মাদলা আক্রমণ
ভূমিকা
বগুড়া শহরের ১০ কিলােমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মাদলা ইউনিয়নের অবস্থান ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এ ইউনিয়নটি দখল করে নেয় এবং এখানে তাদের ১ প্লাটুন সৈন্য মােতায়েন করে। ভূমির পরিচিতি একটি নকশা ছাড়া অন্য কোনাে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ:
ক. পাকিস্তানি বাহিনী: ১ প্লাটুন রাজাকার এবং ৩-৪জন পাকিস্তানি সেনা।
খ. মুক্তিবাহিনী: অধিনায়ক রেজাউল এবং মুক্তিবাহিনীর ২২জন সদস্য। যুদ্ধের বর্ণনা ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মাদলা ইউনিয়নের শ্মশানকান্দি গ্রামে রাজাকাররা একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩-৪জন সৈন্য রাজাকার রিক্রুটিং ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতাে। মুক্তিযােদ্ধারা এ ক্যাম্পটি আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মােতাবেক সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে রেজাউল বাকির নেতৃত্বে ২২জনের ১টি মুক্তিযােদ্ধা দল হালকা অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পটির উত্তর ও পশ্চিম দিকে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টায় মুক্তিযােদ্ধারা ফায়ার শুরু করেন। রাজাকাররাও পাল্টা ফায়ার করে। এভাবে ৩ ঘণ্টা ফায়ার চলার পর রাজাকাররা ক্যাম্পটি ত্যাগ করে পূর্ব দিকে পলায়ন করে। মুক্তিযােদ্ধারা পরিত্যক্ত ক্যাম্প থেকে কিছু সামরিক সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেন।
বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা
মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের কারণ মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের পিছনে নিচের কারণগুলাে উল্লেখ করা যায়:
ক, পর্যাপ্ত গােলাবারুদের সরবরাহ: মুক্তিযােদ্ধাদের পর্যাপ্ত গােলাবারুদের সরবরাহ ছিল বলেই যুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছিলেন।
খ. সঠিক এলাকা পর্যবেক্ষণ: মুক্তিযােদ্ধারা এলাকাটি খুব ভালােভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যার কারণে যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়েছে।
গ, পরিকল্পিত যুদ্ধ পরিচালনা: যুদ্ধে সঠিক পরিকল্পনা ছিল এবং মুক্তিযােদ্ধারা হালকা অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পটির উত্তর ও পশ্চিম দিকে অবস্থান নেন। ঘ, উচ্চ মনােবল: মুক্তিবাহিনী অনবরত একের পর এক পাকিস্তানি। বাহিনীর দখলকৃত বিভিন্ন ঘাটি ও স্থানে আক্রমণ করে যাচ্ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবল খুব দৃঢ় হওয়ায় রাজাকাররা ৩ ঘন্টা ফায়ার চালানাের পরও পরাজিত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের কারণ পাকিস্তানি বাহিনী নিচের কারণগুলাের জন্য পরাজিত হয়েছে বলে ধারণা করা ক. দুর্বল মনােবল: রাজাকারদের মনােবল দুর্বল হওয়ায় মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল।
খ. পর্যাপ্ত গােলাবারুদের অভাব: রাজাকারদের গােলাবারুদের অভাব ছিল বলে যুদ্ধে পরাজিত হয়।
গ. অপরিকল্পিত যুদ্ধ পরিচালনা: রাজাকার বাহিনী অতর্কিত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই মুক্তিযােদ্ধাদের পরিকল্পিত আক্রমণের মুখে তারা পরাজিত হয়।
উপসংহার
১৯৭১ সালের মাদলা ইউনিয়নে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস ও দেশাত্মবােধের পরিচয় দেয়।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড