মোশতাকের ঋণ মওকুফের ফাইল তাজউদ্দীনের টেবিলে
একবার একটা ফাইল এল আমাদের মন্ত্রণালয়ে। সেই ফাইলে দেখা গেল, খন্দকার মােশতাক ১২ বা ১৪ হাজার টাকা লােন নিয়েছিলেন কোন একটা ব্যাংক থেকে পাকিস্তান আমলে। এখন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত করেছেন যেন তার ওই লােনটা মওকুফ করে দেয়া হয় । এই দরখাস্ত পড়ে তাজউদ্দীন সাহেব খন্দকার মােশতাকের কাছে টেলিফোন করলেন। বললেন যে, ‘মােশতাক ভাই, আপনি ঋণ মওকুফ চাচ্ছেন, কিন্তু আপনার টাকার পরিমাণটা তাে এমন কিছু বেশি না। আর মন্ত্রী হিসেবে এক মন্ত্রী আর এক মন্ত্রীকে ঋণ মওকুফ করে দিচ্ছে দেখতে ভাল লাগে না। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, এটা নিয়ে পরে আপনি সমালােচনার মুখােমুখি হতে পারেন। আপনি মন্ত্রী না হলে কেউ এই নিয়ে কোনদিন আলােচনাও করত না। কিন্তু যেহেতু আপনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, স্বাভাবিক কারণেই হয়ত এটা নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে যে মন্ত্রী তার ক্ষমতাবলে ঋণ মওকুফ করিয়ে নিয়েছেন। আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন—যদিও নিচের দিক থেকে ঋণ মওকুফের সুপারিশ করা হয়েছে।’ এই কথা বলার পরে মনে হল খন্দকার মােশতাক এটা খুব পছন্দ করলেন না। কারণ টেলিফোন রেখে, দিয়ে তাজউদ্দীন সাহেব একটা মন্তব্য করেছিলেন যা তিনি সাধারণত করতেন না। তাজউদ্দীন সাহেব বললেন যে, আমি হলে তাে কখনই এই ধরনের আবেদন করতাম না। প্রথম কথা হচ্ছে যে, পরিমাণটা ছােট। দ্বিতীয় কথা, এরকম অসুবিধা কষ্ট তাে অনেকেরই হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় আমাদের গাড়ি চুরি গেল। দেশের বাড়ি পুড়িয়ে দিল। আমি কি কখনও বলেছি সরকারকে যে আমাকে এরকম ক্ষতিপূরণ দেয়া হােক বা এটা নিয়ে আমি হৈচৈ করেছি? যুদ্ধের সময় কষ্ট হবেই, সেটা সবারই হয়েছে এবং আমাদেরও হয়েছে। তাঁর মন্ত্রী হিসেবে এই কাজ করাটা ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি। আমি তখন বললাম যে, ‘স্যার, কিন্তু তিনি এই সুবিধা চাচ্ছেন, আর সব দিক থেকে রিকমেন্ডেডও হয়েছে—আপনি চিন্তা করে দেখেন। আবার তিনি তাে ফোনে রাগও করেছেন বললেন। আমার যতদূর মনে আছে, তিনি সই দিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি তখন একটা কথা বলেছিলেন যে, ‘চৌধুরী সাহেব, ওই লােকটা কিন্তু একটা ভাইপার, একে আপনারা কেউ বাইরে থেকে চিনবেন না। আমি দেখেছি এ সাপের চাইতেও বিষাক্ত।’ এই মন্তব্যটা তাজউদ্দীন সাহেব করেছিলেন খন্দকার মােশতাক সম্বন্ধে। এছাড়াও হয়ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলােচনা করছেন কয়েকজনের সাথে, সেই সময় তিনি কখনও উল্লেখ করেছেন খন্দকার মােশতাকের রােল, তার ‘৭১এর ভূমিকা, যে জন্য তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে হয়েছিল।
Reference:
আবু সাইদ চৌধুরী
তাজউদ্দীন আহমদ – আলোকের অনন্তধারা