নিউইয়র্ক টাইমস, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১
মুক্ত যশোরে বাঙালিদের উল্লাস
যশোর, পাকিস্তান ৮ ডিসেম্বর। বাঙালিরা বাসের ছাদের উপরে নৃত্য করছিল। তারা রাস্তায় চিৎকার করে স্বাধীনতার স্লোগান দিচ্ছিলো। তারা আলিঙ্গন করছিলো, তারা উল্লাস প্রকাশ করছিলো, অন্যান্য জায়গা থেকে আগতদের সাথে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে হাতে হাত মিলাচ্ছিলো।
বাঙালিদের জন্য আজ (৮ ডিসেম্বর) -কৌশলগত পূর্ব পাকিস্তানের যশোরের “স্বাধীনতা দিবস” ছিল। গতকাল (ডিসেম্বর ৭) পর্যন্ত আট মাসের জন্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে ,যারা গত বসন্ত এ এসেছিলো বাংগালিদের বিদ্রোহ দমন করতে।
“মুক্তিদাতা” হিসেবে ভারতীয় সেনারা কাজ করেছে। তারাও বাংগালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মত খুশি। যারা ভারতকে সমর্থন করে, কিন্তু তাদের হাতে উদযাপন করার মত তেমন সময় ছিল না, কেননা তারা পশ্চিম পাকস্তানিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অব্যাহত তাড়া করে খুলনার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো।
ভারতীয়রা খুব হিল্লোলিত এবং হেসে ছবি তুলার জন্য ভংগিমা দিচ্ছিল। তাদের সাঁজোয়া কর্মিবৃন্দ বাহক ট্যাংক এর উপর থেকে পোজ দিচ্ছিল। এবং তারা যশোর থেকে চার মাইল দূরে অপেক্ষা করছিল পুনরায় খুলনার রাস্তায় নামার জন্য।
সপ্তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি পদাতিক অধিনায়ক পাকিস্তানি সেনাদের বলেন “তারা আতঙ্কে পালিয়ে যাচ্ছে””তারা ভাল সরঞ্জাম এবং প্রতিরক্ষা পেয়েছে, কিন্তু তাদের মনোবল ভেংগে গেছে”।
ভারতীয় বাহিনীর অধিকাংশই যেমন বাঙালিদের থেকে আলাদা তেমনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাঞ্জাবি সৈন্য আলাদা ছিল। কিন্তু বাংগালি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের ভারতীয় সমর্থকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ফাঁক সাময়িকভাবে মুছে ফেলা হয়েছে।
উৎফুল্ল বাঙালিরা ভারতীয় সৈন্যদের সাথে পন্টুন সেতু দিতে এক সাথে কাজ করে, কারণ স্থায়ি সেতু গুলো আগেই পাকিস্তানীরা চলে যাবার সময় উড়িয়ে দিয়েছে।
এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সেতু। খুব অভিজ্ঞতার সাথে ধ্বংস করা হয়। এটি ভারত-যশোর সীমান্তে পূর্ব পাকিস্তানের ভিতরে ২৩ মাইল পর্যন্ত ছিল। ছয়টির মধ্যে পাঁচটি ইস্পাতের এবং কাবাথানি নদীতে
কংক্রিট সেতু ছিল, রেলসেতু ২০০ গজ ছিল।
পাকিস্তানিরা এই সেতুগুতারা যশোর থেকে পিছু হটার দুই রাত আগেই জ্বালিয়ে দেয়।
ঝিকরগাছা শহর , যা যশোলো
র থেকে ৯ মাইল দুরে, আজকের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে যেন একটি সৈনদল এবং পিরামিড ভবনের মধ্যে একটি ক্রস চিহ্ন।
সড়ক সেতু নিচের তীরে কাদার ভেতরে বাঙালির শত শত দীর্ঘ সারি দেখে মনে হচ্ছে যেন নতুন সেতুর জন্য সারিবদ্ধ তক্তা।
তারা যেন মেশিনের মত কাজ করছিল,যেমন সেনাবাহিনীর অত্যন্ত নিয়মনিষ্ঠ পেশিবহুল ব্যক্তির মত প্রকৌশলীরা অনেক গুলো খেয়া নোকা বাতাস দিয়া ফুলিয়ে এগুলোকে হাটুপানিতে নিয়ে গেল এবং তারপর এগুলোতে অ্যালমিনিয়াম চুম্বক স্থাপন করলো। চার ঘন্টার মধ্যে সেতুটি তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।