শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ- এর ভাষন | বাংলাদেশ সরকার, প্রচার দপ্তর | ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ |
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশনায়
জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
১৭ই এপ্রিল, ১৯৭১
বিশ্বের জনগণের প্রতি
বাংলাদেশ আছে এক যুদ্ধে। পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির লড়াই করে আত্মনির্ধারণ সুরক্ষিত করা ছাড়া তার সামনে আর কোন পথই খোলা নেই।
পাকিস্তান সরকারের বাংলাদেশে গণহত্যার যুদ্ধকে ঢাকতে মরিয়া হয়ে সত্যকে বিকৃত করার সুস্পষ্ট প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে বিশ্বকে সেই সকল পরিস্থিতির কথা জানানো আবশ্যক, যেগুলো বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণকে তাদের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য সংসদীয় রাজনীতির স্থলে সশস্ত্র লড়াইকে বেছে নিতে পরিচালিত করেছে।
পাকিস্তানের অখণ্ডতা সংরক্ষণের সর্বশেষ সম্ভবপর সমাধান হিসেবে পাকিস্তানে বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের জন্য আওয়ামী লীগ যথাসাধ্য আন্তরিকতার সাথে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে। ছয় দফার প্রসঙ্গ নিয়ে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে লড়াই করে আওয়ামী লীগ ৩১৩ আসনের মধ্যে বাংলাদেশে ১৬৯টি আসনের ১৬৭টিই জিতে নেয়। দলটির নির্বাচনী বিজয় এতোটাই সুনির্ধারক ছিল যে জনগণের শতকরা ৮০ শতাংশ ভোটই দলটি জিতে নেয়। বিজয়ের এই সুস্পষ্ট ধরণই দলটিকে জাতীয় পরিষদে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতায় স্থান করে দেয়।
নির্বাচনোত্তর কালটি ছিল একটি প্রত্যাশার যুগ, কেননা সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এর আগে কখনো জনগণ এ রকম স্পষ্ট রূপে তাদের কণ্ঠ প্রকাশ করে নি। উভয় পন্থীদের মধ্যেই ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়েছিল যে ছয় দফার উপর ভিত্তি করে একটি কার্যক্ষম সংবিধান গঠন করা যাবে। সিন্ধু ও পাঞ্জাবের প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি) ছয় দফার প্রসঙ্গটি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় উত্থাপন করা এড়িয়ে যায় এবং এটি প্রতিহত করার জন্য তাদের নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে কোনো বাধ্যবাধকতা তাদের একেবারেই ছিল না। বেলুচিস্তানের প্রভাবশালী দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ছয় দফার প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। এনডব্লিএফপিতে ন্যাপ, প্রাদেশিক পরিষদে প্রভাবশালী এই দলটিও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনে বিশ্বাসী ছিল। প্রতিক্রিয়াশীল দলগুলোর পরাজয়কে চিহ্নিত করা এই নির্বাচনের গতিপথটি তাই পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার সব বার্তাই দিয়েছিল।
–
জাতীয় পরিষদ আহবানের পূর্বে রাজনৈতিক প্রাঙ্গণের প্রধান দলগুলোর মধ্যে আলাপ হওয়ার আশা ছিল। তবে, যদিও পরিষদে যাওয়ার পূর্বে আওয়ামী লীগ তার সাংবিধানিক অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য ও অন্য দলগুলোর বিকল্প প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য ইচ্ছুক ছিল, দলটি বিশ্বাস করতো যে সংবিধান নিয়ে বিতর্ক হওয়া এবং কোন গোপন বৈঠকের বদলে পরিষদে তার চুড়ান্তরূপ পাওয়াটাই প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি। এই লক্ষ্যে একটি প্রারম্ভিক পরিষদ আহবান করা নিয়ে দলটি জোরালো দাবি করে। এই অধিবেশনটির প্রতীক্ষায় আওয়ামী লীগ ছয় দফার ভিত্তিতে একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করতে দিনরাত কাজ করে এবং এরকম একটি সংবিধান রচনা ও কার্যকর করার সকল নিহিতফলগুলো যাচাই করে দেখে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম বড় পরিসরে আলোচনা হয় জেনারেল ইয়াহিয়া এবং শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে, মধ্য জানুয়ারিতে। এই বৈঠকে জেনারেল ইয়াহিয়া আওয়ামী লীগের কর্মসূচির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার ব্যাপ্তি অনুসন্ধান করে দেখেন এবং নিশ্চিত হন যে তারা এর নিহিতফলগুলো নিয়ে সম্পূর্ণ সচেতন ছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ইয়াহিয়া সংবিধানের ব্যাপারে তার নিজের ধারণাগুলো পরিষ্কার করে খুলে বলেন নি। তিনি ছয় দফায় তীব্র আপত্তিকর কিছু না পাওয়ার আভাস দেন, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপির সাথে একটি বোঝাপড়ায় আসার আবশ্যকতার উপর জোরারোপ করেন।
পরের দফার আলোচনা চলে ঢাকায় পিপিপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৭ জানুয়ারি, ১৯৭১ থেকে যেখানে জনাব ভুট্টো ও তার দল আওয়ামী লীগের সাথে কয়েকটি বৈঠকে সংবিধান নিয়ে আলোচনা করে।
ইয়াহিয়া যেমনটি করেছিলেন, জনাব ভুট্টোও তেমনি সংবিধানের প্রকৃতি সম্পর্কে তার নিজের কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেন নি। তিনি ও তার উপদেষ্টারা প্রধানত আগ্রহী ছিলেন ছয় দফার নিহিতফলগুলো সম্পর্কে আলোচনায়। যেহেতু তাদের সাড়া ছিল মূলত নেতিবাচক ও তাদের নিজেদের কোন প্রস্তুত বিবরণীসংক্ষেপ ছিল না, তাদের আলাপগুলোর এমন কোন প্রগাঢ় মীমাংসালাপে উন্নীত হওয়া সম্ভব হয় নি যেখানে দুই দলের মধ্যকার ফারাকের সেতুবন্ধন করার প্রচেষ্টা চালানো যেতো। এটা স্পষ্ট ছিল যে তখন পর্যন্ত জনাব ভুট্টোর নিজের এমন কোন আনুষ্ঠানিক অবস্থান ছিল না যেখান থেকে মীমাংসালাপ করা যেতো।
এটা পরিষ্কার করা আবশ্যক যে যখন পিপিপি ঢাকা ত্যাগ করে, তখন তাদের পক্ষ থেকে এমন কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি যে আওয়ামী লীগের সাথে তারা একটি নিশ্চলাবস্থানে পৌঁছেছে। বরং তারা নিশ্চয়তা দেয় যে সব দরজা খোলা আছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে কয়েক দফা আলাপের পরে পিপিপি হয় আওয়ামী লীগের সাথে আরেকটি বা আরো কয়েকটি দফায় সারপূর্ণ আলাপে বসবে, অথবা সাক্ষাৎ করবে জাতীয় পরিষদে যার কমিটিগুলো সংবিধানের উপর বিস্তারিত আলোচনার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রেখেছে।
জনাব ভুট্টোর জাতীয় পরিষদ বর্জন করার ঘোষণা সেই কারণে এসেছিল পুরোপুরি বিস্ময় হিসেবে। এটা অপ্রত্যাশিত ছিল, কেননা ইতিমধ্যেই জনাব ভুট্টো একবার রাষ্ট্রপতির অনুকুলানুগ্রহ পেয়েছেন যখন তিনি শেখ মুজিবের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রারম্ভিক অধিবেশনের অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করেন, এবং তা জনাব ভুট্টোর মনোনয়ন মতো ৩রা মার্চে নির্ধারণ করেন।
–
পরিষদ বর্জনের সিদ্ধান্তের পরে জনাব ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য দলগুলোর পরিষদে অংশগ্রহণ থেকে প্রতিহত করার জন্য ভীতিপ্রদর্শনের পথ বেছে নেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইয়াহিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী লেফট্যানেন্ট জেনারেল উমর ভুট্টোর হাতকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ব্যক্তিগতভাবে বহু পশ্চিমা শাখার নেতাকে পরিষদে অংশগ্রহণ না করতে চাপ দনে বলে প্রমাণ আছে। জনাব ভুট্টো ও লে. জে. উমরের চাপকৌশলের এই প্রদর্শনী সত্ত্বেও পিপিপি ও কাইয়্যুম মুসলিম লীগ (কিউএমএল) ব্যতীত পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সকল সদস্য ৩রা মার্চের অধিবেশনের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার আসন সংরক্ষিত করেন।
কিউএমএলে অভ্যন্তরেই অর্ধেক সদস্য তাদের ভ্রমণাসন সংরক্ষিত করেন, আর পিপিপির অভ্যন্তরে অনেক সদস্যই ঢাকায় আসতে চাওয়ায় বিদ্রোহের লক্ষণ দেখা যায়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই যৌথ সংগঠনের ভাঙনের মুখোমুখি হয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া ১লা মার্চে অধিবেশন, কোন নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য নয়, বরং অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে, জনাব ভুট্টোকে বাধিতকরেন। তার উপর, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এডমিরা এস এম আহসানকে বরখাস্ত করেন যাকে ইয়াহিয়া প্রশাসনের অন্যতম মধ্যপন্থী হিসেবে বিশ্বাস করা হতো। বাঙালী সদস্যপূর্ণ মন্ত্রীপরিষদকেও অব্যাহতি দেয়া হয় যাতে সকল ক্ষমতা পশ্চিমা শাখা সামরিক জান্তার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে।
এ সকল পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়ার পদক্ষেপকে জনাব ভুট্টোর সাথে মিলে ছলনা মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে ব্যর্থ প্রমাণ করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কোন ভাবে দেখা যায় না। জাতীয় পরিষদ ছিল একমাত্র ফোরাম যেখানে বাংলাদেশ তার কণ্ঠ দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে পারতো, এবং এটাকে ব্যর্থ করে পরিস্কার ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে পাকিস্তানে সংসদই প্রকৃত ক্ষমতার উৎস নয়।
এই স্থগিতকরণের প্রতিক্রিয়া ছিল অনিবার্য ও স্বতঃস্ফূর্ত এবং দেশ জুড়ে মানুষ রাস্তায় নামে স্বেচ্ছাচারী এই কাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানান দিতে। জনগণ নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করে ইয়াহিয়া আসলে কখনোই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান নি এবং তিনি সংসদীয় রাজনীতি নিয়ে উপহাস করছিলেন। জনগণের উপলব্ধি করতে পারে যে বাংলাদেশের অধিকার কখনোই পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে থেকে বাস্তবায়িত করা যাবে না, যার মধ্যে ইয়াহিয়া এতো নির্লজ্জভাবে এমন একটি অধিবেশন আহবানকে ব্যর্থ করতে পারে যা কিনা তার নিজের বিধানপত্রে ঘোষিত হয়েছে, এবং জনগণ শেখ মুজিবর রহমানকে আহবান জানায় যে অবশ্যই পূর্ণ স্বাধীনতার পথে যেতে হবে।
শেখ মুজিব তারপরও একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে থাকেন। ৩ মার্চের অসহযোগের কার্যক্রমের উত্তরে তিনি দখলদারদের দলকে হুঁশে আনার প্রচেষ্টার অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন শান্তিপূর্ণ মুখোমুখিতাকে। ২ ও ৩ মার্চে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের উপর ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে এক হাজারেরও বেশী মানুষকে হতাহত করার মুখোমুখিতায় এটি স্বয়ং ছিল একটি বিশাল পদক্ষেপ।
অসহযোগ আন্দোলনের গতিপথ এখন একটি ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশে ১লা থেকে ২৫শে মার্চের মধ্যে যেমনটি দেখা গেছে, মুক্তির লড়াইয়ের ধারাপথে অসহযোগ কখনোই তার সীমা পর্যন্ত এভাবে টেনে নেয়া হয় নি। অসহযোগ ছিল সার্বিক। উচ্চ আদালতের কোন বিচারককেই নতুন গভর্নর লে. জে. টিক্কা খানের কার্যালয়ে শপথ বাক্য পাঠের জন্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। পুলিশ ও পাকিস্তান জনসাধারণ সেবাসহ সমগ্র বেসামরিক প্রশাসন কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে অস্বীকার করে। জনগণ সেনাবাহিনীতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এমনকি প্রতিরক্ষা স্থাপনার বেসামরিক চাকুরেরাও এই বর্জন কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
–
অসহোযোগ আন্দোলনে কাজকর্ম থেমেছিল না। বেসামরিক প্রশাসন এবং পুলিশ তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছিল এবং তার আদেশ পালন করছিল।
এই অবস্থায় আওয়ামীলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠন না করেও অর্থনীতি ও প্রশাসন চালাতে বাধ্য হয়েছিল যখন কিনা অসহযোগ আন্দোলন চলছে। এই কাজে তাদের কেবল মাত্র জনগণ নয়, প্রশাসন এবং ব্যাবসায়ী মহলের আকুন্ঠ সমর্থন ছিল। আওয়ামী লীগের কাছে তারা তাদের অধীনস্ততা স্বিকার করেছে এবং তাদের সকল সমস্যা সমাধানের একচ্ছত্র কতৃপক্ষ হিসেবে তাকে মেনে নিয়েছিল।
বাংলাদেশে আচমকাই উদ্ভূত এরকম রাজনৈতিক দায়িত্ব শূন্যতার অদ্ভূত সময়েও অর্থনীতি এবং প্রশাসন ঠিকই চলছিল । স্বীকৃত কোনো কতৃপক্ষ না থাকলেও আওয়ামীলীগের স্বেচ্ছাসেবীরা পুলিশের সাথে একত্র হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখতে সক্ষম হয়েছে যেটি মনে হচ্ছিলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও ভালো।
আওয়ামীলীগের সমর্থনে এমন প্রতিবাদ এবং এই ঐতিহাসিক অসহোযগ আন্দোলনের মুখে , জেনারেল ইয়াহিয়া তার কৌশল পরিবর্তন করলেন বলে মনে হল। ৬ মার্চ মনে হয়েছিল সে তখনও সংষর্ষকে উসকে দিতে অনড়, যখন তিনি তার তীব্র প্রতিক্রিয়ামূলক ভাষনে সকল সকল কিছুর জন্য কেবল আওয়ামীলীগকেই দোষ দিলেন এবং এমন সংকট তৈরির মূল কারিগর ভুট্রোকে কিছু বললেন না। মনে হয়েছিল, সে চাচ্ছে ৭ তারিখ স্বাধীনতার ঘোষনা হোক । ঢাকার সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছিল আন্দোলন ধ্বংসের জন্য এবং জান্তার মধ্যে আরও কঠোর মনোভাব দেখানোর জন্য লেঃ জেনারেল ইয়াকুবকে সরিয়ে উড়িয়ে আনা হয়েছিল লেঃ জেনারেল টিক্কা খানকে।
যাই হোক না কেন, শেখ মুজিব, স্বাধীনতার পক্ষে এত বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্যেও রাজনৈতিক মিমাংসাকে বেছে নিলেন। জাতীয় পরিষদে যোগ দেওয়ার জন্য ৪ দফা প্রস্তাব উত্থাপনের মাধ্যমে কেবল মানুষের ভাবনাকেই তিনি সংবরণ করেননি, ইয়াহিয়া যাতে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে পারে, সেই রাস্তাও খোলা রেখেছিলেন।
এটা এখন পরিস্কার যে ইয়াহিয়া এবং তার জেনারেলদের কখনোই পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের নূন্যতম ইচ্ছা ছিল না, বরং কেবল উদ্দেশ্য ছিল কালোক্ষেপনের মাধ্যমে যাতে বাংলাদেশে আরও সমরসজ্জা করা যায়। ইয়াহিয়ার ঢাকা পরিদর্শন ছিল কেবল মাত্র গন হত্যার পরিকল্পনা না বুঝতে দেয়া ।এটা এখন পরিস্কার যে এমন সংকটের সময় এই আকস্মিক পরিকল্পনা ,সংকট শুরুর আগে বেশ ভালোভাবেই শুরু হয়েছিল।
সীমান্ত রক্ষার জন্য. রংপুরে যে ট্যাংক পাঠানো হয়েছিল, পয়লা মার্চের কিছু আগে সেগুলোকে ঢাকা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। পয়লা মার্চ থেকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারে সাথে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যাবসায়ীদের পরিবারদেরও পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো শুরু হয়েছিল।
পয়লা মার্চের পর থেকে সমরসজ্জা দ্রুততর করা হয় এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংলাপের পুরো সময়টা জুড়ে চলতেই থাকে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেসামরিক পোশাকে পিআ-ইএর বাণিজ্যিক বিমানে করে সিলন হয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। সি-১৩০ এ করে দূর্গের জন্য অস্ত্র এবং সৈনিকদের আনুসাংগিক জিনিস ঢাকাতে নিয়ে আসছিল। সহ ১-২৫ মার্চের মধ্যে আনুমানিক এক ডিভিশনের মতো সৈন্য, প্রয়োজনীয় জিনিস বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিমান বন্দর সম্পূর্নভাবে বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়েছিল এবং ভারী কামান এবং মেশিনগান দিয়ে কঠোরভাবে ঘিরে রাখা হয়েছিল হয়েছিল এবং যাত্রীদের চলাফেরা কঠোরভাবে নজরদারী করা হচ্ছিলো।
যাত্রী থাকাকালীন সময়ে মেশিনগান চলাচলকারী জাল কঠোরভাবে তত্ত্বাবধান করা হয়। নাশকতা ও হত্যার চোরাগোপ্তা অভিযানের জন্য একটি কমান্ডো গ্রুপকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশের মূল কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয় এবং সম্ভবত ২৫ মার্চের আগেই ঢাকা ও সৈয়দপুরে বাঙালিদের হামলা দু’দিনে স্থানীয় এবং অ স্থানীয়দের সংঘর্ষ ঘটানোর জন্য দায়ী ছিল, তাই সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য একটি কভার প্রদান জরুরি ছিলো। ইয়াহিয়া এই ছলচাতুরি কৌশলের অংশ হিসেবে মুজিবের সাথে তার আলোচনা সবচেয়ে মৈত্রীসূচক ভঙ্গি অবলম্বন করেন। ১৬ ই মার্চ থেকে শুরু হওয়া আলোচনায় পূর্বে কি ঘটেছিল এবং এর একটি রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য তার আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শেখ মুজিবের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আওয়ামী লীগের ৪ দফা প্রস্তাব নিয়ে জান্তার অবস্থানকে ইতিবাচক করতে অনুরোধ করা হয়েছিলো। তার ইঙ্গিতে কোন গুরুতর আপত্তি ছিল যে এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের নিজস্ব উপদেষ্টা কতৃক চার পয়েন্টে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। মৌলিক পয়েন্ট যেসব চুক্তিতে পৌছানো হয়: (১) সামরিক আইন উদ্ধরণ এবং একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণার দ্বারা একটি বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। (২) সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দলের জন্য প্রদেশগুলোতে ক্ষমতা হস্তান্তর (৩) ইয়াহিয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা (৪) হাউসের এক যৌথ অধিবেশনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রস্তুতিমূলক থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্যদের পৃথক অধিবেশনে সংবিধান চূড়ান্ত করা. এখন ইয়াহিয়া ও ভুট্টো পরিষদের উভয়েই পৃথক অধিবেশনে প্রস্তাব দ্বারা মিটমাট নেভানোর বিপরীতে ইয়াহিয়া দ্বারা সুপারিশ করেন জনাব ভুট্টো . তিনি থাকাকালীন ৬-দফার যে একটি টেকসই প্রতিচিত্র বাংলাদেশ ও তার সেন্টারে ওয়েস্ট উইং প্রয়োগে এ গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করবে যা সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারিক সুবিধা প্রদান করবে। ওয়েস্ট উইংকে এমএনএ এর ছয় দফা সংবিধান প্রেক্ষাপটে এবং এক-ইউনিট ভেঙে একটি নতুন প্যাটার্নে একসাথে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে। নীতিগতভাবে এই চুক্তি শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া মধ্যে একমতে পৌছে করা হয়েছে যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে বাংলাদেশ সামনা-সামনি সেন্টারের ক্ষমতা সংজ্ঞায়িত একমাত্র প্রশ্ন ছিলো। এখানে সবাই যৌথভাবে একমত হয়েছিলেন যে ক্ষমতার বন্টন যথাসম্ভব জাতীয় পরিষদের অনুমোদিত চূড়ান্ত সংবিধানের ‘ছয় দফা’ উপর ভিত্তি করে করা উচিত হবে। অন্তর্বর্তী ব্যাবস্থাপক এবং প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড জনাব এম এম আহমেদ এই অংশের বাইরে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে নিযুক্ত ছিল। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট যে প্রদত্ত রাজনৈতিক মতৈক্যে পৌছাতে কোন অনতিক্রম্য সমস্যা ছিল এমনকি অন্তর্বর্তী সময়ের মধ্যে ছয় দফার কিছু আউট সংস্করণে কাজ করার জন্যও। আওয়ামী লীগের খসড়া যা তিনি পরামর্শ হিসেবে উপস্থাপিত তিনটি সংশোধনীর চূড়ান্ত তালিকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থানের মধ্যে ফাঁক আর নীতির সুনির্দিষ্ট এবং অন্যতম কিন্তু এর উপর নিছক রয়েছে।
–
প্রস্তাবের শব্দসমষ্টি। আওয়ামী লীগ ২৪মার্চের অধিবেশনে ভাষাগত কয়েকটি ছোটখাট পরিবর্তনের সঙ্গে সংশোধনী গ্রহন করে এবং যখন অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান চূড়ান্ত করা হবে তখন
একটি চূড়ান্ত খসড়া সেশন নম্বর হোল্ডিংয়ে
ইয়াহইয়া এবং মুজিবের উপদেষ্টাদের মধ্যে প্রতিরোধের কিছুই ছিল না। এটা স্পষ্ট করতে হবে যে তারা যে একটি চূড়ান্ত অবস্থানে ছিল সেটি এখন কোন পর্যায়ে আছে এবং আলোচনার কোন ভাঙ্গন জেনারেল ইয়াহিয়া বা তার দল দ্বারা সেটা করা যায়নি। ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আইনি কভার প্রশ্ন ছিলো ইয়াহিয়া গণহত্যা ঢাকতে নিছক তার আরেকটি বিলম্বিত জালিয়াতি। তিনি এবং তার দল একমত হয়েছে যে, ১৯৪৭ ক্ষমতার ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স আইনের প্রাধান্য এবং সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার দ্বারা সঙ্গতিপূর্ণভাবে ক্ষমতা স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। লক্ষ করুন যে, পরবর্তীকালে জনাব ভুট্টো উত্থাপিত এবং জেনারেল ইয়াহিয়া সমর্থিত করার কোন শাসন ব্যাবস্থা কিভাবে আইনি কভার হবে যেখানে এটি শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া মধ্যে বিতর্কের উৎস ছিল না। এতে সামান্যতম সন্দেহ নেই যে ইয়াহিয়া ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, জাতীয় পরিষদের সভায় ক্ষমতা হস্তান্তর অপরিহার্য ছিল, আওয়ামী লীগ এমন একটি ছোটখাট বৈধ কৌশলের উপর আলোচনা ভেঙে দিতো না। সর্বোপরি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে এটি যেমন একটি সভা তাই একটি পৃথক অধিবেশনে বসার জন্য সিদ্ধান্ত তার গ্রহণযোগ্যতা থেকে ভয়ের কোন কারণ নেই যদিওপার্টির জন্য একটি মৌলিক স্ট্যান্ড চেয়ে জনাব ভুট্টোর সাথে বরং মিটমাট করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রতিবাদী পক্ষের মধ্যে নীতিগতভাবে চুক্তিতে যে একমত হয়েছেন তা ২৫শে মার্চ জনাব ভুট্টোর নিজের প্রেস কনফারেন্স দ্বারা উপলব্ধ করা হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া এবং জনাব ভুট্টোর মধ্যে পৃথক অধিবেশনে
পাস নির্দিষ্ট ছিলো না কিন্তু এটা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ সম্পর্কে পিপিপি অবশ্যই ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার ছড়িয়েছে যারা বলেছিল শেখ মুজিব লোকদেখার জন্যই নির্ধারিত ছিলেন এবং দৈনিক তার চাহিদা বেড়ে উঠছিল। আওয়ামী লীগ দল এবং জেনারেল ইয়াহিয়ার উপদেষ্টাদের মধ্যে সভায় এইসব সন্দেহের সামান্যতম ইঙ্গিত উত্থাপিত হয়েছিলো তা বলাই বাহুল্য এবং যেখানে সহৃদয়তা এবং আশাবাদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। যতক্ষণ না সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনার আশা উত্থাপিত হচ্ছে, আকস্মিকভাবে গোলাবারুদের জাহাজ এম ভি সোয়াত খালাস করার সিদ্ধান্ত দ্বারা উপলব্ধ করা হয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যের মধ্যে আরো অশুভ লক্ষণ আছে। প্রস্তুতিমূলক এই সিদ্ধান্ত ছিলো ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের। একজন বাঙালি অফিসার, চট্টগ্রামে গ্যারিসন কমান্ডিং থেকে হঠাৎ তার কমান্ড সরানো এবং একটি পশ্চিম পাকিস্তানীকে তার সাথে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। ২৪ এর রাতে তিনি সশস্ত্র পাহারার অধীনে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয় এবং সম্ভবত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিলো। নতুন কমান্ড নোটিশ অধীনে একটি সিদ্ধান্ত স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছিল, সেনা বন্দর শ্রমিকের অসহযোগিতার মুখে গত ১৭ দিনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের নোঙর ফেলা জাহাজ সত্ত্বেও এম ভি সোয়াত থেকে মাল খালাস করা সিদ্ধান্ত বাতিল ছিলো। এটি ছিলো একটি পুর্বনির্ধারিত বিরক্তি যা অবিলম্বে চট্টগ্রামের রাস্তায় ১০০০০০ মানুষকে আনে এবং নিজেদের পথ পরিস্কার করতে আর্মি ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করেছিল। বিষয়টি আওয়ামী লীগের দ্বারা উত্থাপিত হয়েছিল, . জেনারেল পীরজাদা কেন আলোচনা থাকাকালীন এসবের অনুমতি দেয়া হয়েছিল সেই হিসাব এখনও চলছে। তিনি জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে এটি পাস করার জন্য একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকায় পরবর্তীতে এর কোন উত্তর দিলেন না। ২৪শে মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মধ্যে সর্বশেষ বৈঠক হয় যেখানে জনাব এম এম আহমেদ চূড়ান্ত সংশোধনী গৃহীত করেন , একটি কল
সর্বশেষ অধিবেশনের জন্য জেনারেল পীরজাদার থেকে একটি কল আসতে পারে যেখানে খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিলো। এমন কোনো কল বাস্তবে রূপায়িত হয়নি এবং এর পরিবর্তে এটি জানা গেছে যে জনাব এম এম আহমেদ, যিনি আলোচনার কেন্দ্রীয় ছিল, হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ দলকে কোনো সতর্কবাণী দেওয়া ছাড়াই 25এ সকালে করাচি ছেড়ে চলে গেছে।১১ টার মধ্যেই ২৫ এর সব প্রস্তুতি প্রস্তুত ছিল এবং সেনা সদস্যরা শহরের মধ্যে তাদের পজিশন নিতে লাগল। বিশ্বাসঘাতকতার অনুপম একটি আইন সমসাময়িক ইতিহাসের পুরবনিরধারিত গণহত্যার একটি প্রোগ্রাম ২৫ এর মার্চ মধ্যরাতেআওয়ামী লীগকে কোন প্রকার আলটিমেটাম ছাড়াই ইয়াহিয়া দ্বারা ঢাকার শান্তিপূর্ণ এবং অসন্দিগ্ধচরিত্র জনসংখ্যার উপর কার্যকর হয় হয়, কোন কারফিউ আদেশ জারি করা হয় নি যখনএমনকি মেশিনগান , কামান এবং ট্যাংক উপর কামান, মৃত্যু ও ধ্বংসের তাদের রাজত্ব কায়েম করে তখনো না। সময় অনুযায়ী লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রথম সামরিক আইন ঘোষণা কোনো প্রতিরোধের প্রস্তাব ছাড়াই পরদিন সকালে কিছু ৫০০০০ মানুষ, তাদের