উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করিবার চক্রান্তকে রুখিয়া দাঁড়াইতে হইবে
নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতায় প্রদেশব্যাপী বিক্ষোভ
গত ২৭শে জানুয়ারী তারিখে ঢাকা পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে একমাত্র উর্দু” এবং “উর্দু হরফে বাংলা লিখনের প্রচেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত হইতেছে” বলিয়া যে উক্তি করেন, তার বিরুদ্ধে ঢাকা এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ শুরু হইতেছে।
২১ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক প্রতিবাদ সভা হয়। ৩০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ প্রতীক ধৰ্ম্মঘট পালন করেন এবং বিভিন্ন শিক্ষায়তনের ছাত্রদের সহযােগে এক বিরাট শােভাযাত্রা বাহির করিয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে পূৰ্ব্ব পাক মুসলিম ছাত্রলীগ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ৩১ তারিখে নাজিমুদ্দিনের ভাষা সম্পর্কিত ঘােষণার প্রতিবাদে আন্দোলন গড়িয়া ছাত্রলীগের উদ্যোগে বার লাইব্রেরি স্থলে এক সর্বদলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পূর্ব পাক ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, তমদুন। মজলিস, নিখিল পূর্ব পাক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি। সমবায়ে একটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। জনাব কাজী গােলাম মাহবুব এই কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সর্বদলীয় । সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অফিসাদির ভাষা ও কেন্দ্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণের জন্য খাজা নাজিমুদ্দিন বিগত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়াছিলেন তাহা ভঙ্গ করিবার জন্য তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা হয় এবং অবিলম্বে তাহার ভাষা সম্পর্কিত উক্তি প্রত্যাহার করিয়া বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করিয়া লইবার দাবী জানানাে হয়। উর্দু হরফে বাংলা লিখিবার চক্রান্তের বিরুদ্ধেও এক প্রস্তাবে সরকারকে সতর্ক করিয়া দেওয়া হয়। অপর দুই প্রস্তাবে “শেখ মুজিবরের” আশু মুক্তির দাবী এবং ৪ঠা ফেব্রুয়ারীর ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান।
সূত্র: সাপ্তাহিক সৈনিক, ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২
ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব কতিপয় দলিল -ড. এম আবদুল আলীম