You dont have javascript enabled! Please enable it! গাবতলী রেলস্টেশনের যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
গাবতলী রেলস্টেশনের যুদ্ধ
ভূমিকা
গাবতলী রেল স্টেশনটির অবস্থান বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলােমিটার উত্তর-পূর্বে। এ রেল স্টেশনটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী দখল করে নেয়। এখানে তারা একটি আরআর স্টেশন স্থাপন করেছিল, আমাদের মুক্তিযােদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার বিনিময়ে গাবতলী রেল স্টেশন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
ভূমির পরিচিতি
একটি নকশা ছাড়া কোনাে তথ্য সংগ্রহ করা যায় নি। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক. পাকিস্তানি বাহিনী: ১ প্লাটুন। খ, মুক্তিবাহিনী: হুমায়ুন আলম চান্দুসহ ১০জন, মাে. আলমগীর হােসেনসহ ১০জন, মাে. রেজাউল কবিরসহ ১০জন। শত্রুর বিন্যাস পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা গাবতলী রেল স্টেশনের দোতলা বিল্ডিংয়ের উপর যােগাযােগ করার জন্য আরআর স্থাপন করে। ঐ বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর ১টি এমজি স্থাপন করা হয়েছিল।
যুদ্ধের বর্ণনা
২৫ নভেম্বর গাবতলীর নিকটস্থ জয়ভােগা গ্রামের রেলসেতু পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে দখল করার জন্য একদল মুক্তিযােদ্ধা পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণ করে গুলিবিনিময় করতে থাকে, ফলে পাকিস্তানি সৈন্যরা গাবতলী স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে জয়লােগা ও বাইগুনী গ্রামের দিকে গুলিবর্ষণ করতে করতে অগ্রসর হয়। ফলে বাইগুনী গ্রামের আবুল হােসেনসহ কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত হয়। পরে নেপালতলী গ্রামের দিক থেকে গেরিলা বাহিনীর ১টি দল এসে পাল্টা আক্রমণ চালায়। পাল্টা আক্রমণ করার ফলে পাকিস্তানি সৈন্যরা গাবতলী ক্যাম্পে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা
মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের কারণ মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের পিছনে নিচের কারণগুলাে উল্লেখ করা যায়: ক. সুদক্ষ নেতৃত্ব: মুক্তিবাহিনীর নেতারা ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, যারা দেশমাতৃকার জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন করতে সদা প্রস্তুত ছিলেন। তারা সঠিক নেতৃত্বদানের মাধ্যমে অপ্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনীকে সুযােগ্য ও সুদক্ষ মুক্তিবাহিনীতে পরিণত করেছিলেন। উচ্চ মনােবল: মুক্তিবাহিনী একের পর এক পাকিস্তানি বাহিনীর দখলকৃত বিভিন্ন ঘাটি ও স্থানে আক্রমণ করে যাচ্ছিল। মুক্তিবাহিনীর খাদ্য, বাসস্থান, পােশাক, অস্ত্র সরঞ্জামাদির অভাব থাকা সত্ত্বেও তাদের উচ্চ মনােবলের জন্য এ দেশকে শত্রুবাহিনীর কালাে ছােবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের কারণ পাকিস্তানি বাহিনী নিচের কারণগুলাের জন্য পরাজিত হয়েছে বলে মনে করা হয়:
ক, স্থানীয় জনগণের বিরুদ্ধাচরণ: পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় জনগণের কোনাে প্রকার সাহায্য-সহযােগিতা পায়নি, বরং গ্রামের পর গ্রাম আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং এ কারণটিই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের মূল কারণ। তারা কখনাে কল্পনাও করতে পারেনি যে বাঙালি জাতি এত ক্ষিপ্রতার সাথে আমরণ লড়াই করবে।
খ. মুক্তিবাহিনীর দেশাত্মবােধ: মুক্তিবাহিনী তাদের অগাধ দেশপ্রেম ও সাহসের দরুন শুধু ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দ্বারা বীরের ন্যায় যুদ্ধ করে। মাতৃভূমিকে করেছে শত্রুমুক্ত। গেরিলাযুদ্ধ কৌশল: মুক্তিবাহিনীর গেরিলাযুদ্ধ পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য ভয়ের ছিল। মুক্তিবাহিনীর আকস্মিক হামলা পাকিস্তানি বাহিনীর মনে সর্বদাই এক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর যােগাযােগ ব্যবস্থাকে অচল করে দিয়েছিল।  ঘ, সঠিক গােয়েন্দা তথ্য: পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিটি অবস্থান ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে স্থানীয় জনগণের মাধ্যমে আগেভাগেই মুক্তিবাহিনী জানতে পারতাে। ফলে মুক্তিবাহিনী পূর্ব থেকেই প্রস্তুত থাকতাে যা পাকিস্তানি বাহিনীর জানা ছিল না।
উপসংহার
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বগুড়ায় যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তাতে মুক্তিবাহিনীঅগাধ দেশপ্রেম ও নির্ভীকতার স্বাক্ষর রাখে। ভারতের কোনােপ্রকার উল্লেখযােগ্য সাহায্য ছাড়াই মুক্তিবাহিনী এ অঞ্চল থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড