You dont have javascript enabled! Please enable it! বরদা গ্রামের কালভার্ট ধ্বংস - বিজেসি গােদনাইল প্রেস হাউজে আগুন - সােনারগাঁও অ্যামবুশ-১ (চিলারবাগ) - সংগ্রামের নোটবুক
বরদা গ্রামের কালভার্ট ধ্বংস
ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়কের উপর বরদা গ্রামের পশ্চিম দিকে একটি কালভার্ট। বর্ষাকালে ঐ কালভার্টের নিচ দিয়ে রূপগঞ্জ থানা ও বৈদ্যের বাজার থানার নৌ পথে যােগাযােগের একমাত্র রাস্তা। শত্রু বাহিনীর দোসর রাজাকাররা ঐ কালভার্টটি সব সময় পাহারা দিত এবং নিরীহ মানুষের চলার পথে মালামাল, আসবাবপত্র, টাকাপয়সা লুট করে নিত এবং দৈহিক অত্যাচার করত। ১৭ জুলাই বিকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। রাজাকাররা কালভার্টের পশ্চিম দিকে একটি ঘরে বসে তাস খেলায় মত্ত ছিল। তখন রাত প্রায় ৯টা। অধিনায়ক রুহুল আমিন ও তাঁর সহযােদ্ধারা ঘরটির চতুর্দিকে ঘিরে রেখে অতর্কিত হামলা চালিয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান। ফলে কালভার্টটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজাকাররা ৫টি রাইফেল ও ৪০ রাউন্ড গুলি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা অস্ত্র ও গােলাবারুদ নিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করেন। এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন: ১. রুহুল আমিন ২. মােহাম্মদ আলী ৩. সুলতান আহম্মদ মােল্লা (বাদশা) ৪. মালেক ৫. সিরাজুল ইসলাম (মাস্টার) ৬. আবদুল বাতেন ৭. আবদুল খালেক ৮. হাবিবুল্লাহ। ৯. সফিউর রহমান ১০. বজলুর রহমান ১১. উৎপল দত্ত ১২. সানাউল্লাহ ১৩. নান্টু ১৪, আ, আউয়াল।
বিজেসি গােদনাইল প্রেস হাউজে আগুন
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ফতুল্লা থানা অবস্থিত। থানা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে গােদনাইলের অবস্থান। ৩ আগস্ট রাত ১টা ৫৫ মিনিটে ফতুল্লা থানা মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক আলী হােসেনের নেতৃত্বে বিজেসি গােদনাইল প্রেস হাউজে আগুন জ্বালিয়ে তখনকার হিসাবে ৩ কোটি টাকার পাট সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যেহেতু দিনরাত এ প্রেস হাউজে কাজ চলে, তাই অধিক রাতকেই নিরাপদ ভেবে রাতের বেলায় অপারেশন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তা ছাড়া। রাতের বেলায় পাটের গুদামের অংশটা প্রায় নির্জন থাকে। তাই ৩ আগস্ট ৬জন মুক্তিযােদ্ধা পি-৮০ স্মােক গ্রেনেড ও প্রয়ােজনীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাত ১টায় জালকুড়ী থেকে রওনা হন। বিশেষ করে ৬জনের সাথে ৬টি চার্জ লাইট। পাটের গুদামগুলাে উচু, দরজাগুলােও দুই পাটে বেশ বড়াে বড়ো। কাজেই পি৮০ স্মােক গ্রেনেডগুলাে ছুড়ে মারতেই আগুন ধরে যায়। টর্চলাইট জ্বালিয়ে নিরিবিলি দ্রুত কাজ সেরে মুক্তিযােদ্ধারা ট্রানজিট পয়েন্টে ফিরে আসেন। দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। এ আগুন নিভতে প্রায় ৩ দিন লাগে। উল্লেখ্য যে, কোনাে বাঙালি আগুন নেভাতে যায় নি। ফলে ৩ কোটি টাকার পাট পুড়ে যাওয়ায় পাকিস্তান সরকারের বিরাট বৈদেশিক মুদ্রার বিপুল ক্ষতি হয়।
সােনারগাঁও অ্যামবুশ-১ (চিলারবাগ)
নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তর-পূর্বে সােনারগাঁও থানার অবস্থান। এ থানার পাশ দিয়েই মেঘনা নদী প্রবাহমান। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগস্ট। দিবসটি উদযাপন করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসররা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। তাদের এ স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচিকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযােদ্ধারা তৎপর হয়ে ওঠেন, যাতে পাকিস্তানিরা স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করতে না পারে। মুক্তিযােদ্ধাদের ১টি দল সােনারগাঁও পার্ক (চিলারবাগ) নামক স্থানে তিন রাস্তার মােড়ে সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক মাইন পুঁতে অ্যামবুশ পেতে বসে থাকেন। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই রাস্তা দিয়ে ৫জন রাজাকার ১টি বেবিট্যাক্সি যােগে পুঁতে রাখা মাইনের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ৫জন রাজাকার ও বেবিট্যাক্সি চালক নিহত হয়।
মুক্তিযােদ্ধারা শ্লোগান দিতে দিতে ঐ স্থান ত্যাগ করেন। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ গােটা এলাকায় আলােড়ন সৃষ্টি করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালাল ও সহযােগীদের পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের সব আশা উবে যায়। এ যুদ্ধে যে-সকল মুক্তিযােদ্ধা অংশগ্রহণ করেন তারা হলেন: ১. অধিনায়ক রুহুল আমিন ২. অধিনায়ক সুলতান আহম্মদ মােল্লা ৩, অধিনায়ক মােহাম্মদ আলী। ৪, সিরাজুল ইসলাম (মাস্টার) ৫. আব্দুল মালেক ৬. আব্দুল বাতেন মােল্লা ৭. হাবিবুল্লাহ ৮. সানাউল্লাহ ৯. সফিউর রহমান ১০. বজলুর রহমান। ১১. আব্দুল মতিন ১২. নজরুল ইসলাম খন্দকার ১৩. মীর বিল্লাল হােসেন। ১৪. নূর মােহাম্মদ মিয়া। ১৫. আজিজুর রহমান ১৬. সামছুল হক ভূইয়া ১৭. বারেক মিয়া। ১৮. আবুল হােসেন। ১৯. হাবিবুর রহমান খান (ফনু) ২০. সােহেল রানা ২১. আব্দুল আউয়াল ২২. সিরাজ ২৩. উৎপল ২৪. হাসমত ২৫. মমিন ২৬. আনােয়ার হােসেন। ২৭. মনিরুজ্জামান ২৮, তােবারক হােসেন ২৯. বাবর হােসেন সরকার এবং আরও অনেকে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড