You dont have javascript enabled! Please enable it! ভাওয়াল-গাজীপুর রেল স্টেশনের যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
ভাওয়াল-গাজীপুর রেল স্টেশনের যুদ্ধ
জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকে ৭ কিলােমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এবং রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশন থেকে ৬ কিলােমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের পার্শ্বে গাজীপুর গ্রামে ভাওয়াল-গাজীপুর রেল স্টেশন অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে যখন পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী, তখন হয়ত তারা শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে রাজধানী ঢাকাকে দখলে রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অস্ত্র ও গােলাবারুদ রেলযােগে ঢাকা আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনী সমগ্র গাজীপুর ও তার আশপাশের এলাকার সমস্ত গােলাবারুদ রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশনে এনে জড়াে করে এবং ১টি মালগাড়িতে লােড করে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রেরণের জন্য প্রস্তুত করে রাখে। ভাওয়াল-গাজীপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাে. মান্নান হােসেন ছিলেন ১জন একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক। স্বাধীনতা অর্জনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তিনি সর্বতােভাবে সহায়তা করেন মুক্তিবাহিনীকে। তিনি গােপনে রেল চলাচলের যাবতীয় সংবাদ মুক্তিবাহিনীকে প্রদান করতেন। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গােলাবারুদ নিয়ে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর ট্রেন রাজেন্দ্রপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, তখন মাে, মান্নান হােসেন সংবাদটি মুক্তিবাহিনীকে প্রদান করেন। পরিকল্পনানুযায়ী মুক্তিবাহিনী স্টেশনের উত্তর দিকের ব্রিজে চিলাইপুর নামক স্থানে প্রথমে বিস্ফোরণের মাধ্যমে বগিকে ধ্বংস/লাইন চ্যুত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
ডিনামাইটের সাহায্যে ২-৩টি বগি ধ্বংস ও লাইন চ্যুত করা হয়। শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিযােদ্ধাদের। অনেকটা সামনাসামনি যুদ্ধ।  পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। এদের সাথে যে-সকল রাজাকার ছিল, তাদের ১জন মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিবাহিনী তাকে গাছের সাথে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনী। গােলাবারুদ ফেলে পশ্চিম দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ প্রধান সড়কের দিকে চলে যায়। পরে মুক্তিবাহিনী সমস্ত অস্ত্র ও গােলাবারুদ নিজেরা সংগ্রহ করে এবং মিত্র বাহিনীর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহার করে। পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকজন সেনা ও রাজাকার সদস্য মাইন বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে কোনাে হতাহত হয় নি।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড