ফতুল্লা থানা আক্রমণ ও অস্ত্র উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দক্ষিণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের উপর ফতুল্লা থানা অবস্থিত। ৩ নভেম্বর সন্ধ্যার পর নদী পার হয়ে আলীগঞ্জ দিয়ে ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ির ভিতর দিয়ে ১৪-১৫জন মুক্তিযােদ্ধা গেরিলা পদ্ধতিতে ফতুল্লা থানায় ও থানার বাংকারে অতর্কিত হামলা। করে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের উপরে অবস্থিত ছিল বলে পাকিস্তানিদের বাঙালি সহযােগী পুলিশরা মােটামুটি নিশ্চিন্তে ছিল। অতর্কিতে নদীর অপর পাড় থেকে আক্রান্ত হয়ে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। প্রতিরােধের কোনাে চেষ্টাই তারা করে নি বা করতে পারে নি। থানার সব বাঙালি পুলিশ মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং থানা থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭টি .৩০৩ রাইফেল ও ৫০০ রাউন্ড গুলি। থানার ওসিসহ সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে থানায়। কেরােসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করার ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্রবল ও মনােবল অনেক বৃদ্ধি পায়।
আশারিয়া চর ব্রিজের আক্রমণ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশারিয়া চর ব্রিজ (পিরােজপুর ইউনিয়ন) পাহারা দিত পাকিস্তানি বাহিনী মনােনীত ৮জন পুলিশ। ওদের মধ্যে বাঙালি পুলিশ ছিল। ৬জন আর বাকি ২জন ছিল পাকিস্তানি। বাঙালি পুলিশদের সাথে মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক মােহাম্মদ আলী অতি গােপনীয়ভাবে যােগাযােগ রক্ষা করেন। পূর্ব। সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা অনুসারে পাহারারত বাঙালি পুলিশ হাবিলদার আব্দুস। সাত্তার, আব্দুল জলিল, গােলাম মােস্তফা, তাহের আলী ও আরও ২জন পুলিশসহ মােট ৬জন বাঙালি পুলিশ মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং পাকিস্তানি ২জন পুলিশকে হত্যা করে। এদের কাছ থেকে ১টি এলএমজি, ৫টি ৩০৩ রাইফেল ও ৫০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ওমর আলী মিস্ত্রির। গাড়ি দিয়ে সম্মানদী ইউনিয়নস্থ কুমারচর মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পে এ অস্ত্রগুলাে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বাঙালি ৬জন পুলিশ মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন: ১, অধিনায়ক মােহাম্মদ আলী ২. সুলতান আহম্মদ মােল্লা ৩. বাদশা ৪. সিরাজুল ইসলাম। ৫. অধিনায়ক রুহুল আমিন (বাদশা) ৬. আবদুল খালেক ৭. সফিউর রহমান ৮, বজলুর রহমান। ৯. দেওয়ান উদ্দিন চুন্ন ১০. ইব্রাহীম খলিল ১১. আব্দুল আউয়াল ১২. সদর আলী। ১৩. সফর আলী।
বৈদ্যের বাজারে (সােনারগাঁও) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জিপ ধ্বংস
দৈনিক প্রায় ৭-৮ বার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করত। সােনারগাঁও চৌরাস্তায় পাকিস্তানি সৈন্যদের চলাচলের গতিরােধ করে ক্ষতিসাধনের পরিকল্পনা করা হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল কাফুরদি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করতাে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক গিয়াসউদ্দিন। তাঁর নির্দেশ মােতাবেক ৫ নভেম্বর অ্যামবুশে যান ১৬জন মুক্তিযােদ্ধা। সােনারগাঁও চৌরাস্তায় মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান গ্রহণ করার সাথে সাথেই ঘটনাক্রমে শত্রুর জিপ এসে যায়। শুরু হয় গুলি বর্ষণ। থেমে যায় চলন্ত। জিপ, হত্যা করা হয় ৪জন পাকিস্তানি সৈন্য, উদ্ধার করা হয় অস্ত্রশস্ত্র । অপারেশন শেষে সকল মুক্তিযােদ্ধাই নিরাপদে ক্যাম্পে ফেরত আসেন। | এ যুদ্ধে সাহাবুদ্দিন খান সবুজের নেতৃত্বে যারা অংশগ্রহণ করেন তাঁরা হলেন: ১. জি কে বাবুল ২. দুলাল ৩, হাতেম ৫. জিন্না। ৬. সামছুল ৭. আলী আজগর ৮, হাতেম। ৯. খসরু ১০. গিয়াসউদ্দিন গেসু ও সােনারগাঁওয়ের স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড