ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরের আরও কিছু কথা
সাক্ষাৎকারঃ আব্দুল করিম খন্দকার
ডেপুটি চীফ অফ ষ্টাফ বাংলাদেশ ফোর্সেস
(জুন ৭১- ডিসেম্বর ৭১)
২৩ মার্চ ১৯৭১- এ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ঢাকাতে এক আন্তঃসার্ভিসেস কুচকাওয়াজের আয়োজন করার কথা হয়েছিল। আমাকে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌ বাহিনীর ঐ প্যারেডের প্যারেড কমান্ডার এর দায়ীত্ব দেওয়া হয়। জাকজমকের সাথে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ছিল।ফেব্রুয়ারী মাসের ২৬ তারিখ হঠাৎ খবর পেলাম যে প্যারেড বাতিল করা হয়েছে। আমি একটু আশ্চর্য্য হলাম। আমি আর্মি ডিভ হেডকোয়াটারে এসে কর্ণেল গীলের সাথে দেখা করলাম। সেখানে আরও কয়েকজন উচ্চ পদস্থ অফিসার ছিলেন, সবাইকে কেমন যেন এক অস্বস্তিকর অবস্থায় দেখলাম।
২৮ ফেব্রুয়ারী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একটা বোয়িং ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করে। সেটাতে বেসামরিক পোষাকে সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।
১লা মার্চ জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে প্রত্যেক দিন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনাবাহিনীর লোকজন আসতে থাকে এবং প্রত্যহ এর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
ঢাকা বিমান বন্দরে যেদিন থেকে বাঙালি কর্মচারীরা কাজে যোগ দিতে বিরত থাকে সেদিন থেকে পাক সেনাবাহিনী বিমান বন্দরের নিয়ন্ত্রন নিজেদের কাছে রাখে এবং বিমান বন্দরে পজিশন নিয়ে থাকে।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার কথা শুনে পাকিস্তানী সৈন্যরা এক উদ্বেগজনক অবস্থায় ছিল- তিনি কি বলবেন, কি করবেন। মিটিংয়ের পরে কোন গণ্ডগোল সৃষ্টি না হওয়ায় তারা সবাই একটু আশ্বস্ত হয়। সেদিন সমস্ত সেনাবাহিনীর লোকজনকে জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য সজাগ বা সতর্ক রাখা হয়েছিল। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তাঁরা তাঁদের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে লাগলো এবং বিমান বন্দর ও সেনানিবাসের চারদিকে এনট্রেন্সড পজিশন নিতে শুরু করে। এবং বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্য সন্দেহ, অবিশ্বাস সৃষ্টি হতে শুরু হল।
বিমান বাহিনীতেও শেষের দিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কমান্ডোদের আনা হচ্ছিলো। এয়ারফিল্ডের বিভিন্ন জায়গায় বাঙালিদের সরিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়োগ করা হয়।
২৮ মার্চ আমি এমওডিসি কমান্ডারকে ডেকে যদি পারে ছুটি নিয়ে ও অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে বললাম। বেশ কয়েকজন এমওডিসি কমান্ডার অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।
২৮/২৯ শে মার্চ বিমান বাহিনীর স্যাবর জেটগুলোতে রকেট লাগানো শুরু হয়- কুমিল্লা, চট্রগ্রাম ও যেই সমস্ত জায়গায় প্রতিরোধ চলছে ঐ সমস্ত এলাকায় বোমা বর্ষণের জন্য। রকেট গান ফিট করার কাজে সে সময় বাঙালিরা ছিল। কিন্তু ওইদিন ওই কাজে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়োগ করা হয়। ২৯/৩০ শে মার্চ বিমান বাহিনী চট্রগ্রাম বেতার কেন্দ্রে বোমা বর্ষণের জন্য যায়। সেখান থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেছিলেন।
২৫ শে মার্চের ক্রাক ডাউন – এরপর আমি নিজেকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সদস্য বলে মেনে নিতে পারছিলাম না।
আমি ২৯ শে মার্চ ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। দুই সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। আমি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারগুবের সাথে যোগাযোগ করলাম এবং ৩ রা এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারত যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার দরুণ যেতে পারিনি।
১২ ই মে তারিখে আমি, উইং কমান্ডার বাশার, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রেজা(অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইং অফিসার- বদরুল আলম আগরতলাতে পৌঁছি)
Photo: Symbolic
PAF Sabre jets lined up for review at Mauripur in 1957