You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.07 | ৭ নভেম্বর ১৯৭১-এ প্রদত্ত মি. চি পেং-ফেইয়ের বিবৃতি - সংগ্রামের নোটবুক
৭ নভেম্বর ১৯৭১-এ প্রদত্ত মি. চি পেং-ফেইয়ের বিবৃতি
জুলফিকার আলি ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল ৫ থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত চীন সফর করেছে। চীনের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রী চি পেং-ফেই (Chi Peng-fei) সফররত পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের সম্মানে ৭ নভেম্বর ১৯৭১-এ এক ভােজসভার আয়ােজন করেন। স্বাগতভাষণে মি. চি পেং-ফেই বলেন, “আমাদের দু’দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযােগিতা এবং দু’দেশের জনগণের বন্ধুত্ব অব্যাহতভাবে উন্নত ও সংহত হয়েছে।”  সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের বিরােধিতা করার গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক পাকিস্তানের জনগণ সম্পর্কে তিনি তাঁর উচ্চ ধারণা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বিদেশী আগ্রাসী, হস্তক্ষেপকারী ও অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি জনগণ অবিরত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। পাকিস্তান সরকার তার পররাষ্ট্রনীতি পালন করেছে এবং এশিয়ায় শান্তিরক্ষা ও আফ্রো-এশীয় সংহতির উন্নয়নে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেছে।”
চি পেং-ফেই আরাে বলেন, “পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত সরকার নগ্নভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, বিধ্বংসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক হুমকির জন্ম দিয়েছে। উপমহাদেশে বিদ্যমান বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে চীনের সরকার ও জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি,  কোনাে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সেই দেশের জনগণেরই সমাধান করা উচিত। পূর্ব পাকিস্তান ইস্যু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তা পাকিস্তানের জনগণেরই নিষ্পত্তি করা উচিত। এক্ষেত্রে কোনাে বিদেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং বিধ্বংসী কার্যকলাপ কোনােক্রমেই অনুমােদনযােগ্য নয়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল চীন সরকার কখনাে অন্য কোনাে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না এবং কোনাে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করলে কঠোরভাবে তার বিরােধিতা করে। এই নীতিতেই আমরা দৃঢ় ও অবিচল।
আমরা বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের বৃহত্তর জনগােষ্ঠী দেশপ্রেমিক এবং তারা তাদের দেশের অখণ্ডতা ও জাতীয় ঐক্য রক্ষা করে অভ্যন্তরীণ বিভেদ দূর করে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিরােধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের বিশ্বাস, পাকিস্তানি জনগণ তাদের ঐক্য দৃঢ়তর করে যাবতীয় প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তাদের সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাবে। আমরা লক্ষ করেছি, উপমহাদেশে বিদ্যমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সুযােগ নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি নিষ্ঠুরভাবে পাকিস্তানের ওপরে চাপ প্রয়ােগের চেষ্টা করছে এবং তাদের সুদূরপ্রসারী স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। চীনের সরকার ও জনগণ সবসময় বিশ্বাস করে এসেছে যে, কোনাে বিরােধ থাকলে তা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলােচনার ভিত্তিতে সমাধান হওয়া উচিত, চাপ প্রয়ােগের মাধ্যমে নয়। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের দেয়া পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীকে সীমান্ত এলাকা থেকে প্রত্যাহারের প্রস্তাব উপমহাদেশে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রশমনে সাহায্য করবে। গ্রহণযােগ্য এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানানাে উচিত। আমাদের পাকিস্তানি বন্ধুরা আশ্বস্ত থাকতে পারেন যে, পাকিস্তান কোনাে বিদেশী শক্তির আগ্রাসনের শিকার হলে অতীতের মতাে চীনের সরকার ও জনগণ তাদের বন্ধুপ্রতিম পাকিস্তানের সরকার ও জনগণকে তাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে অকুণ্ঠ সমর্থন দান করে যাবে। সূত্র: জে এ নায়েক, ইন্ডিয়া, রাশিয়া, চায়না অ্যান্ড বাংলা দেশ, (নয়া দিল্লী: এস চান্দ, ১৯৭২)
 

সূত্র : সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা একটি জাতির জন্ম – লে জেনারেল জে এফ আর জেকব