You dont have javascript enabled! Please enable it! নাচোল অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহের নেত্রীর উপর পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগ সম্বলিত বক্তব্য, ফেব্রুয়ারী, ১৯৫০ - সংগ্রামের নোটবুক

নাচোল অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহের নেত্রীর উপর পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগ সম্বলিত বক্তব্য

পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতিঃ বদরুদ্দীন উমর, ফেব্রুয়ারী, ১৯৫০

লিয়াকত-নুরুল আমিন শাসনামলে
কিভাবে মানবতা আক্রান্ত হয়েছিলো ?
নিম্নে নারীর উপর অমানুষিক নির্যাতন বিষয়ে রাজশাহী আদালতে দেওয়া ইলা মিত্রের বিবৃতি , কেননা তিনি লিয়াকত-নুরুল আমিন সামন্ত-শ্রেনীর থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করতেনঃ
আনীত অভিযোগের বিপরীতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে ইলা মিত্র বলেন, আমি মামলা সম্পর্কে কিছুই জানিনা । শেষ ৭-১-৫০ রাহানপুরে আমি গ্রেফতার হই এবং পরের দিন নাচোল নিয়ে যাওয়া হয় । পুলিশ রক্ষীরা পথে আমাকে লাঞ্ছিত করে এবং এরপর আমাকে সেলে [প্রকোষ্ঠ] নিয়ে যাওয়া হয় । হত্যাকান্ড সম্পর্কে আমি সবকিছু স্বীকার না করলে আমাকে নগ্ন করা হবে বলে এসআই হুমকী দেন । যেহেতু আমার কিছুই বলার ছিলো না, আমার সমস্ত পরিধেয় বস্ত্র খুলে নেওয়া হয় এবং সম্পূর্ন নগ্ন অবস্থায় আমি সেলের ভেতর বন্দী ছিলাম ।
আমাকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি , এক ফোঁটা পানিও না । একই দিনে দুপুর বেলা এসআই এর উপস্থিতিতেই, সিপাহীরা তাদের বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমাকে মাথায় মারতে শুরু করে । আমার নাক দিয়ে অঝোরে রক্তক্ষরণ হয় । এরপর আমার পরিধেয় বস্ত্র আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং রাত্রি ১২টার দিকে আমাকে সেলের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সম্ভবত এসআই এর কোয়ার্টারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় , কিন্তু আমি নিশ্চিত নই ।
যেখানে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় , ঐ রূমে তারা নিষ্ঠুরভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করে । দুইটি লাঠির [ডান্ডা] মাঝে আমার পা পিষ্ট করা হয় এবং জনসম্মুখেই ।
আমার উপর ‘পাকিস্তানি ইনজেকশন’ প্রয়োগ করা হচ্ছিলো । এই অত্যাচার চালানোর সময় তারা রূমাল দিয়ে আমার মুখ বেঁধে রেখেছিলো । তারা আমার চুল টেনে ছিঁড়েছে , কিন্তু যেহেতু তারা জোর করেও আমাকে কিছু বলাতে পারেনি, সিপাহীরা আমাকে বহন করে সেলে নিয়ে যায়, কারন অত্যাচারের পরে আমার পক্ষে হাঁটা সম্ভব ছিলো না ।
আবারও সেলের ভেতর এসআই সিপাহিদের আদেশ করেন ৪ টি গরম ডিম নিয়ে আসতে এবং বলেন, ‘এবার সে[ইলা মিত্র] কথা বলবে’ । এর পরে ৪,৫ জন সিপাহি আমাকে জোর করে শুইয়ে ফেলে এবং একজন আমার গোপন অঙ্গে ডিম ঢুকিয়ে দেয় । আমার আগুনে পড়ে যাওয়ার মত অনুভূতি হয় এবং অচেতন হয়ে পড়ি ।
৯-১-৫০ সকালবেলা যখন আমি আমার চেতনা ফিরে পাই, এসআই এবং কিছু সিপাহি আমার সেলে আসে এবং বুট পরা অবস্থায় আমার পেটে লাথি মারতে শুরু করে । এরপরে আমার দান পায়ের গোড়ালিতে একটি পেরেক বিদ্ধ করা হয় । আমি তখন অর্ধচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকি এবং এসআই কে মৃদুস্বরে বলতে শুনতে পাইঃ রাতে আমরা আবার আসব আর তুই যদি স্বীকার না করিস, একে একে সিপাহীরা তোকে বলৎকার করবে । গভীর রাতে এসআই এবং সিপাহীরা আবার ফেরত আসে এবং আবার হুমকী দেয় । কিন্তু তারপরেও আমি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানাই , তিন কিংবা চার জন মানুষ আমাকে জোর করে ধরে রাখে এবং একজন সিপাহি সত্যিই আমাকে ধর্ষন করতে শুরু করে । এরপর খুব দ্রুতই আমি অচেতন হয়ে যাই ।

১০-১-৫০, পরদিন যখন আমি আবার চেতনা ফিরে পাই , আমি দেখতে পাই আমার অঝোরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং আমার কাপড় রক্তে ভিজে আছে । সেই অবস্থাতেই আমাকে নাচোল থেকে নওয়াবগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয় । নওয়াবগঞ্জ জেলের সিপাহীরা আমাকে রহন করে আঘাত দিয়ে ।
সেইসময় আমি খুবই বেহাল দশায় ছিলাম এবং কোর্ট ইনস্পেক্টর ও কিছু সিপাহী আমাকে একটি সেলে [প্রকোষ্ঠ] বয়ে নিয়ে যায় । তখন আমার প্রচন্ড জ্বর ছিলো এবং তখন আমার রক্তক্ষরণ চলছিলো । সম্ভবত নওয়াবগঞ্জ সরকারী হাসপাতালের একজন ডাক্তার আমার শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রী বলে পরীক্ষা করেন । যখন তিনি আমার প্রবল রক্তক্ষরণের কথা জানতে পারেন , তিনি আমাকে নিশ্চয়তা দেন যে একজন মহিলা নার্সের সাহায্যে আমাকে চিকিৎসা দেয়া হবে । আমাকে কিছু ঔষধপত্র এবং দুই টুকরো কাপর দেওয়া হয় ।
১১-১-৫০ এ সরকারি হাসপাতালের মহিলা নার্স আমাকে পরীক্ষা করেন । আমি জানিনা তিনি আমার অবস্থা সম্পর্কে কি প্রতিবেদন দিয়েছিলেন । তিনি আসার পরে আমার রক্তভেজা কাপড় পরিবর্তন করে পরিস্কার কাপড় দেওয়া হয় । এই পুরোটা সময় আমি নওয়াবগঞ্জ পুলিস স্টেশনের একটি সেলে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসাধীন ছিলাম । আমার প্রবল জ্বর এবং রক্তক্ষরণ চলছিলো এবং নিয়মিতই আমি অচেতন হয়ে পড়তাম ।
১৬-১-৫০ তারিখে দুপুরবেলায় আমার সেলের সামনে একটি স্ট্রেচার[খাটিয়া] আনা হয় এবং আমাকে বলা হয় পরীক্ষার জন্য আমাকে অন্য কোথাও যেতে হবে । আমি অসুস্থ বলে নড়াচড়া করা সম্ভব নয় – এই বলে প্রতিবাদ করায় আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয় এবং জোরপূর্বক স্ট্রেচারে উঠতে বাধ্য করা হয় যার পরে আমাকে অন্য একটি বাসায় বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে আমাকে কিছুই বলা হয়নি, কিন্তু সিপাহীরা আমাকে একটি শাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে জোর করে । সেই সময়ে আমি অর্ধচেতন অবস্থায় অত্যধিক জ্বরে ছিলাম । যেহেতু আমার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিলো , আমাকে পরের দিন নওয়াবগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং ২১-১-৫০ তারিখে , যখনও আমার অবস্থা সংকটপূর্ন ছিলো , আমাকে নওয়াবগঞ্জ থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় জেলে আনা হয় , এবং জেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।
আমি কোনো পরিস্থিতিতেই পুলিশের কাছে কিছুই বলিনি এবং আমার উপরোল্লিখিত বক্তব্যের বাইরে আমার আর অতিরিক্ত কিছু বলার নেই ।*

ইলা মিত্রের জবানবন্দী । এই জবানবন্দীই ইস্তাহার আকারে পুর্ব বাংলার সর্বত্রই ১৯৫০ সালের গোঁড়ার দিকে বিলি করা হয় । পৃষ্ঠা ২৯২ – ৯৪ ।

*১৯৪৭ সালে তেভাগা আন্দোলন শেষ হয়ে গেলেও এর প্রভাব বাংলাদেশের রাজশাহীর নাচোল এলাকায় স্তিমিত হয়নি । যার ফলে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ওই এলাকায় নতুন করে ব্যাপক কৃষি আন্দোলন শুরু হয় । এই সব কৃষক প্রধানতঃ ছিলেন সাঁওতাল এবং এদের নেতা ছিলেন মাতলা সরদার । এই এলাকায় সরকারী প্রভাব প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় । ১৯৫০ সালের জানুয়ারী মাসে সাঁওতাল কৃষক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অসংখ্য হতাহত হয় । এর পর সমগ্র এলাকায় পুলিশের অমানুষিক অত্যাচারের ফলে আন্দোলন ধ্বংস হয়ে যায় ।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পূর্ব বাংলার ভাষার আন্দোলন ও ফেব্রুয়ারী, ১৯৫০ বুদ্ধিজীবীদের যৌথ বিবৃতি তৎকালীন রাজনীতিঃ বদরুদ্দীন উমর পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকগণের নিকট আবেদন ভ্রাতৃগণ, আল্লাহ তা’আলার অসীম অনুগ্রহে দুইশত বৎসরের গোলামীর পরে আমরা আজাদী লাভ করিয়াছি। এই আজাদী জিহাদের প্রধান সেনানী কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মরহুম আমাদিগকে বলিয়াছেন, “আমি পাকিস্তানের ভিত্তি পত্তন করিলাম, তোমরা পাকিস্তানের নাগরিকগণ ইহার উপর ইমারত গঠন করিবে”। এই গঠন কার্য্যের জন্য অত্যাবশ্যক দেশে শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষির সমুন্নতি সাধন। ইহার জন্য সর্বাগে প্রয়োজন দেশের শান্তির আবহাওয়া সৃষ্টি করা। কিন্তু গভীর দুঃখের বিষয় পশ্চিম বঙ্গে কতিপয় স্থানে বিশেষত কলিকাতায় সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার কারণে অথবা অন্য যে কনে কারণেই হউক আমাদের এই সুন্দর শান্তিপূর্ণ পূর্ব বাঙ্গালাতেও অশান্তি দেখা দিয়েছে। পশ্চিম বঙ্গের সংখ্যালঘুদের প্রতি উৎপীড়ন যেমন আমরা ঘৃণা করি, পূৰ্ব্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের প্রতি উৎপীড়ন আমরা সেইরূপই ঘৃণা করি। আমাদের মহামান্য কায়েদে আজম মরহুম, পাকিস্তানের বড় লাট মাননীয় জনাব খাজা নাজিমুদ্দিন, প্রধান মন্ত্রী মাননীয় জনাব লিয়াকত আলী খান, পূর্ববঙ্গের প্রধান মন্ত্রী মাননীয় জনাব নূরুল আমীন, পূর্ব পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মৌলানা আতাহার আলী প্রভৃতি গণ্যমান্য মহোদয়গণ অন্য রাষ্ট্রের মুসলমানগণের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিশোধ আমাদের রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু নিঃসহায় শান্ত জনগনের উপর লওয়ার প্রবৃত্তিকে একবাক্যে নিন্দা করিয়াছেন। আমরা আমাদের মুসলমান ভাইগণকে সবিনয়ে দৃঢ়ভাবে বলিব যে, এই প্রকার কার্যের দ্বারা পরোক্ষভাবে ও অজ্ঞাতসারে তাঁহারা ভারতের ৪ (চারি) কোটি মুসলমানের ধনপ্রান বিপন্ন করিয়া তুলিতেছেন এবং পাকিস্তানের অশেষ ক্ষতি সাধন করিতেছেন। এ প্রকার কাৰ্য্যের ফলে আকস্মিক লোক বিনিময়ে রাষ্ট্রের উপর এমন চাপ পড়িবে যে, তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো ভাঙ্গি পড়িবে। উচ্ছংখল কাৰ্যকলাপের ফলে, শিল্প-বাণিজ্য এবং স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হইয়া উভয় রাষ্ট্রই অচল হইয়া পড়িবে যার ফলে আমাদের এই সাধের আজাদী বিপন্ন হইবে। আল্লাহতা’আলা ধৰ্ম্মবিশ্বাসী মুমনিগণকে বলিতেছেন, “ওহে ধৰ্ম্মবিশ্বাসী মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কথা মান, রসুলের, এবং তোমাদের মধ্যে আজ্ঞাদাতা নেতাদের কথা মান”। (কুরআন, সুরা নিসা, রুকু ৮) আল্লাহ তা’আলা বলিতেছেন, “যে ব্যক্তি হত্যাকারী কিংবা পৃথিবীতে উৎপাতকারী ভিন্ন অন্য কোনও প্রাণকে হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মনুষ্য জাতিকে হত্যা করে”। (কুরআন মাইদাঃ রুকু ৫)। হজরত রসূলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “উৎপীড়িত (মজলুম) যদিও বিধৰ্ম্মী হয়, তাহার আর্তনাদ হইতে সাবধান হও”। তিনি আরও বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে (মুসলমান রাজ্যের অমুসলমানকে) কষ্ট দেয়, সে নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট দেয়” । পাকিস্তানের প্রত্যেক মুসলমানের মনে রাখা উচিৎ যে কলিকাতা বা হিন্দুস্তানের কোন অংশে হিন্দুদের দ্বারা অনুষ্ঠিত কোন অন্যায়ের জন্য এদেশের হিন্দুদের কিছুতেই দায়ী করা চলে না। মুসলমনাদের ন্যায় তাহারাও স্বাধীন পাকিস্তানের নাগরিক এবং পাকিস্তান সরকার যখন তাহাদের নাগরিক বলিয়া স্বীকার করিয়াছে তখন জান-মালের নিরাপত্তার জন্য মুসলমানদের ন্যায় তাহাদেরও রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ দাবী আছে। একথা প্রত্যেক

মুসলমানের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, পাকিস্তানের হিন্দুরা হিন্দুস্থানের মুসলমানদের বিনিময়ে জামানত হিসাবে বাস করিতেছে না। তাহারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকারের বলেই বাস করিতেছে। অতএব একজন মুসলমানের যে তারই মত একজন পাকিস্তানের স্থানীয় নাগরিক এমন একজন হিন্দু উপর কোন অবস্থাতেই অন্যায় উৎপীড়ন করার অধিকার নাই। প্রত্যেক শিক্ষিত ও বিবেচক মুসলমানের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, পশ্চিম বঙ্গের দাঙ্গার প্রতিবাদে এখানে নিরপরাধ হিন্দুদের প্রতি অত্যাচার করিলে তাহাতে হিন্দুস্থানের মুসলমানদের কোনই উপকার হইবে না। বরং বিহার, উড়িষ্যা, বোম্বাই, মাদ্রাজ, নাগপুর প্রভৃতি প্রদেশে এখনও যেসব কোটী কোট মুসলমান হিন্দুদের সঙ্গে সুখে-শান্তিতে বাস করিতেছে তাহাদের জীবন বিপন্ন হইয়া পড়িবে। দেশে সত্যিকার উপকার করিতে পারেন। হিন্দু ভাইগণকে আমরা বলিব, আপনারা “জননী জন্মভূমিশচ স্বর্গাদপি গরীয়সী” সেই জন্মভূমিকে আতঙ্কগ্রস্ত হইয়া সহসা পরিত্যাগ করিবেন না। আপনারা মহাত্মা গান্ধীর আর্দশ অনুসরণে হিন্দু-মুসলমানদের মিলনমন্ত্র গ্রহণ করিয়া ক্ষমতা দ্বারা ক্রোধকে জয় করুন এবং সাহজ সহকারে বিপদ দূর করিবার জন্য চেষ্টা করুন। আপনারা নিশ্চয় জানিবেন রাষ্ট্রের সর্বাধিক সাহায্য ও সহানুভূতি সুখে-দুঃখে সম্পদে-বিপদে সকল সময় আপনারা পাইবেন। পাকিস্তানের দৃঢ় অথচ সদয় বাহু সৰ্ব্বদা আপনাদিগকে সাহায্য ও রক্ষা করিতে প্রস্তুত আছে এবং রাষ্ট্রের সমস্ত হিতকামী নাগরিক ও ধৰ্ম্মনিষ্ঠ মুমিন মুসলমান আপনাদের সহিত আছেন। ইহার প্রমাণ আপনারা বর্তমানে পাইয়াছেন এবং আশাকরি ভবিষ্যতেও পাইবেন। আপনারা লক্ষ্য রাখিবেন, আপনাদের মধ্য হইতে আত্মীয়স্বজন ফেলিয়া যাহারা পশ্চিম বঙ্গ ও আসাম প্রভৃতি ভারতীয় রাজ্যে চলিয়া যাইতেছেন, তাহারা যেন সেখানে যাইয়া অতিরঞ্জিত কোন কথা না বলেন বা উত্তেজনামূলক কোন গুজব না রটান, অথবা এখান হইতে কেহ কোন মিথ্যা সংবাদ সংবাদপত্রে কিংবা চিঠি-পত্রের মারফতে কাহারও নিকট না পাঠান। কারণ, তাহাতে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হইলে এখানেও হইতে পারে এবং তার ফলে উভয় সকলের মঙ্গলের জন্য শান্তির পথই একমাত্র পথ। আমরা আমাদের হিন্দু-মুসলমান ভাইগণকে এই বলিয়া সর্তক করিয়া দিতে চাই যে, অতীতে পরস্পরের প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ প্রচার ও ঘৃণা প্রদর্শনের ফলে আমরা বহু কষ্ট পাইয়াছি, বৰ্ত্তমানেও পাইতেছি, অনেক হইয়াছে, আর নয়। আমরা স্বাধীন হইয়াছি। স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখিতে হইবে। সুতরাং এ বিষয়ে সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে। দেখিতে হইবে, কেন যেন দায়িত্বহীন সংবাদপত্রের প্রচারণায় কিংবা লোকের গুজব কথায় বিশ্বাস করিয়া আতঙ্কগ্রস্ত বা উত্তেজিত না হন। সকল সময়ে আপনারা আমাদের সরকারের অনুমোদিত সংবাদের উপর নির্ভর করিবেন এবং আমাদের নেতাদিগের নিৰ্দ্দেশের অনুসরণ করিবেন। আমরা পুনরায় আমাদের দেশবাসী ভাইগণের নিকট আমাদের সবিনয় আরজ জানাইতেছি যে, তাঁহারা যেন সকলেই এখন হইতে নিজদিগকে পাকিস্তানী বলিয়া বিবেচনা করেন এবং পরিচয় দেন এবং ইংরেজের বিভেদাত্মক ভাবের প্রভাব হইতে মুক্ত থাকেন। আমরা আরও জানাইতেছি যে, অন্য রাষ্ট্রে যাহাঁই ঘটুক না কেন আমরা পাকিস্তানে অখন্ড শান্তি বিরাজমান দেখিতে চাই যাহাতে আমাদের প্রিয় পাকিস্তান সৰ্ব্বপ্রকারে পৃথিবীর একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পাকিস্তান জিন্দাবাদ ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (প্রেসিডেন্ট) সূৰ্য্যকুমার বসু (ঢাকেশ্বরী কটন মিল) ডঃ এস, এন, রায় মীর্জা আবদুল কাদের

হামিদুল হক চৌধুরী এম.এল.এ আলমাছ আলী আলি আহমদ খান “ (সম্পাদক) এম, এ, আউয়াল (প্রচার সম্পাদক) বসন্ত কুমার দাস * * এম, এ, ওয়াদুদ (সহ-সম্পাদক) ফরিদ আহমদ চৌধুরী ++ কে, জি, মাহবুব (সহ-সম্পাদক) আনোয়ারা খাতুন ** আবদুল খালেক তফাজ্জল হোসেন (অফিস সম্পাদক) খয়রাত হোসেন খালেক নেওয়াজ খান (ই,পি,এম,এস,এল) আবদুল হাকিম ** এম,এ, আজিজ (প্রিন্সিপাল) এব্রাহিম খান (সদস্য) পাক গণপরিষদ উষা রায় (আনন্দবাজার) ভবেশচন্দ্র নন্দী ஆ আবদুল ওহাব (ষ্টেটসম্যান) আতাউর রহমান, এডভোকেট (প্রচার সম্পাদক) এস, কে, চ্যাটাজিং (অমৃত বাজার) এন, সি, সাহা মুঃ নুরুল হুদা পি, কে, ব্যানার্জি কফিল উদ্দিন চৌধুরী জাফর করিম রাধা বল্লভ সাহা (খানবাহাদুর) আরফান খান কোষাধ্যক্ষ (রায়বাহাদুর) আর, পি, সাহা কোষাধ্যক্ষ ष्ट्रक
*পূর্ব-বঙ্গ শান্তি ও পূর্ণবসতি কমিটির পক্ষে।