটুর মাংসকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেছে। ভয়ের কোনাে কারণ নেই। তাড়াতাড়ি সেরে উঠবেন। তিনি প্রয়ােজনীয় ওষুধ আর ইঞ্জেকশন দিয়ে ভালােভাবে ক্ষতটা ব্যান্ডেজ করে দিলেন। ফিরে এলেন শাহনাজরা। জানা যায় যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা এসেছিল ঘণ্টা।
তিনেক পরেই  ওদের লাশ ২টি নিয়ে গেছে, তবে পুরাে গ্রাম এবং আশপাশের আরও ২-৩টি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। লােকজন মারতে পারে নি, গ্রাম ছেড়ে সবাই দূরদূরান্তে চলে গেছে। শাহনাজ বললেন, “তারেক ভাই, যতদিন পুরােপুরি ভালাে হয়ে না ওঠেন, এখানেই থাকবেন। আবু সঙ্গে থাকবে। আমরা আশপাশের গ্রামেই থাকব। শত্রুর গতিবিধির সংবাদ জানিয়ে দেব, যাতে করে আপনার খোঁজ না পায়।” দলের সবাই কিছুক্ষণের জন্য অধিনায়ক তারেকের সাথে কথাবার্তা বললেন। তারপর মিলিয়ে গেলেন অন্ধকারে। এ যুদ্ধে ১জন শত্ৰু নিহত হয়। ১টি চাইনিজ এসএমজি ও গুলি উদ্ধার করা হয় এবং ১জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। 
দিনাজপুর স্কুলপাড়ার অ্যামবুশ
দিনাজপুর জেলা সদরে স্কুলপাড়ার অবস্থান। দিনাজপুর শহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গাড়ির কনভয় নিয়ে প্রায়ই টহল দিত। গােপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপটেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সৈন্যদের কনভয়ের উপর স্কুলপাড়ায় অ্যামবুশের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্যাপটেন ইদ্রিস আকস্মিকভাবে প্রাপ্ত গােপন তথ্যের ভিত্তিতে তার দল নিয়ে ধেয়ে চললেন, হাতে তাদের .৩০৩ রাইফেল আর ২টি এলএমজি। পাকিস্তানি সৈন্যরা সেদিন দিনাজপুর শহর থেকে স্কুলপাড়া হয়ে বর্ডার সাইডে আসছিল। শত্রু পৌছানাের আগেই সে স্থানে পৌছে গেলেন ক্যাপটেন ইদ্রিস। বিকাল ৩টার দিকে শক্রর ট্রাকের আওয়াজ পাওয়া গেল। দিনাজপুরের স্কুলপাড়ার রাস্তার পাশে, ঝােপঝাড়ে, গাছের ফাঁকে, আমগাছের উপর, বাঁশঝাড়ের ফাকে প্রস্তুত লেফটেন্যান্ট সাইদুল্লাহ, লেফটেন্যান্ট কায়সার, সুবেদার এস এ রহমান, সুবেদার ইয়াসিন, হাবিলদার হাসান, হাবিলদার আজিজ, প্লাটুন অধিনায়ক দেলােয়ার হােসেন, মুক্তিযােদ্ধা বাবুল, আব্দুল লতিফ, আব্দুর রাজ্জাক, নূর মােহাম্মদসহ ১৫০জন মুক্তিযােদ্ধা। শত্রুর ট্রাক ২টি এগিয়ে আসছে স্কুলপাড়ার সন্নিকটে। ক্যাপটেন ইদ্রিস পর পর ২টি শিস দিলেন। ফায়ারিংয়ের সংকেত আসবে শুধু ১টি শিস। সবাই .৩০৩-এর ট্রিগারে আঙুল রেখে প্রস্তুত, দম ধরে মুক্তিযােদ্ধারা গুণে যাচ্ছেন প্রতিটি সেকেন্ড। মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশের ভিতরে ঢুকছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ট্রাক। ট্রাকের উপর ২০-৩০জন সৈন্য, হাতে তাদের চাইনিজ অস্ত্র ট্রাকের উপর এলএমজি ধরে দাঁড়িয়ে আছে ২জন সৈন্য, সামনের ট্রাক অ্যামবুশ পার হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ক্যাপটেন ইদ্রিস সংকেত দিচ্ছেন না। সবাই হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন, কী হচ্ছে। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য তখন পিছনে। পিছনে আরও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত আরেকটি ট্রাক ঢুকছে। সেটাকে অ্যামবুশের মধ্যে না এনে তিনি সামনের ট্রাকে ফায়ার ওপেন করার নির্দেশ দিতে পারেন না।
পিছনের ট্রাক প্রায় ১৫০ গজ ব্যবধানে অ্যামবুশ এলাকায় ১ ইঞ্চি ঢোকা মাত্র ক্যাপটেনের শিস, সাথে সাথে ফায়ার সম্পূর্ণ নিরাপদে দাঁড়িয়ে অকস্মাৎ বজ্রপাতের মতাে ঝাপিয়ে পড়লেন মুক্তিযােদ্ধারা। পিছনের ট্রাক সামনের ট্রাক, দুই ট্রাকের উপরেই চলছে বৃষ্টির মতাে .৩০৩ আর এলএমজি’র ফায়ার । ৩২জন শক্রর ছিন্নভিন্ন দেহ সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। কোনােটা ট্রাকের উপর, কোনােটা রাস্তার পাশে। কিন্তু সামনের ট্রাককে ততখানি কাবু করা গেলাে না। মাত্র ২টি মৃতদেহ ফেলে রেখে ট্রাকটি পালিয়ে যায়। যদিও ট্রাকটি পালানাের আগেই গাছের উপর থেকে মুক্তিযােদ্ধারা ফায়ার করে কয়েকজনকে আহত ও নিহত করে। ৩ অক্টোবরের সাফল্যের পর ক্যাপটেন ইদ্রিস অ্যামবুশে শত্রুকে হত্যা করার পরিকল্পনা বৃদ্ধি করেন এবং এভাবে বহু শত্ৰু ঐ সেক্টরে হতাহত হতে থাকে এবং গেরিলা যুদ্ধের এ কৌশলের ও সাফল্যের বিষয়ে সব সেক্টরে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সব স্থানে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি হতে থাকে। ৪ অক্টোবর আম, জাম ও বাশঝাড়ে ঢাকা স্কুলপাড়া দেখতে যায় হামজাপুরের। মুক্তিযােদ্ধারা। শত্রুকে চরমভাবে পরাজিত করে মুক্তিযােদ্ধারা যাত্রা করেন সামনের দিকে। ১৪ ডিসেম্বরের যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহর এক হাতের কাধের নিচ থেকে মাংস উড়ে যায় শত্রুর ফায়ারে। দিনাজপুরের রণাঙ্গনে যে যােদ্ধা বহুবার পাঞ্জা লড়েছেন শত্রুর সাথে, বিজয়ের ২ দিন আগে তিনি আহত হন। ক্যাপটেন ইদ্রিসও আহত হন অন্য যুদ্ধে। এভাবে মুক্তিযােদ্ধারা আত্মদান ও রক্তদানের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধকে টেনে নিয়ে যান চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে। এ অ্যামবুশে মােট ৩৪জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং বহু আহত হয়। গােলাবারুদ, কয়েকটি এলএমজি, ২ ইঞ্চি মর্টার ও চাইনিজ অটোম্যাটিক রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
আটপুকুর আক্রমণ
দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি থানার অন্তর্গত আটপুকুর নামক স্থানে পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্প ছিল। ভারতের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের আটপুকুর অবস্থানের উপর একটি আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।  ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে ইপিআর ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে আটপুকুর পাকিস্তানি সেনাক্যাম্প আক্রমণ করা হয়। আটপুকুর যুদ্ধে ইপিআর-এর নায়েব সুবেদার মাে. আনােয়ার হােসেন নেতৃত্ব প্রদান করেন। তার সাথে ইপিআর-এর ১০জন সদস্যসহ মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে শত্রু চিন্তামন থেকে অগ্রসর হয়ে পার্শ্ববর্তী রামচন্দ্রপুর গ্রামে অপারেশন করে গােপন সংবাদের ভিত্তিতে মুক্তিবাহিনীর নিমলিখিত ৭জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় এবং পরবর্তী সময় বন্দিদের হত্যা করে: ১. বাহার উদ্দীন, গ্রাম: ঝাঝিরা (মুজাহিদ সদস্য) ২. মুনছুর আলী, গ্রাম: কাশিরামপুর (আনসার) ৩. আবেদ আলী, গ্রাম: কাশিরামপুর (আনসার)। ৪. মফা, গ্রাম: রামচন্দ্রপুর। ৫. সুদ্দিন মােল্লা, গ্রাম: রামচন্দ্রপুর ৬. এবরা, গ্রাম: কাজিহাল (মুজাহিদ) ৭. আবদুল হাই, গ্রাম: চিরিরবন্দর। পরিকল্পনা মােতাবেক অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে প্রায় ১০০জন মুক্তিযােদ্ধা ও ইপিআর-এর ১টি দলকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয়। ইপিআর ও মুক্তিযােদ্ধাদের মিলিত এ দলটি একাধারে ৩ দিন যাবৎ শত্রুর আটপুকুর ঘাটিকে ঘেরাও করে চারদিক থেকে আক্রমণ চালাতে থাকে। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সৈন্যরা দিশাহারা হয়ে রাতের অন্ধকারে গােপনে ঘেরাওয়ের মধ্য থেকে চিন্তামন শত্রু ঘাটিতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে শত্রুর ২২জন সদস্য নিহত হয়। তা ছাড়া মুক্তিবাহিনীর নায়েক মাে. ইয়ার উদ্দীনসহ ১জন অজ্ঞাত নারী শহিদ হন।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – পঞ্চম খন্ড