You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.06.25 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | বাস দুর্ঘটনা | নয়া রেলপথ উদ্বোধন | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২৫শে জুন, সোমবার ১০ই আষাঢ়, ১৩৮০

বাস দুর্ঘটনা

আগে যা ছিল দুর্ঘটনা আজ তা নিত্যদিনের ঘটনা। বাস উল্টিয়ে যাত্রীদের প্রাণহানি অথবা লঞ্চ ডুবিতে আরোহীদের মৃত্যু নিয়ে আজকাল আর কানে বাজে না। হরহামেশা এমনতর ঘটনা ঘটছে। রোজ রোজ সংবাদপত্রসমূহ এ ঘটনার কথা লিখা হচ্ছে। প্রতিকার প্রতিবিধান এর ব্যবস্থা নেই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে কাল যে অসতর্কতার জন্য অথবা অবস্থার জন্য কজন লোকের প্রাণহানি খাঁচাছাড়া হয়েছে আজকের ঘটনার জন্য দায়ী সেই একই অবস্থা অথবা অসতর্কতা।
গতপরশু এক রাস্তার দুটি ভিন্ন স্থানে বাস দুর্ঘটনায় যে দুজন ব্যক্তি নিহত এবং প্রায় ৭৫জন আহত হয়েছে এটাও কোন বিচ্ছিন্ন অথবা অপ্রত্যাশিত কোন দুর্ঘটনা নয়। একটি দুর্ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্টে যা বলা হয়েছে তা হলো সেদিন রাত আটটার সময় বিআরটিসি’র ১৪ নম্বর রুটের একটি যাত্রীবোঝাই বাস আদমজী যাবার পথে সায়েদাবাদ ব্রিজে ব্রেক কষে ধরে। কিন্তু ব্রেক ফেল করায় তা পাশের একটি খাদে উল্টে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় বাসচালকের কি দোষ ছিল, কত দ্রুত চলতে থাকলে বাসের ব্রেক ফেল করতে পারে তার সরকারের অনুসন্ধানকারী দলই বের করবেন। কিন্তু কথা হলো যে, তথ্যটি পাওয়া যাবে সে অসতর্কতার কথাটির জানা যাবে তা থেকে পরিবর্তকালে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করবে কি না।
দেশে পরিবহনের ব্যবস্থা স্বল্প। বাস নেই, লঞ্চ নেই। যা আছে চাহিদার তুলনায় তার স্বল্পতা কাউকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় না। শহরের যাত্রীবোঝাই বাস যে কাউরই আশঙ্কার উদ্রেক না করে পারে না। যেখানে বাসে ঝুলে, ছাদের উপরে চড়ে, অসংখ্য যাত্রীকে ‘এপাড়া ওপাড়া’ ‘এ শহর ওশহর’ করতে হয় সেখানে স্বাভাবিকভাবে বাসচালকের অধিকার ও সতর্কতার সকলেই আশা করেন। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা কি? ঝুলন্ত যাত্রীনিবাস যখন একদিকে হেলে পড়ে তখন ওই ঢাকার রাজপথে বাসচালকদের যে তীব্রতার সঙ্গে এদিক-ওদিক মোড় নিতে দেখা যায় তা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। অবস্থা দেখে অবশ্যই একজনের ঢাকা শহরে বাস দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কার চাইতে কম বলে মনে হবে।
সরকার বিদেশ থেকে যে বাস আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছিলো তা কোন ফাইলে চাপা পড়ে রয়েছে আমাদের জানা নেই। ভারত থেকে যে বাস আনা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত স্বল্প। জাপান থেকে বাস আমদানির খবর বেরিয়েছিল কাগজে। এছাড়া পুরনো যে সকল বাস ডিপি গুলোতে পড়ে রয়েছে সেগুলো সরাবার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা অথবা প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আনতে কত সময় লাগবে তা জনগণ জানতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। এখন যা দুরবস্থা চলছে তা মানুষ মেনে নিতে পারবে তখনই যখন তাদের সামনে আশ্বাস থাকবে যে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই দুরবস্থার অবসান ঘটবে। পরিবহন ব্যবস্থার চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার উদ্যোগী হবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এই অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থায় যাতে করে কারো অসতর্কতার জন্য যাত্রীসাধারণের প্রাণ খোয়াতে না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলেরই দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক।

নয়া রেলপথ উদ্বোধন

ফরিদপুর থেকে তালমা দশ মাইলের একটা রেলপথ উদ্বোধন করা হয়েছে গত পরশু। এই রেলপথ ফরিদপুর-বরিশাল রেল প্রকল্প একটা অংশ। আগামী পাঁচশালা পরিকল্পনার সময়সীমার মধ্যে উক্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
রেলপথ না থাকায় নদীবহুল এই অঞ্চল একমাত্র নৌপথে বাইরের জগতের সঙ্গে এতদিন যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক আমলে নানা মিষ্টি কথার মধ্যে এই অঞ্চলের রেলপথ নির্মাণের কথাও বিভিন্ন সময় ঔপনিবেশিক শাসন সম্প্রদায়ের মুখ থেকে শোনা গিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ অঞ্চলের লোকরা আগের মতোই দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।
স্বাধীনতাত্তোর কাল থেকেই হানাদার বাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত যোগাযোগব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং সামগ্রিক দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। রেল সেক্টরে ইতিমধ্যেই নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ফরিদপুর-বরিশাল ঈশ্বরদী পাবনা রেল প্রজেক্ট এবং যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এবারের বাজেটে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিশেষ সংস্থান রাখা হয়েছে।
ফরিদপুর বরিশাল রেল যোগাযোগ স্থাপনের এই প্রাথমিক উদ্যোগ সে অঞ্চলের জনসাধারনের মনে আশার সঞ্চার করবে। বহুদিনের পুরনো তাদের এই দাবি পুরণ হতে চলেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের জনসাধারণের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে তাদের লেনদেনের যে সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে তা প্রণিধানযোগ্য। আমরা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীবৃন্দ কে অভিনন্দন জানাই। সঙ্গে সঙ্গে একটা ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও আমরা মনে করি। এমন মহা উদ্যোগ লাল ফিতার দৌরাত্ম্য অথবা স্বার্থন্বেষী মহলের চক্রান্তে বিলম্বিত হতে পারে। এমন দৃষ্টান্ত যে আমাদের দেশে একেবারেই বিরল এমন কথা বলা যাবে না। সুতরাং প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আত্মতৃপ্তি হবার অবকাশ নেই।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন