সেই সময় : বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে স্মৃতিচারণ বেগম রােকেয়া মােরশেদের সাক্ষাৎকার
১৮ অক্টোবর, ২০১২, হাজী গােলাম মােরশেদের বাড়িতে ফোন করি। ওনার স্ত্রী রােকেয়া মােরশেদ জানান যে, উনি বর্তমানে ক্যানাডায় ওনার ভাগ্নি ডাক্তার রােকেয়া সুলতানার বাসায় রয়েছেন। উত্তর আমেরিকায় ওনার মেয়ে, ভাই এবং আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছেন। উনি আমাকে ক্যানাডার ফোন নাম্বারটি দিলেন। তারপর বললেন যে হাজী সাহেবের কাছে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে। অনেকেই ওনাকে লিখতে বলেছিল কিন্তু সংসারের নানা ঝামেলায় লিখতে পারেননি। উনি যােগ করলেন “তুমি যে এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েই এজন্য আমি তােমার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ, তােমার সাথে কথা বলে আমার অনেক ভালাে লাগে। স্বামীর সুখ দুঃখের সাথি বেগম রােকেয়া মােরশেদও ব্যক্তিগতভাবে বহু ঐতিহাসিক এবং উল্লেখযােগ্য ঘটনার সাক্ষী। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হবার পর উনি মাঝে মাঝে হাজী সাহেবের সাথে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যেতেন। সে সময় একবার বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ওনাকে বলেছিলেন যে আগেই ওনারা ভালাে ছিলেন। এখন ওনার স্বামী প্রধানমন্ত্রীর পদে। ওনারা সবসময় লােকের চোখের সামনে। এজন্য সবসময় সাবধানে চলতে হয়। বঙ্গবন্ধু হাজী সাহেবকে অনেক স্নেহ করতেন, ভালােবাসতেন। ওনাকে নিয়ে অনেক রসিকতা করতেন। ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুদিন আগে হাজী সাহেবের সন্ধানে ওনাদের বাসায় উনি ফোন করেছিলেন। ওনাদের ফোন লাইন বিল দিতে না পারার কারণে কেটে দেওয়া হয়েছিল। ফোন নাম্বার ছিল ২৫৪৬৭০।
১০আগস্ট, প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধুর অর্ডারে ফোন লাইন পুনঃসংযােগ করা হয়। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলেন যে হাজী সাহেব কোথায় ? রােকেয়া মােরশেদ বললেন যে উনি যশাের গিয়েছেন। ওখান থেকে আজমীর শরিফের পথে রওয়ানা দেবেন। বঙ্গবন্ধু বললেন “তুমি কি একা ?’ উনি বললেন ‘হ্যাঁ’ । তখন বঙ্গবন্ধু বললেন “তুমি সাবধানে থেকো।’ তার দুদিন পরেই ওনাকে পরিবারসহ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলাে। রােকেয়া মােরশেদ দুঃখ ভরা কণ্ঠে বললেন “উনি আমাকে সাবধানে থাকতে বললেন অথচ নিজেই সাবধান হননি। এই প্রশ্নটা আমার মনে জাগে। উনি সবাইকে অতি ভালােবাসতেন ও সবাইকে বিশ্বাস করতেন।
সূত্রঃ তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা – শারমিন আহমদ