গােড়ান ও সাটিয়াচরার যুদ্ধ
অবস্থান টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে বাশাইল থানা অবস্থিত। বাশাইল থানার দক্ষিণে মির্জাপুর থানা। ঢাকা থেকে সড়কপথ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি টাঙ্গাইল শহর হয়ে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গিয়েছে এবং অপরটি ভালুকা হয়ে ময়মনসিংহে পৌছেছে। দ্বিতীয় সড়কটি যুদ্ধ চলাকালে ছিল জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে টাঙ্গাইলের পথে প্রায় মাঝামাঝি স্থানে মির্জাপুর থানা। এখান থেকে ৫-৬ কিলােমিটার টাঙ্গাইলের দিকে ধল্লা। আরও ২ কিলােমিটার দূরে রাস্তার দুই ধারের দুই গ্রাম – গােড়ান, সাটিয়াচরা। তারপর সড়কটি পাকুল্লা, জামুর্কি গ্রাম দুই ধারে রেখে নাটিয়াপাড়ার ভিতর দিয়ে টাঙ্গাইল পৌছেছে। রণকৌশলগত গুরুত্ব সড়কপথে ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের সাথে যােগাযােগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কপথ। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক বাশাইল থানার নাটিয়াপাড়া গ্রামের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এ সড়ক সংযুক্ত ছিল ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী রেলপথের সাথে। এ রেলপথেই জগন্নাথগঞ্জ ও বাহাদুরাবাদ ঘাট ফেরিপথে পারাপারের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে যােগাযােগ রক্ষিত হতাে। ২৫ মার্চের পর জয়দেবপুর রাজবাড়ি থেকে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ২৮ মার্চ টাঙ্গাইল গমন করে। সেখান থেকে একই দিন টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে অবস্থিত ‘এ’ কোম্পানিকে নিয়ে ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর কাজী মােহাম্মদ শফিউল্লাহ ময়মনসিংহ পৌছেন। সেখানে তিনি পূর্বে মােতায়েনকৃত ‘সি’ কোম্পানিকে একত্র করেন। তিনি ময়মনসিংহ শহরের অদূরে খাগডহরে ইপিআর ২নং উইং-এর বাঙালি সৈনিকদেরও দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২৮ মার্চের পর ঢাকা সেনানিবাসের উত্তরাঞ্চলে জয়দেবপুর ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের উত্তরে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত কোনাে পাকিস্তানি সৈন্যের উপস্থিতি ছিল না। গােটা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর পুলিশদের হাতে। ফলে রণকৌশলগত কারণে পাকিস্তানিদের উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের আবশ্যকতা দেখা দেয়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রেলপথ মুক্তিযােদ্ধাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে ব্যবহারযােগ্য ও নিরাপদ ছিল না। অতএব, ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ পথের। কোনাে বিকল্প ছিল না। এটিই ছিল তাদের প্রধান যােগাযােগ মাধ্যম (Line of Commuication)।
পরিস্থিতি
রণকৌশল সম্বন্ধে টাঙ্গাইলের প্রতিবাদী জনতার বিশদ ও বিস্তারিত জ্ঞান না থাকলেও তারা সঠিকভাবে অনুমান করে যে, পাকিস্তানিরা সহসাই ঢাকাটাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ পথ ধরে অগ্রসর হবে। তারা তাদের সীমিত অস্ত্র, যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাহীন ছাত্র-জনতা এবং আনুমানিক ৫০জন ইপিআর সৈনিক আর বুক ভরা সাহস নিয়ে পাকিস্তানি অগ্রাভিযান প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়। অসীম সীমাবদ্ধতা নিয়ে তারা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিতে থাকে স্বল্পতম সময়ে। এ পথে পাকিস্তানিদের অগ্রযাত্রা শুধু সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সামগ্রিক পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বিস্ফোরণােন্মুখ।
সংগঠন
পাকিস্তানি বাহিনী
৩১ বালুচ রেজিমেন্ট (সম্পূর্ণ ব্যাটালিয়ন) আনুমানিক শতাধিক গাড়িতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল এবং তাদের হেলিকপটার সমর্থনও ছিল।
মুক্তিবাহিনী
প্রায় ৩০জন ইপিআর সদস্য এবং স্থানীয় শতাধিক ছাত্র-যুবক ও জনসাধারণ। ইপিআরদের কাছে থাকা এলএমজি, এসএমজি, রাইফেল, ২ ইঞ্চি মটার ও লিরাট (LIRAT – Light Infantry Rifle Anti-Tank) ছিল। ছাত্র-যুবকদের কাছে জেলা ট্রেজারি থেকে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা কিছু রাইফেল ও বন্দুক ছিল। পরিকল্পনা। পাকিস্তানি বাহিনী বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিশেষ করে ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন জেলাগুলােয় যথাশীঘ উপস্থিত হয়ে নিয়ন্ত্রণ করা ছিল পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য। তারা একইসাথে জামালপুর হয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাটেরও নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এ দুই উদ্দেশ্যে পাকিস্তানিরা ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে অগ্রাভিযানের পরিকল্পনা করে।
মুক্তিবাহিনী
ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে অগ্রসরমান পাকিস্তানিদের প্রতিহত ও প্রতিরােধ করার যথাযথ শিক্ষা, অস্ত্র ও অভিজ্ঞতা কিছুই মুক্তিযােদ্ধাদের ছিল না। আধা সামরিক ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে ইপিআর সৈনিকদের সামান্য শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা ছিল। প্রায় ৫০জন ইপিআর সৈনিক এবং কয়েক’শ। ছাত্র-জনতা ও আনসার দিয়ে শত্রুকে প্রতিহত করতে তিন স্থানে প্রতিরক্ষা
অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যথা: টাঙ্গাইলের নিকটবর্তী নাটিয়াপাড়ায় প্রতিরক্ষা অবস্থানে থাকবে ইপিআর ও ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে একটি কোম্পানি, প্রায় দেড় কিলােমিটার আগে গােড়ান-সাটিয়াচরায় প্রতিরক্ষা অবস্থানে থাকবে ইপিআর ও ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে আর একটি কোম্পানি এবং আরও ২ কিলােমিটার সামনে থাকবে কেবলমাত্র ছাত্র ও আনসারদের সমন্বয়ে ধল্লায় ২ প্লাটুনের একটি অগ্রবর্তী অবস্থান।
যুদ্ধ বর্ণনা
১ এপ্রিলের মধ্যে নাটিয়াপাড়া এবং গােড়ান-সাটিয়াচরার প্রতিরক্ষা অবস্থান তৈরি সম্পন্ন হয়। নাটিয়াপাড়া থেকে গােড়াই (গােড়ান-সাটিয়াচরার নিকটবর্তী স্থান) টেলিফোন লাইন স্থাপন করা হয়। টেংগুরিয়াপাড়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক রহিম মাস্টার এ গুরুদায়িত্ব পালন করেন। ৩টি প্রতিরক্ষা অবস্থানের যােদ্ধাদের খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করেন লতিফ সিদ্দিকী এবং খােন্দকার আসাদুজ্জামান। ২ এপ্রিল সকালে টাঙ্গাইল জেলা থেকে ৮০জন কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়ে তাদেরকে প্রতিরক্ষার প্রশাসনিক কাজের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। এ কারাবন্দিরা একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের কর্তব্য পালন করে। ২ এপ্রিল গভীর রাতে টেলিফোনের দায়িত্বে নিয়ােজিত রহিম মাস্টার কাদের সিদ্দিকীকে খবর দেন যে, পাকিস্তানিরা অগ্রসর হচ্ছে প্রচুর গাড়ি নিয়ে। শেষ মুহূর্তে আরও কিছু গুলি (১৫ বাক্স) সংগ্রহ করা হয় টাঙ্গাইলের পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকে। | ছাত্র-জনতা এবং আনসারদের সমন্বয়ে ধল্লা অগ্রবর্তী অবস্থান ছিল। স্বভাবতই দুর্বল। ৩ এপ্রিল ভাের ৫.৩০ মিনিটে পাকিস্তানিরা শতাধিক গাড়িতে ধল্লা অতিক্রম করে। ধল্লার মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুর বিশাল বহর দেখে ঘাবড়ে যান। তারা কোনাে গুলি না করে পিছিয়ে আসেন। পাকিস্তানিরা বিনা বাধায় ও নির্বিঘ্নে গােড়ান-সাটিয়াচরায় এসে যায়। গােড়ান-সাটিয়াচরার মুক্তিযােদ্ধারা প্রস্তুত থাকলেও প্রথমে শক্রর বিশাল গাড়ির বহর দেখে হতবিহ্বল হয়ে যান। মুহূর্তেই তারা নিজেদের সামলে নেন। তারা শত্রুকে আরও কাছে আসার সুযােগ দেয়ার জন্য নির্দেশমতাে গুলি করা থেকে বিরত থাকেন। শত্রু প্রায় ১০০১৫০মিটারের মধ্যে এসে গেলে নায়েব সুবেদার আবদুল আজিজ প্রথম তার এলএমজি থেকে ফায়ার শুরু করেন। সাথে সাথেই গর্জে ওঠে গােটা প্রতিরক্ষার সকল অস্ত্র।
৬টি এলএমজি, ৩টি রকেট লঞ্চার, ৩টি ২ ইঞ্চি মর্টার বিরামহীনভাবে গর্জন করতে থাকে। আকস্মিক আক্রমণে হানাদাররা প্রথমে দিশেহারা হয়ে যায়। তারা ভাবতেই পারেনি এমনভাবে আক্রান্ত হবে। আর আক্রান্ত হয়েই তারা মনে করে যে, ইস্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্ট বাধা দিয়েছে। মাত্র ৭০-৮০গজ দূরে থেকে আক্রান্ত হলে সবার যা হয় এ হানাদারদেরও তাই হলাে। মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের কোনাে যুদ্ধে একসঙ্গে এত সৈন্য আর কোথাও হানাদারদের খােয়াতে হয়নি। পাল্টা আঘাত হানতে তাদের প্রায় ৩-৪ মিনিট লেগে যায়। ইতােমধ্যে তাদের সৈন্য বােঝাই ১০-১২টি গাড়ি হুমড়ি খেয়ে রাস্তায় উল্টে যায়। গাড়ি থেকে লাফিয়ে-পড়া সৈন্যরা রাস্তার দুইপাশে অবস্থান নিতে গেলে তাদের উপর মুক্তিবাহিনী ইপিআর সদস্যরা পাখি শিকারের মতাে তাক করে গুলি করতে থাকে। মুক্তিবাহিনী রাস্ত র দুইপাশেই অবস্থান নিয়েছে। তাই হানাদারদের পক্ষে আড়াল করে যুদ্ধ করার কোনাে সুযােগ ছিল না। হানাদারদের যে ২৫টি গাড়ি মুক্তিবাহিনীর মাঝে এসে পড়েছিল, তাদের এক শতাংশও অক্ষত ছিল না। গােড়ান-সাটিয়াচরায় ইপিআর সদস্যরা অসম্ভব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা জানের পরােয়া করেন নি বরং তারা যেন মাতৃভূমির জন্য জীবন দিতেই এসেছেন। একপর্যায়ে গােড়ানের দিকের হাবিলদার আবদুল খালেকের এলএমজি নষ্ট হয়ে যায়। যুদ্ধ শুরু করে ফজলুর রহমান ফারুক হাবিলদার খালেকের পিছনে গিয়ে বসেছিলেন। এলএমজি নষ্ট হেয়ে গেলে হাবিলদার খালেক ফারুক সাহেবকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। ভীতসন্ত্রস্ত ফারুক সাহেব বলেন, ‘আমরা চলে গেলে আপনারা যাবেন কিভাবে?’ হাবিলদার খালেক একজন খাটি দেশপ্রেমিকের মতাে উত্তর দেন, ‘আপনি চলে যান, আপনি একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।
আপনার জীবনের মূল্য অনেক। আর আপনার ট্রেনিং নেই। আপনারা যান, আমরা একটা ব্যবস্থা করতে পারবই।’ ফারুক সাহেব হাবিলদার খালেকের কাছ থেকে ১০০ গজও পিছিয়ে যেতে পারলেন না, পাকিস্তানি বাহিনীর এক ঝাক মেশিনগানের গুলি হাবিলদারের বুক ঝাঝরা করে দিল। তার নিপ্রাণ দেহ অচল এলএমজি’র উপর লুটিয়ে পড়ল। বাংলা-মাকে ভালােবেসে নিজের রক্ত দিয়ে তিনি স্বাধীনতাকামীদের প্রতি অনুপ্রেরণার এক জ্বলন্ত স্বাক্ষর রেখে গেলেন। শত শহিদের সাথে হাবিলদার নিজের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতাকামীদের প্রতি অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। শত শহিদের সাথে হাবিলদার আবদুল খালেকের নামও ইতিহাসের পাতায় সােনালি অক্ষরে উজ্জ্বল হয়ে রইল। শত্রু আস্তে আস্তে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ সামলে নেয়। তারা রিকয়েললেস রাইফেল, মর্টার স্থাপন করে মুক্তিযােদ্ধাদের উপর প্রচণ্ড ফায়ার করতে থাকে। ওয়্যারলেসে তারা হেলিকপ্টারের সাহায্য চায়। তারা অনুমান করেছিল যে, এ প্রতিরক্ষা ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের নেয়া। হেলিকপ্টার উপর থেকে কার্যকরভাবে মেশিনগানের মাধ্যমে অবিরাম ফায়ার। করতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধাদের বাংকারগুলাে একে একে গুড়িয়ে যেতে থাকে। হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চলে। মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান আর ধরে রাখা সম্ভব হয় না। নাটিয়াপাড়া থেকে টেলিফোন লাইন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। নাটিয়াপাড়ার প্রতিরক্ষা অবস্থানের দিকে শত্রু পাকুল্লা-জামুর্কি পার হয়ে। এগােতে থাকে। পিছন থেকে মর্টার অবিরাম কভারিং ফায়ার দিয়ে শত্রু প্রস্তুত এবং সতর্কাবস্থায় গুলির ঝড় বইয়ে দিয়ে এগােতে থাকে। নাটিয়াপাড়া প্রতিরক্ষা অবস্থানের ভবিষ্যৎ ও কার্যকারিতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে। কোনাে গুলি না করেই মুক্তিযােদ্ধারা সকাল ১০টার দিকে নাটিয়াপাড়া। প্রতিরক্ষা অবস্থান ত্যাগ করেন।
ফলাফল
গােড়ান-সাটিয়াচরার যুদ্ধে ২৩-২৪জন ইপিআর সদস্য এবং গােড়ান, সাটিয়াচরা, পাকুল্লা, গুনটিয়া, আছিমতলা এলাকার কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধাসহ ৩৪জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন। নিমে শহিদ মুক্তিযােদ্ধাদের নাম উল্লেখ করা । হলেন:
১. ইপিআর সদস্য গফুর
২. হাবিলদার আবদুল খালেক
৩. জুমারত আলী দেওয়ান
৪.এস এম জিলুর রহমান (টেপু মিয়া)
৫. সৈয়দ নূরুল রহমান (জাহাঙ্গীর)
৬. পান্না সিকদার
৭. মাে. নূরুদ্দিন।
৮. আবুল কাশেম (হাসি)
৯. মাে. জাহাঙ্গীর হােসেন
১০. মাে. জাহাঙ্গীর আলম (মানিক)
১১. আলহাজ মৌলভি খ, আ, হাকিম
১২. মাে. দুদু মিয়া।
১৩. মাে. লেবু মিয়া
১৪. ভিকু চৌধুরী।
১৫. মাে, আ, হক মিয়া
১৬. মাে. শাহ আলম
১৭. নঈম বক্স
১৮. দুলাল মিয়া।
১৯. আবু রায়হান
২০. হাবিবুর রহমান চৌধুরী
২১. মাে. ইব্রাহিম মিয়া
২২. এস এম তােফাজ্জল হােসেন।
২৩, এস এম আফজাল হােসেন
২৪, মাে. আজমত আলী
২৫. মাে. শরীফউদ্দিন।
২৬. মাে. নূরুল ইসলাম (লেবু)
২৭. গাজী শামসুল আলম
২৮. মাে. মজিবুর রহমান
২৯, মাে. নাজমুল আলম
৩০. মাে. আবুল হােসেন।
৩১. মাে, কাজিম উদ্দিন
৩২. মাে. মান্নান
৩৩. দারােগ আলী
৩৪. জিয়াউর রহমান প্রমুখ ।
এ ছাড়া পাকিস্তানিরা গ্রামে প্রবেশ করে সৈয়দা মেহেরুন নেছা (খুকি), মিলি চৌধুরী, নূরজাহান বেগম, করিমন নেছা, কহিনূর আক্তার, আমেনা খাতুন, মজিরন নেছা, নছিরন বেওয়া, জয়গন বেগম, লাল বানু, সুফিয়া বেগম, এস এম মােস্তাফিজুল হক (শাহিন) সহ আরও প্রায় ২৫-৩০জন নানা বয়সের নারীপুরুষ ও শিশুকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে।
এ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হন। তারা হলেন:
১. মাে. মােশারফ হােসেন।
২. এস এম বদরুল আলম ফারুক
৩. এস এম জিয়াউল হুদা।
৪. নূরুল ইসলাম
৫. দুলাল
৬. আবুল বাসার
৭. মাে. জামালউদ্দিন
৮. রমিজউদ্দিন
৯. মাে, ইন্তাজ আলী
১০. গানু শিকদার
১১. মাে. আক্কাছ মিয়া
১২. মাে, লতিফ।
১৩, হালিমন নেছা।
১৪. ফুলমতি বেগম।
১৫. মাহমুদা খাতুন প্রমুখ।
পাকিস্তানিদের আনুমানিক ২০-২৫টি গাড়ি মুক্তিবাহিনীর মাঝে এসে পড়েছিল, তাদের অধিকাংশই মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানে শক্রর প্রায় ৩০০জন নিহত এবং ১৫০জন আহত হয়। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ গােলাগুলি ও অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস হয়।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাসে ৩ এপ্রিলের গােড়ান-সাটিয়াচরার যুদ্ধ প্রণিধানযােগ্য। লাভক্ষতি, জয়-পরাজয়ের বাইরেও এ যুদ্ধের সংযােজিত মাত্রা জনযুদ্ধের (Peoples war) চরিত্রে বৈশিষ্টমণ্ডিত। জনগণ, নিয়মিত বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী, জেলবন্দি অপরাধী, একই উদ্দেশ্যে এক সমতটে চলে আসেন এ যুদ্ধে। দেশপ্রেমের অপার প্রণােদনায় তারা অকাতরে প্রাণ দেন। দেশাত্মবােধের এ নির্যাসই শেষ পর্যন্ত এনে দেয় তাদের স্বপ্নসাধ – স্বাধীনতা। গােড়ান-সাটিয়াচরার যুদ্ধ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রতিরােধের গােড়ার সময়ের যুদ্ধ। বাস্তবিক অর্থে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়মিত সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে (তখন বাংলাদেশে অবস্থিত ৫টি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) মুক্তিযােদ্ধাদের পরিচালিত গােড়ান-সাটিয়াচরার প্রতিরক্ষা যুদ্ধ প্রথম প্রচলিত। যুদ্ধ (Conventional Battle)। নিরেট দেশপ্রেম, বাঁধভাঙা সাহস ও সুতীব্র আবেগই যে জনযুদ্ধের নিয়ামক এ যুদ্ধ তারই বহিঃপ্রকাশ।
চারান গ্রামে অ্যামবুশ
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে উত্তরে অবস্থিত কালিহাতি থানাধীন একটি গ্রাম চারান। পাকিস্তানি ১টি প্ল্যাটুন চারান গ্রামে এসে লুটপাট করে এবং ১০টি বাড়ি জালিয়ে দেয় । শত্রু লুটপাট করে কালিহাতির দিকে ফিরছিল, তাদের মনে তখন অপার আনন্দ। সংবাদ পেয়ে কাদের সিদ্দিকী শত্রুর মােকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেন। তার জন্য এটি ছিল এক সংকটময় সিদ্ধান্ত। যদি এ হামলায় পরাজয় ঘটে, তবে নতুন মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবল ভেঙে যেতে পারে। বিশেষ করে যােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে অযথা একটি গুলিও খরচ না করতে, কারণ। অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদের তখন দারুণ অভাব। সে জন্য কাদের সিদ্দিকী বাছাই করা ১০জন বেপরােয়া ও দুঃসাহসী ছেলে নিয়ে সড়কের পুলের আড়ালে এত পেতে বসে থাকেন। নবদীক্ষিত মুক্তিবাহিনীর সামনে মহা পরীক্ষার দিন এলাে। ২২ মে। পাকিস্তানিরা লুটপাট করে কালিহাতির দিকে ফিরছিল। যে মুহূর্তে পাকিস্তানিরা কাদের সিদ্দিকীর নিশানার মধ্যে এলাে, অমনি তার হাতের হালকা মেশিনগান গর্জে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ৪জন শত্রু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ চারঘণ্টা স্থায়ী এ যুদ্ধে প্রায় ১৩জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং বহু আহত হয়। শক্র এক বাক্স গুলি ও ৪টি রাইফেল ফেলে পালিয়ে যায়। কাদের সিদ্দিকীর একক নেতৃত্বে এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মুক্তিবাহিনীর মনােবল বহুগুণ বেড়ে যায়। আরও নতুন নতুন জয়ের নেশায় তারা উন্মুখ হয়ে থাকেন। আর সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের মধ্যে যেটুকু ভয় বা সংশয় ছিল, তা কেটে যায় এবং কাদের সিদ্দিকীর প্রতি তাদের আস্তা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
বল্লার যুদ্ধ
টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানার দক্ষিণ-পূর্বে একটি গ্রাম বল্লা। কালিহাতি থেকে একটি কাঁচা রাস্তা বল্লা পর্যন্ত পেীছেছে। ১২ জুন সকাল ৪টায় টেলিফোনে অধিনায়ক ফজলুর রহমান কাদের সিদ্দিকীকে সুপ্রভাত জানান। মিনিট ১৫ পর লাবিবের পক্ষ থেকেও এলাে সুপ্রভাত। এরপর অগ্রবর্তী ঘাঁটিগুলােও একে একে সুপ্রভাত জানায়। কাদের সিদ্দিকীও তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং সবার জন্য নতুন দিন অর্থবহ হােক এ কামনা করেন। সাড়ে ৮টায় আবার টেলিফোন বেজে ওঠে। এবারও ফজলুর রহমানের কণ্ঠ, তবে আগের মতাে শান্ত নয়, বেশ উত্তেজিত। অতিশয় উদ্বিগ্ন কণ্ঠে তিনি কাদের। সিদ্দিকীকে জানান, কালিহাতি থেকে শত্রু বল্লার রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছে। খবর পাওয়া গেছে, সকাল ৮টায় তারা হাটা শুরু করেছে। সম্ভবত এখন শত্রু প্রায় চারানের কাছাকাছি এসে গেছে। এমন সময় অগ্রবর্তী ঘাঁটি থেকেও কাদের। সিদ্দিকীকে টেলিফোনে জানানাে হয়, শত্রু কালিহাতি থেকে বল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। কাদের সিদ্দিকী অগ্রবর্তী দলকে নির্দেশ দেন, তাঁরা যেন টেলিফোনের তার গুছিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বল্লা স্কুলের সামনে চলে আসেন। ইতােমধ্যে কাদের সিদ্দিকী তাঁর দলকে প্রস্তুত করে নেন। বল্লা-টাঙ্গাইল রাস্তায় টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর যারা প্রতিরক্ষায় এবং সংবাদ প্রেরকের দায়িত্বে আছেন, নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাদের অবস্থান থেকে এলাকায় সর্বত্র তীক্ষ দৃষ্টি রাখতে খবর পাঠানাে হয়। অধিনায়ক ফজলুল রহমান, লাবিবুর ও আফসার তাদের কোম্পানি নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর জন্য গভীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করেন। কাদের সিদ্দিকী তাদের কাছে পৌছেই ফজলুর রহমানকে সহযােদ্ধাদের বল্লা গ্রামের দক্ষিণে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দিয়ে সে যেন শুধু ১০-১২জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেন।
লাবিব ও আফসারকে ২জন করে সহযােদ্ধা নিয়ে কাদের সিদ্দিকীকে অনুসরণ করতে বলেন এবং ফজলুকে তার পুরাে দলকে নিয়ে বাজারের দক্ষিণে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। এ সময় চারানের দিক থেকে ৩০জন মুক্তিযােদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর সামনে এসে হাজির হন। তাদেরও বল্লা গ্রামের দক্ষিণে নিরাপদ জায়গায় অপেক্ষা করতে বলা হয়। কাদের সিদ্দিকী তার ২০জন যােদ্ধা নিয়ে নদীর অপর পাড়ে প্রায় দেড় মাইল এলাকাজুড়ে ওত পেতে বসে থাকেন। শক্রর দৃষ্টির আড়ালে তারা অবস্থান নেন। কোনােরূপ বাধার সম্মুখীন না হওয়ায় শুক্র ২টি নৌকা নিয়ে নদী পার হতে থাকে, আর গুলিবর্ষণ করে তাদের যাত্রাপথে আচ্ছাদন সৃষ্টি করে। এমনি করে নৌকা ২টি যখন নদীর মধ্যস্থলে এসে পৌছায়, তখনাে। কোনাে গুলির শব্দ মুক্তিবাহিনীর তরফ থেকে না আসায় ওরা নিশ্চিন্তে পাড়ের কাছাকাছি এসে যায়। অমনি গর্জে ওঠে মুক্তিবাহিনী অধিনায়কের হাতের হালকা মেশিনগান। সঙ্গে সঙ্গে ২টি নৌকাই ডুবে যায়। তারপর শুরু হয়। প্রচণ্ড যুদ্ধ। কাদের সিদ্দিকী মাত্র একটি এলএমজি সম্বল করে একবার ডানে, একবার বামে সরে গিয়ে অবিশ্রান্ত গুলিবর্ষণ করেন, আর দূরে গাছের মাথায় বসে আলম ও কাসেম অবজার্ভেশন পােস্ট থেকে সংকেত দেন।
শত্রুর একটি মেশিনগান কাদের সিদ্দিকীর অবস্থান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে, তিনি লক্ষ্য এড়ানাের জন্য বারবার স্থান পরিবর্তন করেন। প্রথম চোটে শক্রর ২টি নৌকাডুবি হওয়ায় তাদের মনােবল যথেষ্ট ভেঙে যায়। মুক্তিবাহিনীর গুলিতে একপর্যায়ে ৪জন শত্রু নিহত হয়। নদীতে ডুবে অপর কয়েকজনও মারা যায়। এ পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক বুঝে শক্র উত্তর দিকে পিছু হটতে শুরু করে। শত্রুর ৪টি লাশ উদ্ধারের জন্য কাদের সিদ্দিকী ২জন। দুঃসাহসিক তরুণ সবুর ও মালেককে নির্দেশ দেন। তাঁরা ২জন এগিয়ে চলেন। মৃত্যুকে উপেক্ষা করে। কখনাে ডুবে, কখনাে ভেসে সাঁতরিয়ে চলেন তারা। ওঁদের রক্ষা করার জন্য মুক্তিবাহিনী কভারিং ফায়ার করে। এ গুলিবর্ষণ ও পাল্টা গুলিবর্ষণের মধ্যে সবুর ও মালেক পাড়ে গিয়ে লাশের দিকে অগ্রসর হলে আতঙ্কিত হয়ে শত্রু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে। ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শত্রু পর্যস্ত হয়ে টাঙ্গাইলের দিকে পালিয়ে যায়। বল্লার যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানিরা এ এলাকায় তেমন বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। ছােটোখাটো ঝুঁকি ও বাধার সম্মুখীন হলেও তা তারা অনায়াসেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। যুদ্ধের অবস্থা ছিল পাকিস্তানিদের অনুকূলে। এতে সে এলাকার জনগণের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল যে, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী হয়ত দুর্জয় ও অজেয়। এ যুদ্ধে তাদেরকে হয়ত পরাজিত বা পর্যুদস্ত করা সম্ভব হবে না। বল্লার যুদ্ধে পাকিস্তানিরা মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ যুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর ভয়ে এতই ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যে মৃতদেহ ও অস্ত্রগুলাে পর্যন্ত কুড়িয়ে নিতে সাহস করেনি।
তারা কোনােভাবে পালিয়ে নিজেদের জীবন রক্ষা করে। এ যুদ্ধে শত্রু প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি, লাশ ও অস্ত্র-সংগ্রহে সাহসের অভাব, সর্বোপরি পরাজয়বরণ করে পলায়ন ইত্যাদি ঘটনার পর এলাকার জনগণ মুক্তিযােদ্ধাদের উপর সম্পূর্ণরূপে ভরসা ফিরে পায়। বল্লার যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর উপর জনতার যে আস্থা আসে, যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত তা অটুট ছিল। বল্লার যুদ্ধে উদ্ধারকৃত শক্রর লাশের চারপাশে যখন জনতার ভিড়, তখন কয়েকজন উৎসাহী যুবক ও ১০-১২জন মুক্তিযােদ্ধাকে ২টি করে কলাগাছ দিয়ে। ৪টি ভেলা বানিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল। জনতার লাশ দেখা শেষ । অন্যদিকে, কলাগাছের ভেলা তৈরি। মৃত দেহগুলাে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে। অসংখ্য মানুষের। আনাগােনা ও চলাফেরার ফলে লাশগুলাে ধূলিতে একাকার হয়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকে সাপে-কাটা রােগীদের কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়ার একটি রীতি আছে। গ্রামের পর গ্রাম যখন কলেরা বা ওলাউঠায় উজাড় হয়ে যেত, তখন কবরে বা শ্মশানঘাটে বয়ে নেয়ার লােকের অভাবে মৃতদেহগুলাে কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হতাে। মুক্তিযােদ্ধারা এখানে প্রাচীন প্রথার আশ্রয় নেন। সামরিক পােশাকের ৪টি লাশ কলাগাছের ভেলার উপর শক্ত করে বেঁধে ভাটিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। দখলকৃত ৪টি লাশ তল্লাশি করে প্রথম সৈনিকের কাছে ১০০ টাকার ৬টি নােট ও ১টি ঘড়ি, দ্বিতীয়জনের কাছে ৩০ টাকা ও উর্দু লেখা এক টুকরাে কাগজ, পাকিস্তানের জনপ্রিয় চিত্রতারকা নিলাের ছবি, তৃতীয়জনের পকেটে রুমালে বাধা আনুমানিক ২ তােলা ওজনের সােনার হার, ৩টি আংটি ও ৫-৬ ভরি ওজনের ১টি সােনার চেইন এবং সর্বশেষ জনের কাছে ১,৩০০ টাকা, ১টি ঘড়ি, কয়েকজন পশ্চিম পাকিস্তানি চিত্রাভিনেত্রীর ছবি, কিছু চুড়ি, মালা ও আংটিসহ ভরি সাতেক স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়।
বল্লার যুদ্ধে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলাের মধ্যে ৪টি চাইনিজ রাইফেল, ৬০০ গুলি, ১০টি গ্রেনেড, ৪টি ২ ইঞ্চি মর্টারশেল। পরে বল্লার উৎসাহী যুবকেরা রাস্তার দুই পাশের জলাশয়ে ঝাকিজাল ফেলে তুলে আনেন ১টি চাইনিজ রাইফেল এবং ৪০০ গুলি। বল্লা যুদ্ধের ২ দিন পর আরও ১জন শত্রুর লাশ স্থানীয় যুবকেরা। উদ্ধার করেন।
বল্লা যুদ্ধে যেসব মুক্তিযােদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা হলেন
১. লাবিবুর রহমান, হুমায়ূন।
২. খােরশেদ আলম।
৩. আর.ও. সাহেব
৪. সাইদুর রহমান
৫. আফসার উদ্দিন আহমেদ (আফসার মেম্বার)
৬, আবদুস সবুর খান
৭. আবদুল মালেক
৮. আবদুল হালিম
৯. রফিক।
১০. নিতাই পাল
১১. বাবুল সাহা।
১২. আমজাদ প্রমুখ।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড