রাজশাহী জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
রাজশাহীর নামকরণ কখন কিভাবে হয়েছিল এটা নিয়ে প্রচুর মতবিরােধ আছে। তবে ঐতিহাসিক তথ্য মােতাবেক বাংলার নবাবী আমল ১৭০০ হতে ১৭২৫ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালের মধ্যে মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলী খাঁন গােটা বাংলাদেশকে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য ১৩টি চাকলায় বিভক্ত করেন। যার মধ্যে চাকলা রাজশাহী নামে একটি বৃহৎ বিস্তৃত এলাকা নির্ধারিত হয়। প্রবাহিত পদ্মা নদীর এই রাজশাহী চাকলাকে তিনি উত্তরে বর্তমান রাজশাহী ও দক্ষিণে মুর্শিদাবাদের সঙ্গে অপর অংশ রাজশাহী নিজ চাকলা নামে অভিহিত করেন। প্রথমে সমগ্র চাকলায়ের রাজস্ব আদায় করতেন হিন্দু রাজ জমিদার উদয় নারায়ণ। তিনি ছিলেন মুর্শিদকুলী খানের একান্ত প্রীতিভাজন ব্যক্তি যে কারণে নবাব তাঁকে রাজা উপাধি প্রদান করেন। এর পরেই পদ্মার দক্ষিণ চাকলা রাজশাহী নামে এক বিস্তৃত এলাকা যা সমগ্র রাজশাহী ও পাবনার অংশ নিয়ে অবস্থিত যেটা ১৭১৪ সালে নবাব মুর্শিদকুলী খান নাটোরের রামজীবনের নিকট বন্দোবস্ত প্রদান করেন। এই জমিদারী পরবর্তীতে নাটোরের রানী ভবানীর শাসনে আসে ও বহু অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃতি লাভ করে। রামজীবন প্রথম নাটোর রাজ যিনি ১৭৩০ সালে মারা গেলে তার দত্তকপুত্র রামকান্ত রাজা হন।
কিন্তু ১৭৫১ সালে রামকান্তের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ভবানী দেবী রানী ভবানী নামে উত্তরাধিকার লাভ করেন। তবে অনেক ভাষ্যকারের মতে প্রথম রাজা উদয় নারায়ণের ওপর প্রীতিবশত এই চাকলার নাম রাজশাহী করেন নবাব মুর্শিদকুলী খান। কিন্তু ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রের মতে “রানী ভবানীর দেয়া নাম রাজশাহী। অবশ্য মি. গ্রান্ট লিখেছেন যে রানী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহী বলা হতাে এবং এই চাকলার বন্দোবস্তরকালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। আগেই বলা হয়েছে পদ্মার উত্তরাঞ্চল প্রায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাবনা পেরিয়ে ঢাকা পর্যন্ত এমনকি নদীয়া, যশাের, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকা রাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়। উদয় নারায়ণের পরে রামজীবন (নাটোর রাজ প্রতিষ্ঠাতা) বন্দোবস্ত পান। যার পরে রামজীবন ১৭৩০ সালে মারা গেলে রামকান্ত রাজা হন। যার মৃত্যু হয় ১৭৫১ সালে। এবং একুশ বছর পরেই রাজ্য লাভ করেন রানী ভবানী যার সময়ে নাটোর রাজ্যের অধীন বিশাল সম্পত্তি লাভ ঘটে। অতএব মি. গান্টের অভিমত রাজশাহীর নাম নাটোর রাজ্যের স্বর্ণ যুগে বানী ভবানীর নামানুসারে করা হয়। ১৭৬৫ হতে ১৭৯৩ সালতক বহু জেলা নিয়ে বিস্তৃত ছিল রাজশাহী জেলা। পরে ইংরেজ আমলে শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে রাজশাহীর অংশ হতেই পাবনা, বগুড়া, যশাের নদীয়া জেলার উৎপত্তি।
পদ্মার দক্ষিণাঞ্চল মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন বিধায় ‘নিজ চাকলা’ নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৪৭ সালের পূর্বে দেশ বিভাগের আগে বােয়ালিয়া থানাধীন পদ্মার অনেক অংশ চিহ্নিত ছিল, যার মধ্যে বাঁশগাড়া, চরসরন্দাজপুর, চরখিদিরপুর উল্লেখযােগ্য। রাজশাহী নাম নিয়ে নিবন্ধকার কিশাের চাঁদ মিত্র লিখেছেন, “রাজশাহীতে রাজা ও জমিদারের বাস হতেই রাজশাহী নামের উৎপত্তি।” কিন্তু এটাও অনুমানভিত্তিক, আবার রাজশাহীর ইতিহাস বৃত্তান্তের লেখক কালী প্রসন্ন। বলেছেন যে, রাজশাহীতে বিদ্রোহ দমনে আলাইপুরে লস্কর খার সাথে যুদ্ধ জয় শেষে রাজা মানসিংহের নামানুসারেই রাজশাহীর নাম। এ প্রসঙ্গে ইংরেজী লেখক বলকম্যান বলেছেন, “ভাতুড়ীয়ার হিন্দু রাজা কংশ বা গণেশ গৌড় রাজ্য জয় করে মুসলমান সুলতানকে পরাজিত করে হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার মতে হিন্দী শব্দ রাজা ও ফরাসী শব্দ শাহী এই দুই নামের সমন্বয়ে রাজশাহী নামের উৎপত্তি।” অনেকের মতে রাজশাহী নামকরণ নবাব মুর্শিদকুলী খান কর্তৃক করা হয়, কারণ এই এলাকায় প্রাচীন জমিদার উদয় নারায়ণকে তিনি অত্যন্ত ভালােবাসতেন ও রাজা উপাধি দান করেই এই সমগ্র এলাকার নাম রাজশাহী রাখেন। এই মতই গ্রহণযােগ্য বলে একটি ঐতিহাসিক সূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। রাজশাহী ভূখণ্ড তখন বিশাল বিস্তৃত অঞ্চল হিসাবেই উল্লেখ করেলে ও মােগল বাদশাহের অনুমােদন লাভ করেন। পরবর্তীকালে মােগল বাদশাহ এ অঞ্চলকে সুবায়ে বাংলা নামকরণ করেন।
এবং চাকলাগুলাে হতে রাজস্ব আদায়ের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় পরিণত করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আমলে এ অঞ্চলগুলাে হতে অনেকগুলাে জেলার সৃষ্টি করা হয়। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হওয়ায় রাজা জমিদার ও মহারাজাদের প্রভাব বিস্তার ঘটে। ১৭৮৬ সালে রাজশাহীর আয়তন ছিল ১৩ হাজার বর্গমাইল অর্থাৎ পাবনা, বগুড়া, রংপুর, মালদহ ও দিনাজপুরের অনেক অংশ রাজশাহীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজস্ব আদায়ের জটিলতা দেখা দিলে ১৭৯৩ সালে রাজশাহীর সীমানা পরিবর্তন হয়- গঙ্গার দক্ষিণাংশ মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, ও যশােরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে সীমানা আরও সংকুচিত করা হয় ১৮১৩ সালে। রাজশাহী হতে চাপাই, রােহনপুর ও পুর্নিয়ার এবং দিনাজপুরের অংশ নিয়ে মালদহ, ১৮২১ সালে আদমদীঘি, নােয়াকিল্লা, শেরপুর ও বগুড়া রাজশাহী হতে পৃথক হয় এবং রংপুর ও দিনাজপুরের ১২টি থানা নিয়ে বগুড়া জেলা হয়।
নাটোর তখন রাজশাহীর সদর দপ্তর। কারণ নাটোরের রাজবংশ সমগ্র অঞ্চলের ওপর তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ছােট নাগপুর, ভাগলপুর, পুর্নিয়া, বিহারের অংশ হলেও রাজশাহীর অন্তর্গত ছিল। তৎকালে বাঙ্গলা প্রেসিডেন্সির সমগ্র এলাকার এক-তৃতীয়াংশ ছিল রাজশাহীর অন্তর্গত। কোনাে এক বিদেশী পর্যটকের বিবরণ মতে রাজশাহীর সমগ্র এলাকার পরিদর্শনে তার সময় লেগেছিল একটানা পঁয়ত্রিশ দিন। আগেই বলেছি রানী ভবানীর রাজ্য ছিল আয়তনে সর্ববৃহৎ। যার পরগনা ছিল ১৬৪টি ও মােট রাজস্ব আদায় হতাে আঠারাে লক্ষ তেপান্ন হাজার টাকার উর্ধ্বে। এই রাজকীয় প্রভাব বলয়ে ১৮২৫ সাল পর্যন্ত নাটোরই ছিল রাজশাহীর প্রধান নগর ও সদর দপ্তর যা পরবর্তীতে রাজশাহীতে স্থানান্তরিত হয়।
চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ঐতিহাসিক গবেষণায় রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ দার্জিলিং ও কুচবিহারসহ গঠিত অঞ্চলকে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে স্বীকার করা হয়। খ্রিস্টীয় দশম শতকের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী পশ্চিমে গঙ্গা, পূর্বে করতােয়া নদী বরেন্দ্রী বা বরেন্দ্র চূড়ামণি নামে অভিহিত করেন। বরেন্দ্রভূমি সৃষ্টির সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামের ভূ-খণ্ডের সৃষ্টির ইতিহাস জড়িত। নবাবগঞ্জ জেলার ইতিহাস আলােচনাকালে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, যেহেতু নবাবগঞ্জ প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন ও আধুনিক উত্তরবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য একটি ভৌগােলিক অংশ, সেহেতু তার ভাগ্যও ঐ এলাকার রাজনৈতিক ভাগ্যের সঙ্গে বরাবরই ওতপ্রােতভাবে জড়িত ছিল। পুণ্ড্রবর্ধনে যখন যে শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নবাবগঞ্জেও তখন সেই শাসন বিস্তৃত হয়েছে। তবে রাজনৈতিকভাবে কখন থেকে নবাবগঞ্জ সার্বভৌম শাসনকর্তার শাসনে শাসিত হতে থাকে তার কোনাে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। ভৌগােলিক সীমারেখায় চাপাইনবাবগঞ্জের অবস্থান উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে। এ জেলার উত্তরে ভারতের মালদহ জেলা, দক্ষিণে পদ্মা নদী ও মুর্শিদাবাদ জেলা, পশ্চিমে মালদহ জেলা এবং পদ্মানদী, পূর্ব দিকে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলাদ্বয় অবস্থিত। ভৌগােলিক মানচিত্রে এটি ২৪°০৬ হতে ২৫°০৬ উত্তর দ্রাঘিমা এবং ৮৮°০৭ থেকে ৮৮°৩ পূর্ব অক্ষাংশে অবস্থিত। ১৯৯২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নবাবগঞ্জ জেলার আয়তন ৬৭৯.০৫ বর্গমাইল। বর্তমান লােকসংখ্যা ১১,৪৭,০০০ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৫,৮১,৫০০ জন এবং মহিলা ৫,৬৫,৫০০ জন। জেলায় পৌরসভা ৩টি এবং ১,৪৭৩টি গ্রাম রয়েছে।
বরেন্দ্র ভূমির এ জেলায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশি হলেও এ জেলায় হিন্দুদের সংখ্যাও কম নয়। বেশ কিছু খ্রিষ্টান এ জেলায় বাস করে। অধিবাসীদের মধ্যে সাঁওতাল, ওঁরাও প্রভৃতি উপজাতিও বিভিন্ন স্থানে বাস করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় রাডক্লিফ রােয়েদাদ অনুসারে নবাবগঞ্জ ও তার পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ, নাচোল, ভােলাহাট ও গােমস্তাপুর থানাকে মালদহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার্থে ১৯৪৮ সালের ১ নভেম্বর রাজশাহী জেলার একটি থানা ও দিনাজপুরের অন্তর্ভুক্ত পােরশা থানাসহ একটি নতুন মহকুমার সৃষ্টি হয়। এবং নবাবগঞ্জ শহরেই মহকুমার সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। তাই নবাবগঞ্জের নাম অনুসারে নতুন মহকুমার নাম রাখা হয় নবাবগঞ্জ। মহকুমা গঠিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ নবাবগঞ্জের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেন। প্রথম দিকে রাজশাহী সদরের মহকুমা হাকিম, নবাবগঞ্জ মহকুমার যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করতেন। তারপর সরকারি অফিসের জন্য কয়েকটি বাড়ি হুকুম দখল করে মহকুমার যাবতীয় অফিস নবাবগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়। কিছু দিন পর নবাবগঞ্জের জন্য মহকুমা হাকিম নিয়ােগ করা প্রয়ােজন হলে নবাবগঞ্জের নামকরণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা যায় পূর্বে এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহার ভূমি। যার অবস্থান ছিল বর্তমান দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা তাদের পাত্রমিত্রসহ এখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ ।
যতদূর জানা যায় বাংলা বিহার উড়িষ্যার অন্যতম নবাব সরফরাজ খাঁ। (রাজত্বকাল ১৭৩৯-৪০খ্রিষ্টাব্দ) একবার শিকারে এসে যে স্থানটিতে ছাউনী ফেলেছিলেন, তা-ই পরে নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। তবে অধিকাংশ গবেষকের মতে নবাব আলীবর্দী খাঁর আমলেই (১৭৪০-৬৫ খ্রিষ্টাব্দ) নবাবগঞ্জ নামকরণ হয়। অন্যদিকে নবাবগঞ্জের সাথে চাঁপাই শব্দের সংযুক্তি সম্পর্কে জানা যায় বর্তমানে পাঠান পাড়া নামে খ্যাত আমিরাবাজারের অদূরে এক সময় দুর্ভেদ্য জংগল ছিল। চাপাই গ্রামের পথে গৌকুলেও নিবিড় বন ছিল। সেখানে নানা প্রকার হিংস্র জানােয়ার বসবাস করতাে। নবাব ও নবাব কর্মীরা এ স্থানে। তাঁবু স্থাপন করে বন্যপশু শিকার করতেন। শিকারের কারণে স্থানটি তখন মুর্শিদাবাদে খুবই পরিচিত হয়ে ওঠে। কালক্রমে নবাবগঞ্জের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নবাবগঞ্জের ডাকঘরটি চাপাই গ্রামে অবস্থিত হওয়ায় নবাবগঞ্জ ‘চাপাই নবাবগঞ্জ’ নামে পরিচিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই নবাবগঞ্জকে জেলায় উন্নত করার জোর দাবি চলতে থাকে। কিন্তু বিরাজমান অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘদিন তা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। ১৯৮৪ সালে দেশব্যাপী প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসাবে নবাবগঞ্জ মহকুমা ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ জেলায় উন্নত হয়। জেলাটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের দিক দিয়ে বেশ সমৃদ্ধ। এখানে অবস্থিত ঐতিহাসিক সােনামসজিদ, রাজবিবি মসজিদ, নওদা বুরুজর, দারসবাড়ী, শিবমন্দির, জোড়ামাঠ, বারঘরিয়া, কাচারী, ঐতিহাসিক কালা পাহাড়ের ভিউ, হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহর মাজার, শাহ বুলন্দ শাহ (রাঃ) মাজার ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। চাপাইনবাবগঞ্জের মাটি যাদের জন্য ধন্য তারা হলেন- হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ (ধর্মসাধক), মরহুম অসিমুদ্দিন, মমতাজউদ্দিন আহম্মদ (নাট্যকার), মুন্সী নাসির উদ্দিন, সমাজকর্মী ইদ্রিস আহমদ মিঞা, লেখিকা জাহানারা চৌধুরী, সাহিত্যিক মােহসীন আহমদ, সঙ্গীত চর্চায় ব্যোমকেশ বাবু, মনিসাহা, মঙ্গলমাষ্টার, শামসুদ্দিন প্রমুখ।
নাটোর জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত ও উত্তর-পশ্চিম বাংলার বিপুলভাবে সমৃদ্ধ জনপদ নাটোর জেলা। পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে প্রবাহিত পদ্মা নদীর শাখা বড়াল ও নারদের তীরে বিস্তীর্ণ সমতল এলাকা জুড়ে অবস্থিত উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের শিল্প, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যােগাযােগের কেন্দ্রবিন্দু নাটোর জেলা। এ জেলার মােট আয়তন ৫৯২ বর্গমাইল (১৫৩৫ বর্গকিলােমিটার) এবং মােট জনসংখ্যা ১০,৬৬,১৫৮ জন (১৯৮১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)। ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দে নাটোরকে মহকুমা ঘােষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের আমলে নাটোরকে জেলা ঘােষণা করা হয়। বর্তমানে ছয়টি উপজেলা নিয়ে (জেলা সদরসহ) এই জেলা গঠিত। উপজেলা নাটোর রাজ্যের রাজধানী ছিল। পরবর্তীতে নারদ নদীর প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় তা রমাপুর বােয়ালিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। নাটোর রানী ভবানী অর্ধশত বৎসর। যাবৎ শাসন করেছিলেন। এই জেলার প্রভাবশালী রাজা-জমিদারদের মধ্যে ছিলেন কামদেব মৈত্র, তাঁর দ্বিতীয় পুত্র রঘুনন্দন এবং রঘুনন্দনের অগ্রজ রামজীবন। রামজীবনের মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র তরুণ মহারাজা রামকান্ত ও তার পত্নী রানীভবানী উত্তরাধিকার সূত্রে নাটোরের বিশাল জমিদারী লাভ করেন। এবং রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানী দীর্ঘ অর্ধশত বৎসর এ জমিদারী পরিচালনা করেন। এ ছাড়াও নাটোর জেলায় অনেক কবি, সাহিত্যিক, লেখক এবং রাজনীতিবিদ জন্মগ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে রাজা জগদীন্দ্রনাথ রায়, কাজী জসীম, জুনুন উদ্দীন, কবীন্দ্র মজুমদার, গজেন্দ্রনাথ কর্মকার, মােহাম্মদ আফজাল, আনন্দমােহন বাগচী, যদুনাথ সরকার (ইংরেজি) প্রমুখের নাম উল্লেখযােগ্য। প্রাচীন নগরী হিসেবে এ জেলার দর্শনীয় এবং প্রসিদ্ধ স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে, নাটোরের রাজবাড়ী যা বর্তমানে উত্তরা গনভবন নামে পরিচিত, তাছাড়া দিঘাপাতিয়া জমিদারবাড়ী, চলনবিল ইত্যাদি। এখানকার রাজা প্রমদনাথ রায়ের তৃতীয় ভ্রাতা শরকুমার রায় এম এ প্রত্মতত্ত্বের প্রতি খুবই অনুরক্ত ছিলেন এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র রিসার্চ সােসাইটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সহযােগিতা করেছিলেন। তিনি নিজে উক্ত সােসাইটির সভাপতিও ছিলেন।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড