You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.03 | দ্যা সানডে স্টার (ওয়াশিংটন) ৩রা অক্টোবর, ১৯৭১ ভারতে, তারা নিরাপদ এবং অবস্থা করছে , তারা কি থাকবে নাকি ফিরে যাবে - সংগ্রামের নোটবুক

দ্যা সানডে স্টার (ওয়াশিংটন) ৩রা অক্টোবর, ১৯৭১
ভারতে, তারা নিরাপদ এবং অবস্থা করছে , তারা কি থাকবে নাকি ফিরে যাবে
নিউ দিল্লী থেকে জন ই ফ্রেজার

পুর্ব পাকিস্তান থেকে ভীত সন্ত্রস্ত শরনার্থীদের প্রথম দলটি আসার ৬ মাস হয়ে গেছে। ছয় মাস পরে, মার্চে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলো, “‘তারা ফিরে যাবে, তারা অবশ্যই ফিরে যাবে””। কিন্ত বাস্তবতা এখন ভিন্ন। ৮৩ লক্ষ শরনার্থীদের মধ্যে প্রায় ১,৫০,০০০ জন ফিরে যাচ্ছে না, এবং তারা আরো ৬ মাস বা তারও পরে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

এমনকি, এখনো অনেকেই সড়ক এবং নদী পথ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে, যার বর্তমান সংখ্যা প্রতি দিন গড়ে ১৪ হাজার করে অব্যাহত আছে, ক্ষুদা, ভয়, এবং গেরিলা যুদ্ধের ভয়াবহতা তাদের এদিকে আসতে বাধ্য করছে।

স্পম্প্রতি, আমি ভারতের একটা উচু ভুমি থেকে পূর্ব পাকিস্তানের একটি ছোট নদীর দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম যে আরো নতুন একদল আসছে।

৩০০ গজের মতো দূরেও নয়, এমন জলাভুমি তে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম এক মাঝি একটি লম্বা দেশি নৌকা বেয়ে এদিকে আসছে। বিবর্ণ নৌকায় গাদাগাদি করে বসা এক হিন্দু পরিবার, যেখানে ১০-১২ জন মহীলা, বাচ্চা কাচ্চা, ২ জন পুরুষ লোক, একটি টিনের ট্রাংকে তাদের কাপড়, কিছু ঝুলন্ত তৈজসপত্র এবং জলাভুমির ভেতর দিয়ে পালিয়ে আসার কারনে মহীলাদের পরনের শাড়ি গুলো ছিল কোমর পর্যন্ত ভেজা।
শিক্ষা এবং পশ্চিম বঙ্গ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রয় কিছু দিন আগে কলকাতায় এক সাক্ষাৎকারে বলেন “আমরা একজন মানুষকেও রাখার কথা ভাবছি না”।

কিন্তু সবুজ ধানক্ষেতের পাশে খড়ের কুঁড়ে ঘরে অথবা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে পলিথিনে মোড়ানো তাঁবুতে বসবাসকারী সেই হিন্দু পরিবারেরা আর লাখ লাখ শরণার্থীরা অন্যভাবে চিন্তা করছে,তারা থেকে যাবে।

সেগুলো মোটেও আরামদায়ক ছিল না, তারা ক্যাম্পের মধ্যে সার্ডিন মাছের মত গাদাগাদি করে থাকতো আর স্বাস্থ্যব্যাবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। কিন্ত, খাওয়ার জন্য তাদের ( শুধুমাত্র প্রোটিনের দরকার এমন শিশু ও দাই মা ছাড়া) পর্যাপ্ত পরিমানের খাবার ছিলো, আসলে যা ৫০ লক্ষ ভারতীয়রা খায় এবং তারা নিরাপদ।

এই কারনেই তারা ভারতে থাকতে চায় এবং তারা এখানে নিরাপদ।

কিন্তু এমন অবস্থার মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৮৩ লক্ষ বহিরাগতদের আশ্রয় দেয়ার পরিনতি মোকাবেলা করার সাহস ভারতের নেই। শুধু একলাই এই অর্থ খরচের পরিমান ( এর কিছু অংশ জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উৎস থেকেও সংগৃহিত) মোটামুটি ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি যা ভারতের ১ বছরের সম্পদের ও বেশি ।

আর সরকার আক্রান্ত ৪ এলাকার পশ্চিম বঙ্গ,আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের সব জায়গায় কাজ করেছিলো, তা স্থগিত করে দেয়া হয়েছে।

“আমাদের ১৯৭১-৭২ সালের উন্নয়ন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি” – বললেন পশ্চিম বঙ্গ সরকারের প্রধান সচিব এন সি গুপ্ত। “সবাই এখন শরনার্থীদের নিয়ে কাজ করছে”

আজ হোক কাল হোক , ভারত কে একটা কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

প্রথমত পালিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে হবে, অনভিপ্রেত সত্য হচ্ছে এই যে, পাকিস্তান ভারতের প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষের উপর অত্যাচার করতে সক্ষম হয়েছে, যার শতকরা ৯০ জনই হচ্ছে হিন্দু, যাদের অনেকেই কোনদিন ফিরে যাবে না, অনেক বছর আগে ইউরোপের পোল এবং হোয়াইট রাশিয়ান দের সাথে যেমনটা হয়েছিলো, এরাও ভারতের ২৮ টি অংগরাজ্য ও সার্বভৌম ভুখন্ডের সাথে মিশে গেলেই ভালো হবে।

প্রকাশ্যে, ভারত এই সমস্যা সমাধান করতে রাজি নয়।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা, ভারত প্রচ্ছন্ন ভাবে মুক্তি বাহিনী কে সাহায্য করবে যাতে পূর্ব পাকিস্তানের পাকিস্তানী সেনাদের উৎখাত করে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করাএবং এটাই হবে শরনার্থীদের দ্রুত ফিরে যাবার পথ পরিষ্কার করা।

এবং জনসম্মুখে কেউ এটা বলে নাই যে এটাই ভারতের লক্ষ্য। যাই হোক, লক্ষন এমন নয় যে, ভারত এমন কোন সমাধানে আসবে।

এটা একটা ওপেন সিক্রেট যে, মুক্তি বাহিনীর জন্য অস্ত্র এবং প্রশিক্ষন ভারতের একটি অংশ থেকেই আসছে। নিউ দিল্লী তে ৩রা সেপ্টেম্বর প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন যে, কোন শক্তির পক্ষে বাংলাদেশের ( বাঙালি জাতির) এই আন্দোলন দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়/

এই মাসের প্রথম দিকে, এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর এবং বৈদেশিক নীতি মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রধান সচিব আর কে নেহেরু বলেছিলেন, “ব্যাক্তিগত কণ্ঠগুলো খুব জোরালো। বাংলাদেশের এই বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি আদর্শ সুযোগ এনে দিয়েছে পাকিস্তান কে আলাদা করে ফেলার।

স্বভাবতই যে, পাকিস্তান কখনোই এরকম বিকল্পের জন্য বসে থাকবে না, মুক্তি বাহিনীর প্রতিরোধ যত বাড়বে, তত বেশী ভিয়েতনামের মত গেরিলা যুদ্ধ হবার সম্ভাবনা তত বাড়বে আর ভারতে নিত্য নতুন শরনার্থী প্রবেশের সংখ্যাও বাড়বে।

সেখানে এখনো ৩য় একটি সম্ভাবনা ও আছে, আমি দেখতে পাচ্ছি একটি মীমাংসার মাধ্যমে সম্পূর্ন স্বাধীনতা প্রাপ্তির সংক্ষিপ্ত রুপ” দুই মাস পূর্বে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা একথা বলেন।

কখনো কখনো সম্ভবত বিশৃংখলার পূর্বে এমনটা হতে পারে। কিন্তু তারপরেও কি শরনার্থীরা ফিরে যাবে? এই বিষয়ে, কেউ কিছুই জানে না।