লাশ জলে আটকে থাকবে এজন্য স্থান পরিবর্তন করে আর এক জায়গায় নেওয়া হয়
“ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহ মঙ্গলবার ভোর বেলায় গাড়ি থামিয়ে পাক সৈন্যরা চকউজির, বাহাদুরপুর, চক বিলাকী গ্রাম ঘেরাও করে। আমি সেদিন চক বিলাকী গ্রামে আত্মগোপন করেছিলাম। আমাকে এবং আরো দুজনকে ধরে বেঁধে রাখে। উল্লিখিত দুজনের একজনের চাচাকে বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে রেখে তাকে বেঁধে নেয়। নদীর ধারে ঢাকা থেকে আগত কামলা ৯ জন ছিল। এরা তাদেরকেও ধরে ফেলে। আমার স্বাস্থ্য ভাল বিধায় আমাকে মুক্তিবাহিনীর নেতা বলে অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং জানতে চায় মুক্তিফৌজ কোথায় এবং রাইফেলাদি কোথায়?
ইতিমধ্যে আরও তিনজনকে ধরে আনে। তাদের প্রহার করে ও আমি মুক্তিবাহিনীর নেতা কিনা তা জানতে চায়। এরপর সকলকে নদীর ধারে নিয়ে যায় গুলি করার জন্য। সে জায়গা খর স্রোতা নয়, লাশ জলে আটকে থাকবে এজন্য স্থান পরিবর্তন করে আর এক জায়গায় নেওয়া হয়। সেখানে ‘ওয়্যারলেস’ এর মাধ্যমে কথাবার্তা হতো। তারপর আমাদের একটি আম বাগানে নেওয়া হয়। সেখানে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে, যারা মিলিটারীকে দেখতে এসেছিল। এদের একজন অত্যাচারের অসহ্যতার জন্য বলে যে আমি আওয়ামী লীগের নেতা। যাহোক জনৈক রাজাকারের সামান্য সুপারিশে আমাকে ও উল্লিখিত দুজনকে ছেড়ে দেয়। কিছু দূর যাবার পরে আমার মনে হলো যে এ ছেড়ে দেওয়া মানে কিছু দূর যাবার পর গুলি করে হত্যা করবে। এসব ভাবতে ভাবতে আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই। পরবর্তিকালে জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই যে আমি বাড়িতে আছি।
পাক বাহিনী ঐদিন গ্রামগুলি ঘেরাও করে অন্যূন ২৫০/৩০০ জন লোক ধরে এবং তাদের মধ্যে সাতজনকে গুলি করার জন্য আত্রাই নিয়ে যায়। তাদের সবাই মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে আক্কেল আলী নামে জৈনক ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে যায়।
স্বাক্ষর/-
মোঃ আফজাল আলী মন্ডল
গ্রাম- পারনাথপুর
পোঃ- রাণীনগর
রাজশাহী