অধিকাংশই সম্প্রচার করা হয়, এবং অনেক নারী ও শিশু, জবাই করা হয়েছিলো। ঢাকা দাবানল ডাই শহরের সবচেয়ে কোণ সঙ্গে একটি নরক থেকে পরিণত হয়েছিল. বাসিন্দা যারা আগুন সামরিক দ্বারা শুরু করে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে আটকানো ছিল , মেশিন-গুলি ছিল যেমন তারা অগ্নিতে অব্যাহতি দৌড়ে. যতক্ষণ পুলিশ, ইপিআর এবং সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবকদের একটি বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন প্রধান ‘ক্ষতিগ্রস্তরা দুর্বল নির্দোষ এবং অসন্দিগ্ধচরিত্র, যারা তাদের হাজার হাজার এ-রেণ্ডম নিহত হয়েছ। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির আদেশ, যা আমরা খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার বিবরণ সরাসরি অ্যাকাউন্ট কম্পাইল করা হয়। স্কেল ও কর্মের বর্বরতা সভ্য বিশ্বের কিছু ছাড়িয়ে গেছে. ইয়াহিয়া নিজেকে সব বাঙালির ওপর গণহত্যা কমিট একটি খোলা লাইসেন্স সঙ্গে রাখার পাকিস্তান আর্মি, পরে 25 মার্চ রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন. বর্বরতার এই আইনের জন্য তাঁর নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন 8 রাত দশটা পর্যন্ত আসন্ন ছিল না পরের দিন যখন বিশ্বের এই হলোকস্ট জন্য তার প্রথম ব্যাখ্যা দেওয়া হয়. বিবৃতিতে স্ববিরোধী এবং ইতিবাচক লাইন মেশানো ছিল. বিশ্বাসঘাতক ও আসামীর, যাদের সঙ্গে, মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সমঝোতা ছিল করা যেমন একটি অংশ তাঁর ব্র্যান্ডিং; বাংলাদেশের পরিস্থিতি বা আলোচনার অবশ্যই কোন সম্পর্ক বিঁধ। জাতীয় পরিষদে “আওয়ামী লীগ যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন এবং আসন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনুষ্ঠিত নিষিদ্ধ পর জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে তাঁর ওয়াদার ৭৫ লক্ষ বাঙালিকে অবাধে ভয়েস রেকর্ড বিদ্রুপ ছিল. দ্য বিবৃতির অসূক্ষ্মতা স্পষ্ট প্রমাণ যে ইয়াহিয়া পারেন যুক্তিবিজ্ঞান বা নৈতিকতা পিছনে আশ্রয় গ্রহণে আর আগ্রহী ছিলেন এবং বাংলাদেশের জনগণের পেষ তার বিড জঙ্গলের আইন রূপে ফিরিয়ে ছিল। পাকিস্তান এখন মৃত এবং একটি পর্বত নিচে চাপা লাশ. শত শত এবং হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা হত্যা পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে একটি দুর্ভেদ্য বাধা হিসেবে কাজ করবে। প্রাক পরিকল্পিত গণহত্যা ইয়াহিয়া অবশ্যই জানা উচিত যে, সে পাকিস্তানের কবর খনন করা হয়েছিল অবলম্বী দ্বারা. পরবর্তী মানুষের উপর তার লাইসেন্সকৃত খুনীদের দ্বারা তার নির্দেশে সংঘটিত গণহত্যার একটি জাতির ঐক্য সংরক্ষণ করার জন্য ডিজাইন করা হয় নি. তারা বর্ণবাদী ঘৃণা ও ধর্ষকাম মানবতার এমনকি উপাদানের বর্জিত কাজ ছিল তাদের পেশাগত সৈনিকদের আদেশ লঙ্ঘন।
–
সামরিক সম্মানের কোডকে দেখা যায়, শিকারী পশু হিসেবে, যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও বিনাশের এক বেলেল্লাপনাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলো এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসে অতুলনীয় ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়য়েছিলো। এসব কাজ ইঙ্গিত করে যে, দুই দেশের ধারণা ইতিমধ্যে গভীরভাবে ইয়াহিয়া ও তার সহযোগীদের মনে গভীর ভাবেই গেথে গিয়েছিল, যারা তাদের নিজের দেশের মানুষের উপর এরূপ নৃশংসতা চালাতে কুন্ঠিত হয় না। ইয়াহিয়ার গণহত্যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ছিলো না। এটা শুধুমাত্র পাকিস্তানের দুঃখজনক ইতিহাসে শেষ অঙ্ক হিসেবে কাজ করে যা ইয়াহিয়া বাংলাদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে লিখতে চেয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো গণহত্যা এবং ঝলসিত পৃথিবী যাতে , তার সৈন্যরা বিতাড়িত বা প্যারিশভুক্ত না হয়। এই সময় তিনি চেয়েছিলেন, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বুদ্ধিজীবি সমাজ এবং প্রশাসনকে ডুবাতে, ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন আমাদের শিল্প ও প্রকাশ্য সুযোগ-সুবিধাকে, সবশেষে তিনি আশা করেছিলেন, আমাদের শহর ধূলিসাৎ করতে। ইতিমধ্যে তার দখলদার বাহিনীর এই উদ্দেশ্যের দিকে সারগর্ভ অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশকে 50 বছর আগেই সেইসব মানুষদের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের বিভাজিকা উপহার হিসেব স্থাপন করা হয়েছিলো, যারা তাদের নিজের সুবিধার জন্য তেইশ বছর ধরে শোষিত হয়েছে। এটি হলো সেই মহাক্ষমতার তাৎপর্য যেই ক্ষমতা Belsen এবং Auschwitz দিন থেকে গণহত্যার এই বৃহত্তম একক আইন উপেক্ষা করে আসছে। যদি তারা মনে করে তারা পাকিস্তানের ঐক্য সংরক্ষণ করছে , তারা এটা ভুলে যেতে পারেন কারণ পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইয়াহিয়ার নিজের কোন বিভ্রম ছিলো না। তাদেরককে উপলব্ধি করতে হবে যে ইয়াহিয়ার হাতেই পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটেছিলো-এবং স্বাধীন বাংলাদেশ একটি বাস্তবতা যা টিকে আছে ৭৫ লক্ষ বাঙালির অবিনশ্বর ইচ্ছা এবং সাহসিকতার জোরে যারা প্রতিনিয়ত তাদের রক্ত দিয়ে এই নতুন জাতিসত্তার শিকড়ের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। পৃথিবীর কোন শক্তিই এই নতুন জাতিকে চ্যুত করতে পারবে না এবং তাড়াতাড়ি হোক বা দেরীতে, বড় এবং ছোট উভয় পরাশক্তিকেই বিশ্বভ্রাতৃত্বের দরুন এটিকে গ্রহণ করতে হবে। সৈন্যদের বন্দী করা এবং তাদেরকে ফেরত পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে আনার জন্য ইয়াহিয়া উপর বৃহৎ পরাশক্তিগুলোর পূর্ণ চাপ দেওয়া যতটা না রাজনীতির স্বার্থে তার চেয়ে বড় মানবিকতায়। আমরা USSR ও ভারত এবং সমগ্র বিশ্বের স্বাধীনচেতা মানুষদের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যারা আমাদের এই সংগ্রামে জোরালো সমর্থন দিয়েছেন : সেই সাথে স্বাগত জানাই গনচীন, আমেিরকা, ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের স্বাধীনতা পক্ষের শক্তিকে। নিজ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রত্যেকেই নিজশ্ব উপায় চর্চা করে, পশ্চিম পাকিস্তানে তখন এই চর্চাটাই চলছিল ; ইয়াহিয়া আর একদিনের জন্যও বাংলাদেশের বিপক্ষে আগ্রাসন যুদ্ধে টিকে থাকতে পারছিলো না। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হতে চলেছে। এর একমাত্র লক্ষ্য ছিলো যুদ্ধবিদ্ধস্ত জাতি থেকে ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনীর পিছনে থেকে একটি নতুন জাতি পুনর্নির্মাণের। এটি একটি বিস্ময়কর টাস্ক হবে কারণ আমরা ইতিমধ্যে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। কিন্তু আমাদের কাছে এখন একটি কারণ এবং এমন লোক আছে যারা প্রতিরোধের কঠিনীভূত হয়েছে, যারা তাদের জাতির জন্য তাদের রক্ত দিয়ে একটি মহাকাব্যিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছে যা সংঘটিত হয়েছিলো একটি আধুনিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র মানুষের দ্বারা। এই ধরনের একটি জাতি তার জাতিসত্তার ভিত সুরক্ষিত করার কাজের মধ্যে ভুল করতে পারেন না।
আমাদের টিকে থাকার সংগ্রামে আমরা সব মানুষের বন্ধুত্ব চাই ক্ষমতায় বড় এবং ছোট সবার। আমরা কোন সংযোজন বা চুক্তি যোগদানের জন্য উচ্চাভিলাষী না, কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ না করে শুভেচ্ছার মনোভাবে সহায়তা দিতে চাইলে তা নেয়া হবে। আমরা এ পর্যন্ত অত্যন্ত দীর্ঘ লড়াই করেছি আমাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে যাতে যে কেউ আমাদেরকে আদর্শ ভেবে নিতে পারে।
এখন আমরাবিশ্বের সব দেশগুলির কাছে আমাদের জাতিসত্তার জন্য সংগ্রামে বস্তুগত ও নৈতিক উভয় ধরণের স্বীকৃতি ও সহায়তার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। প্রতিদিনের দেরিতেসহস্র জীবন হারিয়ে যায় এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস করা হয়। মানবতার স্বার্থে এক্ষুনি পদক্ষেপ গ্রহণ করণ এবং আমারা আজীবন বন্ধুত্ব প্রদর্শন করবো
এখন আমরা এটা পৃথিবীর সামনে বাংলাদেশের মানুষের ‘কেস’ হিসাবে উপস্থাপন করি। কোনো জাতি জাতিসত্ত্বার জন্য এমন অধিকার আদায় করেনি, কোনো মানুষ অধিকার আদায়ে এমন যুদ্ধ করেনি।