You dont have javascript enabled! Please enable it! ঘিওর থানা আক্রমণ-১ - চারিগাঁও লঞ্চঘাট অভিযান - সংগ্রামের নোটবুক
ঘিওর থানা আক্রমণ-১
বাতেন বাহিনীর কৃতিত্বপূর্ণ অভিযানগুলাের মধ্যে অন্যতম ছিল মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানা দখল। ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষ দিকে এ অভিযানটি পরিচালিত হয়। ঘিওর থানা অভিযান ছিল প্রকৃতপক্ষেই যুদ্ধের গেরিলা কৌশল। বাহিনীর প্রধান খন্দকার আব্দুল বাতেন এক মাল্লা চালিত ১টি ছােটো নৌকা নিয়ে ৫-৬জন সাহসী সঙ্গীসহ ঘিওর থানার বিভিন্ন স্থানে জনসংযােগ ও অস্ত্রশস্ত্রের সন্ধান এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শত্রু সৈন্যদের অবস্থান ও আনাগােনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে যান। ঘিওর থানার অবস্থান, থানার শত্রুর শক্তি, হানাদার বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্রের প্রকৃতি, জনগণের মানসিকতা এবং যােগাযােগের অনুকূল পরিবেশ লক্ষ্য করে খন্দকার আব্দুল বাতেন ঘিওর থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তিনি ২টি কোম্পানি সমাবেশ করেন। আক্রমণের দিনটি ছিল ঘিওর থানা কমপ্লেক্সের হাটের দিন। হাটে প্রচুর ছাগল-ভেড়া বেচাকেনার জন্য আনা হয়। খন্দকার আব্দুল বাতেন ছদ্মবেশে হাটে উপস্থিত হন। থানার বাংকারগুলাের অবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শক্ত সংখ্যা নিজে প্রত্যক্ষ করেন।
হাটে ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা দেখে তিনি নতুন কৌশল প্রয়ােগের সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যার আগেই আগত ২ কোম্পানি থেকে ১৫জন করে ৩০জনের আক্রমণকারী দল গঠন করেন। আব্দুল বাতেনের নেতৃত্বে ছােটো অস্ত্রে সজ্জিত ৩০জনের আক্রমণকারী দল তরকারির ঝাঁকা মাথায় নিয়ে হাটে প্রবেশ করে। তার আগে ছাগল-ভেড়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাহিনীর প্রধানের আলােচনা হয়। দেশ ও জাতির মুক্তির প্রশ্নে তারা বাতেন বাহিনীকে যে-কোনাে ধরনের সহযােগিতা করতে রাজি হন। সন্ধ্যা সমাগত। এমন সময় এক পাল ছাগল-ভেড়া নিয়ে থানার দিকে অগ্রসর হন ব্যবসায়ীরা। রণকৌশলের কারণেই ছাগল-ভেড়ার দলকে ইচ্ছাকৃতভাবে থানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করানাে হয়। ফলে থানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। থানার নিরাপত্তার কাজে নিয়ােজিত সেন্ট্রিরা ছাগল-ভেড়া প্রবেশে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ছাগল-ভেড়া ফিরিয়ে আনার অভিনয় করে থানায় প্রবেশ করেন তরকারির ঝাকা।
মাথায় বাতেন বাহিনীর দুঃসাহসী যােদ্ধারা। তারপরের ইতিহাস অত্যন্ত চমকপ্রদ। বিনা গুলিতে বিনা রক্তপাতে ঘিওর থানা বাতেন বাহিনীর দখলে আসে এখানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ বাতেন বাহিনীর হস্তগত হয়, যা পরবর্তী সময় এ বাহিনীকে ব্যাপক শক্তিশালী করে তােলে। অভিযান শেষে ছাগল-ভেড়া একত্র করে ব্যবসায়ীদের কাছে পৌছে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার আঁধারে তখন হাট চলছিল। জনতা হাটে বেচাকেনায় ব্যস্ত। তারা জানতে পারে নি যে, আধা ঘন্টার মধ্যে বাতেন বাহিনীর যােদ্ধারা থানা দখল করে নিয়েছে। হাটের বেচাকেনায় ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, তার জন্য ‘জয় বাংলা’ বা ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়া হয় নি। ছাগল-ভেড়াগুলাে মালিকদের কাছে পৌছে দিয়ে চিড়া-গুড়ের ব্যবস্থা করে বাতেন বাহিনীর বীর যােদ্ধারা বিজয়ী বেশে দূরে অবস্থিত ছিপ নৌকাগুলােয় আরােহণ করেন। ছিপ নৌকায় করে তারা রওনা হন তাঁদের সদর দপ্তরের দিকে।
চারিগাঁও লঞ্চঘাট অভিযান
১৯৭১ সালের ১৭ জুন মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার দক্ষিণে কালীগঙ্গা নদীর তীরে চারিগাঁও নামক স্থানে মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক তবারক হােসেন লুডুর নেতৃত্বে কালীগঙ্গা নদীপথে আসা ২টি লঞ্চ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি সেনাদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করাই ছিল এ অভিযানের উদ্দেশ্য।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড