যুদ্ধ বিরতির পরও পাক বাহিনীর গুলি
মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক আহত
চিফ অব দি স্টাফ গুরুতর আহত
শ্রীহট্ট (বাংলাদেশ), ১৮ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ কর্নেল ওসমানী আহত এবং মুক্তিবাহিনীর চিফ অব দি স্টাফ কর্নেল রব গুরুতর আহত হইয়াছেন। এই ঘটনাটি ঘটে গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৫টায় যখন তাহারা হেলিকপ্টার যােগে কুমিল্লা সেক্টর হইতে শ্রীহট্ট যাইতেছিলেন। উল্লেখযােগ্য যে, উক্ত দিন বিকাল ৪-৩১ মি: সময়ে ঢাকায় বাংলাদেশের দখলদার বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. নিয়াজী ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছিলেন এবং এই আত্মসমর্পণ সমগ্র বাংলাদেশের দখলদার বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।
উক্ত হেলিকপ্টারে কর্নেল ওসমানী এবং কর্নেল রবের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর লাইন্স অফিসার ব্রিগেডিয়ার ইউ কে গুপ্তা, সি-ইন-সি’র এ ডি সি শেখ কামালুদ্দিন (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পুত্র), মুক্তিবাহিনীর পি আর ও মুস্তাফা আল্লামা এবং বাংলাদেশের জন্মভূমি’ পত্রিকার সম্পাদক। হেলিকপ্টারটি যখন শ্রীহট্ট শহরের দিকে অগ্রসর হইতেছিল তখন সুরমা ব্রিজ হইতে পাক বাহিনী হেলিপ্টারটির উপর গুলি বর্ষণ করে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, কর্নেল ওসমানী ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের নিকটে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী অফিসার ও সেনাদের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া শ্রীহট্ট, পরিদর্শনে রওয়ানা হইয়া যান। তাহারা শ্রীহট্ট শহরের উপকণ্ঠে পৌছিলে হেলিকপ্টারটি আক্রান্ত হয় এবং ইহাতে পাঁচটি বুলেট আঘাত করে। একটি বুলেট কর্নেল রবের উরুদেশ ভেদ করিয়া চলিয়া যায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হইয়া যান। কর্নেল ওসমানীর আঘাত অবশ্য গুরুতর নয়। দুটি বুলেট হেলিকপ্টারটির পেট্রল ট্যাঙ্কে আঘাত করে। কিন্তু ইহা বুলেট প্রুফ হওয়ায় ইহার বিশেষ ক্ষতি হয় নাই। ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত এবং পি আর ও আল্লামা গুলির আঘাত পান। তবে তাহা মারাত্মক নয়।
কর্নেল ওসমানীর নির্দেশে হেলিকপ্টারটির গতি পরিবর্তন করা হয়। পাইলট শ্রী আর পি সিং কৌশলে হেলিকপ্টারটিকে ফেঞ্চুগঞ্জের নিকটে একটি ধান ক্ষেতে নামান। তখন আর ইহাতে জ্বালানি ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে কর্নেল রবকে ফেঞ্চুগঞ্জের ফিল্ড হাসপাতালে পাঠানাে হয় এবং সেখান হইতে তাহাকে ঢাকা অথবা অন্য কোনাে হাসপাতালে পাঠানাে হইতে পারে। গভীর রাত্রে কর্নেল ওসমানী শমসেরনগর অভিমুখে রওয়ানা হইয়া যান।
সূত্র: জাগরণ
১৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১