তারাইল বাজার এলাকায় অ্যামবুশ
ময়মনসিংহ জেলার কিশােরগঞ্জ মহকুমার তারাইল থানার অন্তর্গত তারাইল বাজার। এ বাজার এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর এ সহযােগীদের চলাচলের সংবাদে এ দলের উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট সুবেদার জিয়াউল হকের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের ৫০জনের একটি দল নৌকাযােগে নেত্রকোনা মহকুমার কেন্দুয়া থানার অন্তর্গত পাইকুরা ইউনিয়নের বল্লা গ্রামে অবস্থান নেয়। এ গ্রামে গােপন অবস্থানের সুযােগে মিলিশিয়া ও রাজাকারদের চলাচলের সময় এবং ধরন নিরূপণের চেষ্টা। চালায়। বিভিন্ন ধরনের সংবাদ সংগ্রহ এবং আক্রমণ চূড়ান্ত করার জন্য নদীর তীরেই মুক্তিযােদ্ধাদের ৪ দিন অপেক্ষার প্রয়ােজন পড়ে। ৯ আগস্ট সকাল ৮টায় লােক মারফত খবর আসে যে, রাজাকার ও মিলিশিয়া পুলিশ নির্দিষ্ট এ পথে আসছে। খবর পাওয়ার পর গ্রুপ অধিনায়কের নির্দেশে রাজাকার ও মিলিশিয়া পুলিশের আগমনপথে ১৫/১৬ জনের একটি দল জঙ্গলে অবস্থান গ্রহণ করে। আরও একটি দল মিলিশিয়া বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করার লক্ষ্যে একটু দূরে অবস্থান গ্রহণ করে। রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা আক্রমণকারী দলের ৩০০/৪০০ গজের মধ্যে আসার সাথে সাথে মুক্তিযােদ্ধারা প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ চালান। এ আক্রমণে ঘটনাস্থলে ৭জন রাজাকার ও ৫জন মিলিশিয়া পুলিশ নিহত হয়।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাগণ হলেন:
৫. তােফাজ্জল হােসেন চুন্ন
১২. আবদুর রহিম। ১৩. আবদুল জব্বার প্রমুখ।
বান্দরকাটা বিওপি’র অবস্থান -ময়মনসিংহ জেলার সর্ব-উত্তরে হালুয়াঘাট ও ধােবাউড়া থানার মধ্যবর্তী স্থানে সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি বান্দরকাটা বিওপি’র অবস্থান। এ বিওপি থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে হালুয়াঘাট থানার দূরত্ব ১০ কিলােমিটার এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ধােবাউড়া থানা ১৫ কিলােমিটার দূরত্বে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল ডালু সীমান্ত। আশপাশের গ্রামগুলাের মধ্যে ঘােষগাঁও, ভূঁইয়াপাড়া, মেকীরকান্দী, বালিগাঁও, রাজিবপুর, গাজিরভিটা উল্লেখযােগ্য। এ এলাকা ও বান্দরকাটা বিওপি’র সাথে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যােগাযােগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। এ বিওপি’র সাথে কোনাে পাকা রাস্তার সংযােগ। ছিল না। একটিমাত্র কাঁচা রাস্তা বান্দরকাটা বিওপি থেকে ধােবাউড়া সড়কে এসে মিশেছে। বান্দরকাটা বিওপি’র বিপরীত দিকে ভারতের একটি ভূখণ্ড কৌণিক অবস্থানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় ভারতীয় সীমান্ত থেকে বিওপি’র দূরত্ব খুব সামান্য। ভারতের অভ্যন্তর থেকে ২টি ছােটো পাহাড়ি নদী বান্দরকাটা বিওপি’র দুই পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বান্দরকাটা বিওপি’র অবস্থান সমতল ভূমিতে। অপরদিকে, সীমান্ত পার হলেই ভারতের পাহাড়ি এলাকা। এ এলাকার অধিবাসীরা অত্যন্ত পশ্চাদপদ, গরিব এবং কৃষিজীবী।
পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান
বান্দরকাটা বিওপি’র অবস্থান ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অপারেশনাল এলাকায়। ৭০ উইং রেঞ্জার্স এ সময় ময়মনসিংহ ও কিশােরগঞ্জের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিল। বান্দরকাটা বিওপিতে ছিল ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১ প্লাটুন সৈন্যের অবস্থান। এ প্লাটুনের কোম্পানি সদর দপ্তর ছিল হালুয়াঘাট এলাকায়। এ বিওপিতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযােগিতা করার জন্য স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত ছিল ১ প্লাটুন রাজাকার। মে মাস থেকে হালুয়াঘাট থানা অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনী সীমান্ত ফাড়িগুলােকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। আগস্ট মাস নাগাদ পাকিস্তানি বাহিনী। বান্দরকাটা বিওপি’র ঘাঁটিটি সুসংহত ও সুরক্ষিত করে তােলে। জুলাই মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযােদ্ধাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং এর সহযােগী রাজাকার বাহিনীও এ এলাকায় টহল দিতে শুরু করে। এ সময় থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের স্বাভাবিক চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হতে থাকে। ফলে যুদ্ধের কৌশলগত কারণে বিওপিটি শত্রুমুক্ত করা মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়।
১১ নম্বর সেক্টরের অধীন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডালু এলাকায় ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান। ডালু ছিল এ সেক্টরের একটি সাব-সেক্টর। মুক্তিবাহিনীর কোনাে সামরিক অফিসার না থাকায় ময়মনসিংহের যুবলীগ নেতা আবুল হাশেম, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, নাজমুল আহসান, নাজমুল হক তারা, তােফাজ্জল হােসেন চুন্নসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা দায়িত্ব নিয়ে এ সাব-সেক্টর গঠন করেন। এ সময় পর্যন্ত এ সাবসেক্টরে কয়েকজন পুলিশ ও ইপিআর সৈনিক ব্যতীত সেনাবাহিনীর নিয়মিত কোনাে সদস্য ছিল না।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর টহল অভিযান বন্ধ এবং মুক্তিবাহিনীর চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে আগস্ট মাসের প্রথম দিকে গৃহীত হয় বান্দরকাটা বিওপি’র উপর আক্রমণ পরিকল্পনা। শত্রুর সঠিক অবস্থান ও প্রকৃত শক্তি নির্ণয়ের জন্য প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কয়েকটি পর্যায়ে বিওপি’র উপর পর্যবেক্ষণ ও রেকি দল প্রেরণ করা হয়। পর্যবেক্ষক ও রেকি দল বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনসাধারণের সাহায্য নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে। এ রেকির ফলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বিওপিতে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, পাকিস্তান বাহিনীর সংখ্যা ও অবস্থান সম্পর্কে মুক্তিবাহিনীর কাছে পরিষ্কার চিত্র ফুটে ওঠে। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে অভিযান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য ভারতের বিএসএফ ক্যাপ্টেন বালজিৎ সিং ত্যাগীর সহযােগিতা ছিল অসামান্য। ১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট রাতে বান্দরকাটা বিওপি আক্রমণের তারিখ নির্ধারিত হয়। এইচ আওয়ার নিধারণ করা হয় রাত ৩টা। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় ডালু এলাকার দুমনিকুড়া মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধাদের বান্দকাটা বিওপিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ পরিচালনার বিষয় জানানাে হয়। এ আক্রমণ পরিচালনার জন্য ছাত্রনেতা আবুল হাসেম এবং পুলিশের হাবিলদার জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে ২টি দল গঠন করে প্রতিটি দলে ৪০জন মুক্তিযােদ্ধা সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের জন্য সরবরাহ করা হয় প্রয়ােজনীয় অস্ত্র ও গােলাবারুদ। দুমনিকুড়া ক্যাম্প থেকে রাত ৩টায় আক্রমণের এইচ আওয়ার নির্ধারিত হয়।
মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ছিল এসএলআর ও থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল এবং কিছু গ্রেনেড। ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক তেলিখালী অবস্থান। থেকে প্রি-এইচ আওয়ার আর্টিলারি সাপাের্টের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় । আর্টিলারি সাপাের্ট ফায়ার শেষ হওয়ার পর পশ্চিম দিক থেকে আবুল হাশেম তার নেতৃত্বাধীন দলসহ বিওপি’র উপর সরাসরি আক্রমণ করবেন। একই সাথে উত্তর দিক থেকে হাবিলদার জিয়াউদ্দিনের দলটি লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানবে। আক্রমণ শেষে সবাই বেইস ক্যাম্পে ফিরে আসবে। তবে মুক্তিবাহিনী কোনাে বিপদের সম্মুখীন হলে ভেরি-লাইট পিস্তল ফায়ার করে সংকেত প্রদান করবে এবং বিএসএফ আর্টিলারি বিওপি’র উপর পুনরায় কিছুক্ষণ ফায়ার করবে। এ সময় মুক্তিবাহিনী তাদের অবস্থান ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় ফিরে আসবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২জন অধিনায়কের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী বরাকঝিরি নদী অতিক্রম করে শক্রর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। হাবিলদার জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দলটি সঠিক সময় বিওপি’র সম্মুখ ভাগে পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করে। আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযােদ্ধাদের দলের সদস্যরা নদীর প্রবল স্রোতের কারণে নদী অতিক্রম করে সময়মতাে পূর্ব পাড়ে পৌছতে পারেন নি। যার ফলে আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আবুল হাশেমসহ দলের বেশির ভাগ সদস্য নদী অতিক্রম করে সামান্য দেরিতে হলেও শক্র অবস্থানের সম্মুখে অবস্থান নিতে সক্ষম হয় ।
আক্রমণ
মুক্তিবাহিনীর আক্রমণকারী দলটি রওনা দেয়ার পর পরই বৃষ্টি শুরু হয়। এর ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে শত্রুর বাংকারের কাছাকাছি পৌছতেও তেমন অসুবিধা হয়নি এবং বৃষ্টির শব্দের কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষেও মুক্তিযােদ্ধাদের আগমন ও অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধ পরিকল্পনাকারীদের নির্দেশমতাে রাত ৩টার পূর্বেই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সব যােদ্ধা পূর্বনির্ধারিত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। ঠিক রাত ৩টার সময় ভারতের। তেলিখালী বিএসএফ অবস্থান থেকে বান্দরকাটা বিওপি’র উপর আর্টিলারি ফায়ার শুরু হয়। আর্টিলারির গােলাবর্ষণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন ছেলেরা উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়েন। হঠাৎ প্রচণ্ড গােলাগুলি শুরু হলে পাকিস্তানি বাহিনী হতচকিত হয়ে যায় এবং ত্বরিতগতিতে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযােদ্ধারা একপর্যায়ে নদীর তীর ছেড়ে এগিয়ে খােলা স্থানের মধ্য দিয়ে শত্রুর উপর গুলি চালাতে থাকেন। অনেকে দৌড়ে বিওপি’র দিকে অগ্রসর হন। পশ্চিম দিকে অবস্থানরত আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযােদ্ধা দল শক্রর ১ নম্বর ও ৫ নম্বর বাংকার ২টি দখল করে নেয়। এ সময় হঠাৎ বিওপি’র। দক্ষিণে অবস্থিত ২টি বাংকার থেকে অজস্র মেশিনগানের গুলি আসতে থাকে।
ফলে যুদ্ধরত বেশ কয়েকজন যােদ্ধা আহত হন এবং তারা কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এ পর্যায়ে অধিনায়ক আবুল হাশেমের পক্ষে অগ্রসর হওয়া কষ্টকর। হয়ে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন যে, আর অগ্রসর হয়ে বিওপি দখল সম্ভব নয়। সে সময় তিনি তার সাথে রক্ষিত সিগন্যাল পিস্তল দিয়ে ফায়ার করে সহযােদ্ধাদের পিছিয়ে আসার সংকেত দেন। নির্ধারিত সংকেত পেয়ে ভারতীয় অবস্থান থেকে পুনরায় আর্টিলারি সাপাের্ট শুরু হলে মুক্তিবাহিনীর রফিক উদ্দিনসহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। পূর্ব ও পশ্চিমে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর ২টি দলকে প্রত্যাহারের সুযােগ করে দেয়ার জন্য উত্তর দিকে অবস্থানকারী হাবিলদার জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা দল পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর উপর এ সময় গুলিবর্ষণ করতে থাকে। অবস্থানগত বিচারে উত্তর দিকে অবস্থানকারী দলটি একটু সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে যুদ্ধ করছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ব ও পশ্চিম অংশে উভয় দল পিছিয়ে সীমান্ত বরাবর এসে উঁচু কয়েকটি পাহাড়ের উপর অবস্থান নিয়ে শত্রু বাহিনীর উপর গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে। একইসাথে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে আর্টিলারি ফায়ারও চলতে থাকে। এ আক্রমণের মধ্যে সকালের আলাে ফুটে ওঠে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সংগঠিত হয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের গুলিবর্ষণের পাল্টা জবাব দিতে চেষ্টা করে। হঠাৎ আর্টিলারির একটি গােলা বিওপি’র অভ্যন্তরে টিনশেডের মূল ঘরটির উপর।
আঘাত হানে এবং গােলার আঘাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর আর্টিলারি ফায়ারে টিকে থাকা সম্ভব নয় ভেবে পাকিস্তানি বাহিনী বিওপি পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিকাল ৩টার মধ্যে তারা বিওপি ছেড়ে ৩০০-৪০০ গজ পিছনে নদী পার হয়ে নতুন একটি অবস্থানে চলে যেতে থাকে। বান্দরকাটা বিওপি আক্রমণের সামগ্রিক দিক পর্যালােচনা করলে দু-একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমত, অবস্থানগত দিক থেকে এলাকাটি ছিল অনেকটা দুর্গম স্থানে। যােগাযােগ ব্যবস্থা ছিল খুবই দুর্বল। মূল রাস্তার সাথে এ স্থানের কোনাে পাকা সংযােগ সড়ক ছিল না। দ্বিতীয়ত, মুক্তিবাহিনী যখন আক্রমণে ব্যর্থ হয়ে পিছু হটে পাহাড়ের উপর আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিয়ে গুলি চালাতে থাকে, তখনই পাকিস্তানি বাহিনী ভয়ে তাদের অবস্থান ত্যাগ করে। এ থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর ভয়ে ক্রমে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছিল। সর্বশেষ লক্ষণীয় বিষয়টি হলাে, পাকিস্তানি বাহিনীর বিচ্ছিন্ন অবস্থান। একদিকে যেমন এ দেশের মানুষ থেকে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল, তেমনি তাদের নিজেদের মাঝেও পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি কাজ করছিল। বান্দরকাটা বিওপি আক্রান্ত হলে দুর্গম অবস্থান এবং খারাপ যােগাযােগ ব্যবস্থার কারণে পাকিস্তানি বাহিনী কোনােপ্রকার রি-ইনফোর্সমেন্ট করতে পারেনি। ফলে পরিস্থিতি তাদের পিছু হটতে বাধ্য করে। বান্দরকাটা বিওপি আক্রমণে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা বান্দরকাটা বিওপি আক্রমণে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে প্রদত্ত হলাে:
৭.পুলিশ সুবেদার মাহতাব উদ্দিন খান
১১১. বিমলচন্দ্র পাল প্রমুখ।
বান্দরকাটা বিওপি আক্রমণে অংশগ্রহণকারী শহিদ মুক্তিযােদ্ধাদের নাম । নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. আবদুস সালাম
২. আমীর হােসেন
৩. আবদুল আজিজ
৪. হাকিম মােল্লা
৫. রফিক উদ্দিন ভূইয়া
৬. নীগিথ রংথেং
রফিক দিপক সাংমা সামাদ প্রমুখ।