৬ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শুক্রবার, ২৩ জুলাই ১৯৭১
মুক্তিবাহিনী সারিয়াকান্দি (বগুড়া) গণকপাড়ায় পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সারাদিন সাররাত দু’দলের মধ্যে যুদ্ধ হয় কিন্তু মুক্তিবাহিনীর গুলি ফুরিয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী রক্ষা পায়। উল্লেখ্য, পরবর্তীকালে বহু নিরপরাধ শান্তি প্রিয় লোককে দালালরা অভিযোগ সৃষ্টি করে সামরিক আদালতে সোপর্দ করে। তাঁদের বহুজনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
-মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর ষ্ট্রুয়ার্ট সিমিংটন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে অস্ত্র প্রেরণ শুরু হয়েছে তা আইনসঙ্গতঅধিকার বলেই বন্ধ করা যেত। কিন্তু প্রশাসন ইচ্ছা করেই সে সিদ্ধান্ত নেননি। (সংবাদপত্র)
মুক্তিবাহিনী ক্রমবর্ধমান সাফাল্য বিদেশী সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশ পেতে থাকে।
Wall street journal লিখেছেঃ“ An Army rule is being challenged by Bengalis guerrilla forces (Mukti Bahini or Liberation Army) that seem to have massive support among the Bengali population.
-পশ্চিম জার্মানীর চ্যান্সেলর উইলী ব্রান্ট এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যের, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার শরণের সাথে আলাপ আলোচনার পর তিনি পূর্ব বাংলা সমস্যা সম্বন্ধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলের সাথে আলাপ করেছেন। এই আলোচনার ফলাফল এবং তাঁর নিজস্ব মত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাথেও তিনি যোগাযোগ করেছেন ও চিঠি লিখেছেন। তিনি এই সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন (বিডি-২ পৃঃ ৫১৫)
-জামাতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেনঃ বিগত নির্বাচনে যারা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন, তাদেরকেই শূন্য আসনগুলিতে নির্বাচিত ঘোষণা করা হোক। তিনি জামাতকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহতম দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং অবিলম্বে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ অভিযোগ শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান। (দৈঃপাঃ) উল্লেখ্য, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ২৮ জুন বক্তব্যের বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে জামাতে ইসলামী এধরনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। ১৯৭০ জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ৩১৩টি আসনের মধ্যে (সাধারণ আসন ৩০০+১৩ মহিলা) মাত্র ৪ টি আসন পশ্চিম পাকিস্তানে থেকে জামাতে ইসলামী পেয়েছিল। সমগ্র দেশের ভোট দাতার মাত্র ৬% ছয়ভাগ ভোট জামাতে ইসলামী পায়। পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে মাত্র একটি আসন পেয়েছিল। অন্য প্রস্তাব ‘দেশদ্রোহিতার অভিযোগ’ শেখ মুজিবের বিচার’ জেনারেল ইয়াহিয়া মেনে নিয়েছেলন আগষ্ট ১০ তারিখে বিচারের প্রহসন শুরু করে।
-বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পশ্চিম জার্মানীর ভুমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ৪ জুলাই কলকাতায় ডঃ সৈইন উইগজেন্ট্রীন এমপি, (Dr Sain- wihgenstrin, MP)
বলেন, শরণার্থীদের সাহায্য ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে পূর্ব বাংলার সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। জুলাই ৭ তারিখে পশ্চিম জার্মানী অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ইরহার্ড ইপ্পলার পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক সমাধান ও পাকিস্তান টাকার অবমূল্যায়ন সহ অন্যান্য বিষয়দি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে আর্থিক সহায়তা বন্ধ থাকার ঘোষণা দেন।
-পশ্চিম জার্মানীর গণমাধ্যমে বিশেষতঃ পত্র পত্রিকার সম্প্রতি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের রাজনৈতিক প্রস্তাবগুলির তীব্র সমালোচনা করা হয়। জুলাই ৮, পশ্চিম জার্মানীর প্রভাবশালী পত্রিকা দৈনিক “ Frank forter Allgemeine Leitung’ সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়ঃ The text of President Yahya khan’s most recent statement on the Situation in Pakistan holds out little hope for the country’s future. However it is not only the tone which gives rise to Pessimism, it is the Contents. Many of the Suggestions many be well meant, but they are completely unrealistic.”
-পশ্চিম জার্মানীর প্রভাবশালী সাপ্তাহিক Die zeit (জুলাই ২)মন্তব্য করেঃ “ Bengal is appeased with the aid of Allah and the Army (yahya khan.) However, it is well known that a deathly silence prevails there. Foreign Journalists, who are now allowed to visit East Pakistan again, confirm the story of the Pakistani journalist Anthony Mascarenhas in last week’s zeit under the heding genocide”
-পশ্চিম জার্মানীর দু’জন সংসদ সদস্য Mr. Role Meineeke and Prince Botho সম্প্রতি সফর শেষে (জুলাই ৭) বলেছেন, Political solution in East Bengal is an in dispensable prerequisite for a return of the refugees now in India.”
-পশ্চিম জার্মানীর চ্যাঞ্চলের মিঃ উইলি ব্রান্ট (Chancellor Herr willy Brant) (জুলাই ২৩) এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন। তাঁর সঙ্গে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের যোগাযোগ হয়েছে, পূর্ব বাংলায় একটি রাজনৈতিক সমাধানে উপনীত হওয়ার মাধ্যমে শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্ভব বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মিঃ ব্রান্ট প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও জাতিসংঘ মহাসচিব উথান্টের সাথে পূর্ব পাকিস্তানে উদ্ভুত সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী